পর্দা বা হিজাব ফরজ হওয়ার ১৮ দলিল

পর্দা মুমিনদের জন্য ফরজ। বর্তমানে নারীদের মুখের পর্দা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে আসুন দেখি এর স্বপক্ষে দলিলগুলো কি-

প্রথম দলিল

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।”

সুরা আহযাব-৫৯

রাসূল (সা)-এর পূন্যাত্মা স্ত্রীগণসহ অন্যান্য মুসলিম নারীগণও এ হুকুমের আওতাভূক্ত। এই আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মুসলিম নারীদের জন্য চেহারার পর্দা করা জরুরী। আরো আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য পরপুরুষ থেকে আড়াল রাখে। আলোচ্য আয়াত থেকে মহিলা সাহাবীগণও এ অর্থ গ্রহণ করেছিলেন যে, জালবাব তথা বড় চাদর দ্বারা পুরো শরীর ঢাকার পাশাপাশি চেহারাও আবৃত রাখতে হবে।

● ইমাম আবু দাউদ রহ. হযরত উম্মে সালমা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর আনসারী নারীরা কালো চাদর পরিধান করে ঘর থেকে বের হতো। (সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪১০১)।

দ্বিতীয় দলিল

● ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি আনসারী নারীদের থেকে উত্তম আর কোনো নারী দেখিনি। কিতাবুল্লাহর সত্যায়ন ও তার উপর ঈমান আনয়নের ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে অগ্রগামীও কাউকে দেখিনি। সূরা নূরের পর্দা সংক্রান্ত আয়াত তথা – “তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।” এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো। পুরুষেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা শুনে ঘরে গিয়ে নিজেদের স্ত্রী-কন্যা বোনদেরকে শোনালো। নারীদের প্রত্যেকেই তখন আল্লাহর সেই বিধান পালনে সচেষ্ট হলো। তারা বড় চাদরে তাদের মাথা আবৃত করল কতেক নারী তাদের তাহমদকে ছিড়ে উড়না বানিয়ে নিলো। সকালে যখন নারীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসল তখন তাদের মাথা চাদরে ঢাকা ছিল। আর তারা এতটাই নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে।” (তাফসীরে ইবনে আবি হাতিম : ৮/২৫৭৫ এবং সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪১০০)।

তৃতীয় দলিল

● উম্মে আতিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নারীদেরকেও ঈদের নামাযে আসার আদেশ দিলেন, তখন তাঁর কাছে আরজ করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোনো নারীর কাছে বড় চাদর না থাকে, তাহলে?’ তিনি বললেন, – ‘সে যেন তার বোনের কিছু অংশ জড়িয়ে নেয়।'” (বুখারী শরীফ-৩৫১)।

চতুর্থ দলিল

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে তা আল্লাহ অবহিত আছেন।”

সূরা নূর, আয়াতঃ ৩০

নারীরা তাদের চেহারা পর্দামুক্ত রাখার অর্থই হলো তারা যেন পুরুষদেরকে তাদের দেখার প্রতি আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আর একজন বিবেকবান মানুষের পক্ষে এটা বুঝতে কোনো কাঠখড় পোড়ানোর প্রয়োজন হয় না।

পরবর্তী আয়াতেই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে।”

সূরা নূর, আয়াত ৩১

অর্থাৎ, নারীদের জন্য তাদের রূপ-সৌন্দর্য ঢেকে রাখা উচিত, কেননা তা পুরুষদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সাহায্য করবে।

পঞ্চম দলিল

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে,

“তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোর পদচারণা না করে।”

সূরা নূর, আয়াত: ৩১

অর্থাৎ, নারীদের জন্য পায়েল বা নুপুর পরে ঘর থেকে বের হওয়া হারাম। কারণ, পায়েল, নুপুরের রিনিঝিনি শব্দ পুরুষের মনে ফেতনার উদ্রেক ঘটাতে পারে। নারীদের জন্য যেহেতু এতটুকুর বৈধতাও নেই তাহলে চেহারা খোলা রাখা জায়েয হবে কিভাবে?

আচ্ছা, পায়েলের রিনিঝিনি শব্দে যদি পুরুষের মনে ফেতনার উদ্রেক হতে পারে তবে কি নারীর মোহনীয় রূপ-মাধুরী তাকে উম্মাদ করে তুলবে না?

