দিন দিন নাস্তিকদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, বই ও পোস্ট যেমন বাড়ছে তেমনি নাস্তিকের সংখ্যা কমছে না বরং বাড়ছে।
আসলে নাস্তিক বলতে কি বুঝায় আর ইসলামে তাদের বিধান কি অনেকের কাছে সুস্পষ্ট না!!!
নাস্তিক্যবাদ (অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) (ইংরেজি: Atheism) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়। মূলত আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়।
নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাসকে খন্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি বিশ্বাস কে ভ্রান্ত বলে তারা স্বীকার করে। এটা হল নাস্তিকদের সম্পর্কে আধুনিক ধারনা বা নাস্তিকতার সংজ্ঞা যার অর্থ তারা স্রষ্টা বা রবে বিশ্বাস করে না।
আসুন এটা কতটুকু যৌক্তিক দেখি
নাস্তিকতার দাবিদারকে যদি জিজ্ঞাস করেন- বিশ্বজগত, সৌরজগত সৃষ্টি, জন্ম-মৃত্যু কে দেন বা কিভাবে হয় সে বলবে তা প্রকৃতির নিয়মে হয়। তার মানে তারা খালেক বা স্রষ্টা, আল মুমিতু জন্ম-মৃত্যুদাতা মানে প্রকৃতিকে অথচ মানবজাতির স্রষ্টা বা খালেক একমাত্র আল্লাহ।
নাস্তিকদের যদি প্রশ্ন করেন – তার রিযিক কে দেয় বা কিভাবে আসে সে বলবে তার দুহাতের কামাই ও প্রকৃতির নিয়মে তার অর্থ সে রিযিকদাতা বা আর রাজ্জাক মানছে নিজ হাতকে অথচ আর রাজ্জাক রিযিকদাতা হল স্বয়ং আল্লাহ।
এভাবে সে কল্যাণদাতা, সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মালিক হওয়াকে নিজ যোগ্যতা হিসেবে মানে অর্থ তারা নিজকে কল্যানদাতা মানে। অথচ আল-মুগনিয়্যু (ঐশ্বর্যদাতা), আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যশালী), আল-বাররু (কল্যাণদাতা) কেবল আল্লাহই। নাস্তিকতরা বিধানদাতা হিসেবে নিজের জ্ঞান, বিবেক ও মানবরচিত কিতাবই অনুসরণ করে। কোন নাস্তিকই এটা বলবে না- আমরা রাষ্ট্রের আইন, নিয়ম মানি না তাহলে রাষ্ট্র ক্ষমতাসীনরাই তাদের উচ্ছেদ করবে। তার মানে তারা আল-হাকীমু (মহাবিজ্ঞ বিধানদাতা) মালিকুল মুলকি (সার্বভৌমত্বের মালিক), রব (প্রতিপালক) হিসেবে নিজেদের চিন্তাধারা বা ওরা যাদের আর্দশ মেনে নেয় তাদের মেনে চলছে।
এভাবে বিশ্লেষণ করলে নাস্তিকরা রবকে অস্বীকার করে না বরং একমাত্র রব আল্লাহকে অস্বীকার করে, নিজেদের চিন্তাভাবনাকে রবে পরিনত করেছে বা ওরা বহু রবের পূজারী।
আসলে নাস্তিক নামধারী অধিকাংশরা হল প্রবৃত্তি ও দুনিয়ার পূজারী। ওদের মন যেটাকে প্রধান্য দেয় সেটাকে মেনে চলে। প্রবৃত্তি পূজা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পথ হ’তে বিচ্যুত করে বাঁকা পথে পরিচালিত করে। এর ফলেই বিভিন্ন ভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট দলের উদ্ভব হয়েছে। তাই এটি ভ্রষ্টতা ও ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এটি তার অনুসারীকে বিপজ্জনক অবস্থার দিকে নিয়ে যায়। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রেরিত ও রাসূল (ছাঃ)-এর শেখানো ইবাদত, আনুগত্য, আদেশ-নিষেধের বিরোধিতা করে, সে কেবল প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। সে কখনো আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের আনুসারী হ’তে পারে না। কুরআনুল কারীমের অনেক জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা প্রবৃত্তির অনুসরণ করাকে তিরস্কার করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلًا
‘তুমি কি তাকে দেখ না, যে তার প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি তার যিম্মাদার হবে?’ (ফুরক্বান ২৫/৪৩)।
ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ‘যখনই কোন বিষয় তার নিকট ভাল মনে হয় এবং তার প্রবৃত্তিতে ভাল লাগে, সে তখন সেটিকে তার দ্বীন ও মাযহাব হিসাবে মেনে নেয়’। শরী‘আত বিরোধী প্রবৃত্তির অনুসারীকে প্রবৃত্তির পূজারী বলা হয়েছে। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘শরী‘আত বিরোধী প্রবৃত্তিও এক প্রকার মূর্তি, যার পূজা করা হয়’। তিনি এর প্রমাণ স্বরূপ এই আয়াত তেলাওয়াত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً فَمَنْ يَهْدِيهِ مِنْ بَعْدِ اللهِ أَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
‘তুমি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছ, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে। আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তা-ভাবনা কর না’ (জাছিয়া ৪৫/২৩)।
মহান আল্লাহ-আরোও বলেন,
ثُمَّ جَعَلْنَاكَ عَلَى شَرِيْعَةٍ مِّنَ الْأَمْرِ فَاتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ
‘এরপর আমরা তোমাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরী‘আতের উপর। অতএব তুমি এর অনুসরণ কর এবং অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবে না’ (জাছিয়া ৪৫/১৮)। খেয়াল-খুশীর অনুসারীরা পথভ্রষ্ট।
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ لاَ أَتَّبِعُ أَهْوَاءَكُمْ قَدْ ضَلَلْتُ إِذًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُهْتَدِيْنَ
‘তুমি বলে দাও যে, আমি তোমাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করব না। তাতে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে যাব এবং সুপথ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকবো না’ (আন‘আম ৬/৫৬)।
অন্যত্র তিনি আরোও বলেন,
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِنَ اللهِ إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِيْنَ
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর হেদায়াত অগ্রাহ্য করে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে আছে? নিশ্চয়ই আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (ক্বাছাছ ২৮/৫০)।
তাছাড়াও প্রবৃত্তিপূজারীরা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও বিপথগামী করে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ كَثِيْرًا لَيُضِلُّوْنَ بِأَهْوَائِهِمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِيْنَ
‘নিশ্চয়ই বহু লোক অজ্ঞতাবশে নিজেদের প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয়ে লোকদের পথভ্রষ্ট করে। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক সীমালংঘনকারীদের ভালভাবেই জানেন’ (আন‘আম ৬/১১৯)।
প্রবৃত্তির অনুসরণই সব অনিষ্টের মূল এবং যাবতীয় বিপদ-আপদের ভিত্তি। তাই এটি অজ্ঞতা অপেক্ষা অধিক বিপজ্জনক। কেননা অজ্ঞতার চিকিৎসা সহজেই করা যায় এবং তা অজ্ঞ ব্যক্তির সাধ্যের ভিতরে পড়ে। যেমন জ্ঞান অন্বেষণ এবং দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সে সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। কিন্তু প্রবৃত্তি এমন একটি বিষয়, চাই তা জ্ঞান অন্বেষণরত অবস্থায় হোক, কিংবা জ্ঞান লাভের পরে হোক সর্বাবস্থায় এটি ভয়ানক ও বিপজ্জনক, যা দূর করতে প্রয়োজন পড়ে কঠোর আত্মসংগ্রাম ও যথাযথ প্রতিষেধকের। এই প্রবৃত্তির বালার কারণেই মানুষ কামনা-বাসনা ও সন্দেহ-সংশয়ের মাঝে নিপতিত হয়।
হা শুধু অল্পকিছু লোক এমন পাবেন যারা কুফরী পরিবেশে বড় হয়েছে কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ইসলাম নিয়ে বিরূপ ধারণা পোষন করে সঠিক উত্তর জবাব পেলে হয়তো মুসলিম হবে। কিন্তু অধিকাংশ নাস্তিক দাবিদাররা বড় হয় মুসলিম পরিবেশে এরপর ইসলাম ছেড়ে দেয় বা ইসলামের সমালোচনা করে। ইসলামের পরিভাষায় তারা নাস্তিক নয় মুরতাদ। ওরা তা করে দুনিয়ার সম্পদ, উন্নত দেশের ভিসা, উন্নত জীবনের লোভে। তাদের দুনিয়ার চাকচাক্যি ধোকা মাত্র। ওদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্নিত, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
