রসুল হওয়ার আগেও মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি, সুদর্শন, মিষ্টভাষী, আমানতদার, দক্ষ ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয়। কিন্তু ইসলাম প্রচারের পর হতে একে একে তার উপর আঘাত আসতে থাকে। দারিদ্র্যতা, উপহাস, শারীরিক নির্যাতন, অবরুদ্ধতা সবই সহ্য করতে হয় তবুও তিনি সাময়িক সময়ের জন্য দ্বীন প্রতিষ্ঠায় বিরতি দেন নি। তার প্রিয় চাচা আবু তালেবের কুফরী অবস্থায় মৃত্যু, এরকিছুদিন পর প্রিয় স্ত্রী খাদেজা (রাঃ) এর জান্নাত লাভ, তার চাচা, দুধভাই ও বন্ধু হামজা (রাঃ) এর মৃত্যুর কষ্ট সবকিছু সহ্য করে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করেন। ভাবতে অবাক লাগে, প্রায় প্রতিটি জেহাদে তার কোন না কোন প্রিয় সাথী শহীদ হতেন অথচ রসুল (সাঃ) ছিলেন কোমল, উম্মতদরদী। তাই মক্কাবিজয়ের পর হামজা (রাঃ) এর হত্যাকারী ওয়াহশীর (ইসলাম গ্রহন করে, ক্ষমাপ্রাপ্ত হন) মুখে চাচার হত্যার বর্ণনা শুনে দুচোখে পানি চলে আসে ভীষন কষ্ট পান। ওয়াহশীকে মানা করেন অমৃত্যু তার সম্মুখে যাতে না আসে। কারণ তাকে দেখলে চাচার হত্যার স্মরণ হবে। একদিন রসুল (সাঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন হাসান ও হুসায়ন (রা) তার দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি মিম্বর থেকে নেমে তাদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে কোলে নিয়ে মিম্বরে এসে বসলেন।তারপর তিনি বললেনঃ মহান আল্লাহ যথার্থ বলেছেন- “নিশ্চয় তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান সন্তানি পরীক্ষা বিশেষ।” (সুরা তাগাবুন, আয়াতঃ ১৫)। আমি দেখলাম ওরা, গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে আর কাপড়ে পেচিয়ে পড়ে যাচ্ছে। তা দেখে সইতে পারি নি। তাদের নিকট নেমে গেলাম। এরপর রসুলুল্লাহ’ (সাঃ) বললেন- “তোমরা দুজন আল্লাহর রহমত, তোমরা সম্মানিত ও প্রীতিভাজন হবে।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮ ম খন্ড, ৭৪)। তিনি জীবদ্দশায় জানতেন আলী (রাঃ) ও তার প্রিয় দুই নাতিকে শহীদ করা হবে। রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “ফাতেমা (রা) আমার কলিজার টুকরা, যে ফাতেমাকে (রা) কষ্ট দিল সে আমাকে কষ্ট দিল।” (বুখারী)। যখনই প্রিয় মেয়ে, নাতি, সাহাবীদের ছেড়ে আল্লাহর কাছে যাওয়ার ইখতিয়ার দেওয়া হলো তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎকে বেছে নিলেন। প্রিয় কন্যাকে যখন জানালেন তাকে ছেড়ে যেতে হবে তখন ফাতেমা (রাঃ) কাঁদছিলেন, যখন শুনলেন সবার আগে তার সাথে রসুলের (সাঃ) সাক্ষাৎ হবে তখন খুশি হয়ে গেলেন কারণ তারা জানতো দুনিয়ার বিচ্ছেদ, সুখ, সম্পদ, মায়া, দুঃখ-কষ্ট সবই সাময়িক। প্রকৃত সফলতা হলো আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ আর প্রিয় আত্মীয়দের সাথে চিরস্থায়ী জান্নাতে থাকা। একবার ভাবুন, আমরা সামান্য দুঃখ-কষ্ট, হতাশায় শোক করতে গিয়ে কতটা সময় দ্বীনি দায়িত্ব হতে দূরে থাকি। অথচ রসুল (সাঃ) সবচেয়ে কোমল, প্রেমময়ী ব্যক্তি ছিলেন। বিচ্ছেদ, দুঃখ-কষ্টে কখনো তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় সামান্যতম বিলম্ব ঘটাতে পারেনি। রসুলের (সাঃ) জীবনী থেকে আমাাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা যাই আসুক দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং আল্লাহ যেন আমাদের চিরস্থায়ী জান্নাতে ঐক্যবদ্ধ করেন সে দোয়া করি।