ষষ্ঠ দলিল

অতিশয় বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে পর্দা না করার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা রোখসত রেখেছেন। অতিশয় বৃদ্ধা নারীদের যৌবন ও কামপ্রবৃত্তির অবিদ্যমানতা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তারা যদি পর্দা অবলম্বন করে তবে সেটা তাদের জন্য খুবই উত্তম।

আল্লাহ ইরশাদ করেছেন,

“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে। তবে তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’।”

সূরা নূর, আয়াত: ৬০

সপ্তম দলিল

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

“তোমরা তার পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ।”

সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৩

চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে এ আয়াতটি সুস্পষ্ট দলিল। বর্ণিত এ বিধানটিতে বিশেষভাবে নবী-পত্নীগণের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্যে ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য ।

অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূণ্যাত্মা স্ত্রীগণের নিকট (এবং তোমাদের স্ত্রী ব্যতিত অন্য কোনো নারীর নিকট) কোনো কিছু নেয়ার প্রয়োজন হলে সামনে এসে নেবে না; বরং পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা এবং শয়তানের প্ররোচণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে।

অষ্টম দলিল

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ! আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পুত-পবিত্র রাখতে।”

সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৩

আলোচ্য আয়াতে মুসলিম নারীদেরকে ইসলামপূর্ব অজ্ঞতার যুগের নারীদের ন্যায় দেহ সৌষ্ঠব ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রাচীনকালের আরব-পুরুষেরা অতিশয় আত্মমর্যাদাশীল ছিল। তাদের নারীদের দিকে কেউ লালসার চোখে তাকালে কিংবা তাদেরকে নিয়ে কোনোরূপ উপহাস করলে গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বেঁধে যেতো। তুমি কি ভাবছ? জাহেলী যুগের নারীরা অধুনা বিশ্বের নারীদের মতো বাহু, কাঁধ, বক্ষ, পিঠ, উরু উন্মুক্ত করে চলতো? না। তারা কেবল চেহারা খোলা রাখত কিংবা বড়জোর তাদের চুল নজরে পড়তো। তদুপরি অজ্ঞতার যুগের অধিকাংশ নারীরাই চেহারা পর্দাবৃত রাখত সেকালের কাব্য সাহিত্য থেকে এমনটিই জানা যায়। তদুপরি আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

‘অজ্ঞতার যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।’

সূরা আহযাব

নবম দলিল

হজ ও ওমরা আদায়কালে নারীদেরকে তাদের চেহারা খোলা রাখতে হয় একথা সবারই জানা। এ ব্যাপারে মহিলা সাহাবীদের আমল এমন ছিল যে, হজ ও ওমরার সময় তারা যখন তাবুর ভেতরে থাকতেন তখন চেহারা খোলা রাখতেন। কিন্তু যখনই কোনো অচেনা মুসাফির তাদের পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা মুখ ঢেকে ফেলতেন।

● আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “তিনি বলেন, অনেক কাফেলা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। তখন আমরা রাসূলুল্লাহ্‌র (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে ইহরাম অবস্হায় ছিলাম। তারা আমাদের সামনা-সামনি আসলে আমাদের নারীরা নিজ মুখাবরণ মাথা থেকে নামিয়ে নিজ মূখমন্ডল ঢেকে ফেলতেন। অতঃপর তারা অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখ খুলতাম।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-১৮৩৩)।

এহরাম অবস্থায় কৃত তাদের এই আমল থেকে পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখার আবশ্যিকতার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

দশম দলিল

● হযরত আসমা বিনতে আবু বকর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা পরপুরুষের সামনে নিজেদের চেহারা ঢেকে রাখতাম। (আল মুসতাদরিক লিল হাকিম, ১/৪৫৪)

একাদশ দলিল

● ইফকের ঘটনা: ষষ্ঠ হিজরীতে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী মুস্তালিক নামান্তরে মুরায়সী যুদ্ধে গমন করেন, তখন হযরত আয়েশা রাযি. তাঁর সাথে ছিলেন। ইতিপূর্বে পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়েছিল। তাই হযরত আয়েশা রাযি. এর উটের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনের ব্যবস্থা করা হয়। হযরত আয়েশা রাযি. প্রথমে উটের পিঠে পর্দাবিশিষ্ট আসনে সওয়ার হতেন। এরপর লোকেরা আসনটিকে উটের পিঠে বসিয়ে দিতো। এটাই ছিলো নিত্যকার অভ্যাস। যুদ্ধ সমাপ্তির পর মদীনায় ফেরার পথে একটি ঘটনা ঘটল। এক মনযিলে কাফেলা অবস্থান করার পর শেষ রাত্রে প্রস্থানের কিছু পূর্বে ঘোষণা করা হলো যে, কাফেলা কিছুক্ষণের মধ্যে এখান থেকে রওয়ানা হয়ে যাবে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ প্রয়োজন সেরে প্রস্তুত হয়। হযরত আয়েশা রাযি. এর টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল; তিনি জঙ্গলের দিকে চলে গেলেন। সেখানে ঘটনাক্রমে তাঁর গলার হার ছিঁড়ে হারিয়ে গেলো। তিনি সেখানে তার হার খুঁজতে লাগলেন। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো।