“ধ্বংস হোক দিনারের গোলাম, দিরহামের পূজারী ও উত্তম পোশাকের পূজারী [অর্থাৎ দুনিয়া প্রতি আসক্ত ব্যক্তি] ! যদি তাকে তা দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।” (সহীহ আল-বুখারী, হাদীস ২৮৮৭)।
দিনার, দিরহাম, পোশাককে কেউ সিজদাহ বা ইবাদাত করে না বরং তারা এসবের লোভে ইসলামকে ছেড়ে কুফরের পথে চলে তাই তারা দিনার, দিরহামের পূজারী। আল্লাহ বলেন-
“যারা শুধু দুনিয়ার জীবন এবং এর চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদের সব কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে থাকি এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয়না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া অন্য কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ হয়েছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।” (সূরা হুদঃ ১৫-১)।
যদি আবুবকর (রাঃ) সময় শুধুমাত্র যাকাত অস্বীকার করার জন্য মুরতাদ বলা হয় ও জেহাদ ঘোষণা করা হয় এবং এর ফলে অনেকে পরাজিত হয় ও অনেকে তওবা করে ফিরে এসে। তাহলে যারা ইসলামে বড় হয়ে দুনিয়ার লোভে ইসলাম ছাড়ছে তাদের মুরতাদ না বলে নাস্তিক বলে আ্যাখা দিয়ে তাদের অপরাধকে ছোট করে দেখা হচ্ছে।
যুগ যুগ ধরে এসব ফেতনাবাজদের প্রশ্ন একই যা বহুবছর ধরে আলেমরা উত্তর দিয়ে গেছেন। আয়েশা (রাঃ) ও রসুলুল্লাহর (সা) জীবন নিয়ে সমালোচনা ও কিছু যুক্তিবাদী কথা তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আসলে শয়তান ওদের নিকট ওহী নিয়ে আসে। ইসলাম শুধু যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয় বরং বিশ্বাসের উপর। মানুষ তারই উত্তর দিতে পারে যতটুকু তাকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
“যার যবেহকালে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তা তোমরা ভক্ষণ করো না। কেননা, তা পাপ। আর নিশ্চয় শয়তান তার বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়। যদি তোমরা তাদের কথামত চল, তাহলে অবশ্যই তোমরা অংশীবাদী হয়ে যাবে।” (সুরা আল আনআম)।
শয়তান স্বীয় সহচরদের মাধ্যমে এ কথা রটায় যে, মুসলিমরা আল্লাহর যবেহকৃত (অর্থাৎ মৃত) পশুকে তো হারাম মনে করে, আর তাদের নিজ হাতে যবেহকৃত পশুকে হালাল মনে করে, অথচ তারা দাবী করে যে, আমরা আল্লাহকে মান্য করে চলি। মহান আল্লাহ বলেন, শয়তান এবং তার সহচরদের কুমন্ত্রণার পিছনে পড়ো না। যে পশু মৃত, অর্থাৎ, যবেহ ছাড়াই মারা গেছে, তাতে যেহেতু আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, সেহেতু তা খাওয়া হালাল নয়। অনেক সাহাবীর কাছে কথাটা যৌক্তিক লেগেছিল আল্লাহ আয়াত নাযিল করে তাদের সর্তক করে দেন।
বর্তমানে আমরা জানি – আল্লাহর নামে জবাই করলে বিষাক্ত রক্ত বের হয়ে যায় কিন্তু অন্যভাবে মারা গেলে অপবিত্র, বিষাক্ত রক্ত থেকে যায় যা ক্ষতিকর। প্রাথমিক অবস্থায় সাহাবীরা তা জানতেন না। তাই শুধু যুক্তি, তর্ক দ্বারা নাস্তিক নামধারীদের ফেতনা শেষ হবে না বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলে অধিকাংশ নাস্তিকই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
আচ্ছা নাস্তিকরা অন্য কোন ধর্মের সমালোচনা করে না কেন? বরং মূর্তিপূজাকে দেশীয় ঐতিহ্য বলে প্রচার করে। তারা ঠিকই ঈদভাতা নেয়, তাদের পরিজন মরলে কেন কবর ও দাফন করা হয়? কেন অনেক নাস্তিক কাজী দিয়ে বিয়ে পড়ায় তারা তো ইসলামকেই অস্বীকার করে!? আসলে তারা তা করে জেনেশুনে দুনিয়ার লোভে। বরং ওরা কুরআনের এমন অনেক আয়াত জানে সাধারণ মুসলিমরাও জানে না।