স্বস্থানে ফিরে এসে দেখলেন যে, কাফেলা চলে গেছে। রওয়ানা হওয়ার সময় হযরত আয়েশা রাযি. এর পর্দাবিশিষ্ট আসনটিকে যথারীতি উটের পিঠে সওয়ার করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বাহকেরা ভেবেছে যে, তিনি ভেতরেই আছেন। উঠানোর সময়ও সন্দেহ হলো না। কারণ, তিনি তখন অল্পবয়স্কা ক্ষীণাঙ্গিণী ছিলেন। ফলে আসনটি যে শূণ্য- এরূপ ধারণাও কারও মনে উদয় হলো না। হযরত আয়েশা রাযি. ফিরে এসে যখন কাফেলাকে পেলেন না, তখন তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা ও স্থিরচিত্ততার পরিচয় দিলেন এবং কাফেলার পশ্চাতে দৌড়াদৌড়ি করা কিংবা এদিক-সেদিক খোঁজ করার পরিবর্তে গায়ে চাদর জড়িয়ে স্বস্থানে বসে রইলেন। সময় তখন শেষরাত্রি। তাই কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন অপরদিকে সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তালকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন যে, তিনি কাফেলার পশ্চাতে সফর করবেন এবং কাফেলা রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর কোন কিছু পড়ে থাকলে তা কুড়িয়ে নেবেন। তিনি ভোর বেলায় এখানে এসে পৌঁছলেন। প্রভাতের আলো তখন পুরোপুরি উজ্জ্বল হয়নি। তিনি শুধু একজন মানুষকে ঘুমন্ত দেখতে পেলেন। কাছে এসে হযরত আয়েশা রাযি. কে চিনে ফেললেন। কারণ, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি তাকে দেখেছিলেন। চেনার পর নেহায়েত বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলেন ‘ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। বাক্যটি হযরত আয়েশা রাযি.-এর কানে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি জেগে গেলেন এবং তৎক্ষণাৎ চাদর দিয়ে চেহারা ঢেকে ফেললেন। হযরত সাফওয়ান নিজের উট কাছে এনে বসিয়ে দিলেন। হযরত আয়েশা রাযি. তাতে সওয়ার হলেন এবং সফওয়ান উটের নাকের রশি ধরে কাফেলার তালাশে দ্রুতপদে হেঁটে চলতে লাগলেন। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৪১৪১)

দ্বাদশ দলিল

● হযরত আয়েশা রাযি. এরই বর্ণনা, তিনি বলেন- মুসলিম নারীরা নিজেদেরকে বড় চাদরে ঢেকে ফজরের নামাযে উপস্থিত হতো। নামায পড়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আঁধারের কারণে কেউ তাদেরকে চিনতে পারত না। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৫৭৮ এবং মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-৬৪৫)।

ত্রয়োদশ দলিল

● রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে কেউ অহংকার বশত তার কাপড় কে মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলবে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তার দিকে তাকবেন না। (বুখারী শরিফ, হাদিস নং- ৫৭৮৪ এবং মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-২০৮৫)।

অর্থাৎ, টাখনুর নিচে বস্ত্র পরিধান করা জায়েয নেই। উম্মুল মুমেনিন হযরত সালমা রাযি. এই হাদিস শোনার পর ভাবলেন যে, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা বোধহয় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই হারাম। তদানিন্তন নারীরা পা ঢাকার জন্য নিজেদের বস্ত্রকে টাখনুর নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতো। দারিদ্রের কারণে অধিকাংশ নারীরাই মোজা পরিধাণের সামর্থ্য রাখত না।

● তাই হযরত উম্মে সালমা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে নারীরা তাদের আঁচলকে কি করবে?
ইরশাদ করলেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে দেবে। উম্মে সালমা রাযি. বললেন, এভাবে তো তাদের পা দেখা যাবে। তিনি বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে দেবে এর চেয়ে বেশি নয়। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং ৫৩৩৮)।

সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু নারীদের পায়ের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন, তাহলে চেহারা প্রদর্শনের বৈধতার কথা কল্পনা করা যায় কিভাবে?

চতুর্দশ দলিল

● হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, “ইহরাম অবস্থায় নারীগণ নেকাব বা উড়না পরিধান করবে না।” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-১৮৩৮)

এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সে যুগের নারীরা সাধারণত নেকাব বা উড়না পরিধান করতো। এজন্যে ইহরাম অবস্থায় তা বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

পঞ্চদশ দলিল

● রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “নারীরা নারীদের সাথে (এক কাপড়ে) শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে  শোবে  না। কারণ, সে স্বামীর কাছে গিয়ে তার গঠন-আকৃতির বিবরণ এভাবে দেবে যে, যেন সে তাকে দেখছে।” (বুখারী শরিফ, হাদিস নং-৫২৪০)।

এই হাদিস প্রমাণ বহন করে যে, নবী-যুগের নারীরা চেহারা ঢেকে ঘর থেকে বের হতো। সে কারণেই পুরুষের জন্য অন্য নারীর চেহারার বিবরণ জানতে তার স্ত্রীর সাহায্য নিতে হতো।

ষষ্ঠদশ দলিল

● হযরত মুগিরা বিন শু’বা রাযি. বর্ণনা করেন, “আমি এক নারীকে বিবাহের পয়গাম পাঠালাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে সম্পর্কে বললাম । তিনি জিজ্ঞেস করলেন
তুমি কি তাকে দেখেছ?
আমি বললাম, না।
তিনি বললেন, তাকে দেখে আসো। তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।
আমি দেখতে গেলাম। তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন। আর মেয়েটি ছিল পর্দার অন্তরালে।
আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাকে দেখার আদেশ দিয়েছেন।

তারা দুজন নিশ্চুপ রইলেন। পর্দার আড়াল থেকে মেয়েটি বলল- আমি আপনাকে কসম দিচ্ছি। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে আদেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই দেখবেন। আর যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন না।

অতঃপর আমি তাকে দেখলাম। তাকে বিবাহ করলাম। আমার মনে এই মেয়েটির জন্য যতটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল, অন্য কোনো নারীর জন্য তা ছিল না। (কানযুল উম্মালঃ ৪৫৬১৯, সুনানে সাঈদ ইবনে মনসুরঃ ১/১৭১)।

সপ্তদশ দলিল

● হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাযি. বলেন, “একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য শেষ করে ফিরছিলাম। মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের পাশ দিয়ে যাবার সময় এক নারীকে দেখতে পেলাম। আমরা ভাবতে পারিনি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ফাতেমা! কোথা থেকে এসেছ? হযরত ফাতেমা রাযি. বললেন, আমি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এসেছি। আমি মৃতের জন্য দোআ ও তা’জিয়া (শোক) প্রকাশ করেছি। (আল-মুসতাদরাক লিল হাকিম, ১/৩৭৪)

সাহাবায়ে কেরাম ভেবেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমাকে চিনতে পারেননি।

কারণ, তিনি পরিপূর্ণ পর্দাবৃতা ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চালচলন দেখে নিজ মেয়েকে চিনে ফেলেছিলেন। হযরত ফাতেমা রাযি. যদি চেহারা খোলা রাখতেন, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চেনা না চেনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম দ্বিধাগ্রস্থ হতেন না।

অষ্টাদশ দলিল

● ইমাম মুসলিম রহ. তার কিতাব সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
“তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত ছিলাম । ইত্যবসরে এক ব্যক্তি আসল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানাল যে, সে আনসারের এক মেয়েকে বিবাহ করতে চায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ?
সে বলল, না।
তিনি বললেন, যাও তাকে দেখে নাও। কারণ, আনসারদের চোখে কিছু (ক্ষুদ্রতা) থাকে।” (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১৪২৪)।

এটি যৌক্তিক দলিল। একজন নিরপেক্ষ বিবেকবান মানুষ মাত্রই একথা স্বীকার করবে যে, শরিয়ত পরপুরুষের সামনে কোনো নারীকে চেহারা খোলার অনুমতি দিতে পারে না। কারণ, চেহারাই সৌন্দর্য্য শোভার আসল কেন্দ্র এবং রূপ-মাধুরীর প্রকাশস্থল। বিশেষকরে নারী সুন্দরী হলে এবং তার আকর্ষণীয় চেহারার দিকে পুরুষের চোখ পড়লে পুরুষের আর্কষন জেগে ওঠা এবং ফেতনা-ফাসাদের প্রাদুর্ভাব ঘটা অবশ্যম্ভাবী ৷

লেখক -ডা. মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান আরিফী
বই – ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *