অনেক সংস্হা, সংগঠন মুসলিমদের অসহায় অবস্হায় সাহায্যের জন্য অনুদান, লোন দিয়ে থাকে আর ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে তারা নিয়ে থাকে। আসলে যারা রসুলের (সাঃ) রিসালাতকে অস্বীকার করে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয় তারা কি জন্য সাহায্যের অজুহাতে বিভিন্ন অনুদান ও লোন দেয়!! একটু জানা প্রয়োজন।
বায়হাকী তাঁর নিজ সনদে আবূ দাঊদ সিজিস্তানী আবদুল্লাহ্ আল হুরায়নীর বরাতে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মুয়াজিন হযরত বিলালের সাথে হালব শহরে সাক্ষাৎ করলাম। তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে বিলাল! রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ব্যয় (অর্থাৎ দান-সদকা) সম্পর্কে আমাকে বলুন।
তখন তিনি বললেন, তাঁর নবুওয়াত লাভের পর থেকে ওফাত পর্যন্ত তাঁর (প্রায়) সব ব্যয় সংক্রান্ত দায়িত্বই তাঁর পক্ষ থেকে আমি পালন করতাম।
তাঁর কাছে যখন কোন মুসলমান আসত আর তিনি তাকে অভাবী মনে করতেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন, তখন আমি বেরিয়ে পড়তাম এবং কারও থেকে ধার নিতাম, তারপর তা দিয়ে চাদর ও অন্য কিছু কিনে তাকে পরিধেয় ও আহার্য দান করতাম।
অবশেষে একদিন এক মুশরিক আমার পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল, হে বিলাল! আমার যথেষ্ট অর্থ সম্পদ রয়েছে।
সুতরাং তুমি আমি ছাড়া আর কারও থেকে ধার নিও না। তখন আমি তাই করলাম। এরপর কোন একদিন আমি উযূ করে আযান দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি এমন সময় ঐ মুশরিককে একদল ব্যবসায়ীর মাঝে দেখতে পেলাম।
তারপর সে যখন আমাকে দেখতে পেল তখন বলল, হে হাবশী (নিগ্রো)! বিলাল বলেন, আমি বললাম, বল! তখন সে আমার উপর আক্রমণ করল এবং কঠোর বা গুরতর অন্যায় কথা বলল। সে বলল, তুমি কি জান, একমাস পূর্ণ হতে আর ক’দিন বাকী ? আমি বললাম, সামান্য কয়েক দিন।
তখন সে বলল, তোমার মেয়াদ পূর্ণ হতে আর চার দিন বাকী। এরপর আমার পাওনার বিনিময়ে আমি তোমাকে পাকড়াও করব।
কেননা, তোমাকে যে ঋণ আমি দিয়েছি তা তোমার বা তোমার নবীর সম্মানার্থে নয়, আমি তো এইজন্য তোমাকে ঋণ দিয়েছি যে, তার মাধ্যমে তুমি আমার দাসে পরিণত হবে আর আমি তোমাকে মেষ চরাতে পাঠাব যেমনটি তুমি পূর্বে করতে। তিনি (বিলাল) বলেন, তখন আমার অন্য দশ জনের মত মনকেও দুশ্চিন্তায় পেয়ে বসল। তখন আমি (সেখান থেকে) প্রস্থান করলাম এবং নামাযের আযান দিলাম।
অবশেষে আমি যখন ইশার নামায পড়লাম এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাঁর সহধর্মিণীগণের কাছে ফিরে গেলেন তখন আমি তাঁর সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলাম এবং তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোন, ঐ মুশরিকটি যার কথা আমি আপনার কাছে উল্লেখ করেছিলাম, যে আমি তার নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করতাম, সে আজ আমাকে এমন এমন কথা বলেছে (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিয়েছে) অথচ আপনার বা আমার কারও কাছেই আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নেই। সুতরাং সে তো আমাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বে।
তখন তিনি আমাকে ইসলাম গ্রহণকারী এই মহল্লাবাসীদের কারও কারও কাছে যেতে বললেন, যাতে আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে এমন কিছু দান করেন যা দিয়ে আমি আমার দেনা পরিশোধ করবো। তখন আমি সেখান থেকে বের হয়ে আমার বাড়িতে আসলাম এবং আমার তরবারি, বল্লম, বর্শা ও পাদুকা আমার শিয়রের কাছে রাখলাম, আর আমার মুখমণ্ডল দিগন্তমুখী করে রাখলাম। ফলে যখন আমার ঘুম আসছিল তখনই আমি জেগে উঠছিলাম। এরপর যখন রাত ঘনিয়ে এসেছে অনুভব করলাম তখন ঘুমিয়ে পড়লাম। অবশেষে ভোরের প্রথম আলো প্রকাশ পেল। তখন আমি চলে যেতে উদ্যত হলাম।
হঠাৎ শুনতে পেলাম এক ব্যক্তি ডেকে বলছেঃ হে বিলাল! রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ডাকে সাড়া দাও! তখন আমি তাঁর কাছে আসার জন্য রওয়ানা হলাম। এমন সময় দেখতে পেলাম পিঠে বোঝাসহ চারটি উট। তখন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে এসে তাঁর অনুমতি প্রার্থনা করলাম। তখন নবী করীম (সা) আমাকে বললেন, (বিলাল) তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ্ তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছেন। তখন আমি আল্লাহর হামদ ও শোকর আদায় করলাম, আর তিনি বললেন, তুমি কি বসিয়ে রাখা উট চারটি অতিক্রম করে আসনি ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, অবশ্যই ।
তিনি বললেন, এই উটগুলি এবং এগুলোর পিঠের উপর যা কিছু রয়েছে তুমি সবকিছুর মালিক। তখন আমি দেখতে পেলাম এগুলোর পিঠে খাবার ও পোশাক সামগ্রী রয়েছে যা ফাদাকের শাসক তাঁর কাছে উপঢৌকন স্বরূপ পাঠিয়েছেন। এগুলি তুমি নিয়ে যাও এবং তোমার দেনা পরিশোধ করে দাও। বিলাল বলেন, আমি তাই করলাম, প্রথমে সেগুলোর পিঠের বোঝাগুলি নামিয়ে সেগুলোকে ঘাস খাওয়ালাম। তারপর ফজরের আযান দিলাম। যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা) নামায শেষ করলেন, তখন আমি (জান্নাতুল) বাকীর দিকে বের হয়ে গেলাম। তখন আমি কানে আঙ্গুল ভরে উচ্চস্বরে ঘোষণা করলাম, যাদের রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে কোন পাওনা আছে তারা যেন উপস্থিত হয়। এভাবে আমি পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করে করে দেনা শোধ করতে থাকলাম। এমন কি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে পৃথিবীর আর কারও কোন পাওনা অবশিষ্ট রইল না। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া -৫ খন্ড -পৃ-৮৮)
আজও বিভিন্ন বিশ্ব সংস্হা ও দেশ সাহায্যের অজুহাতে মুসলিমদের তাদের খেয়ালখুশির দাসে পরিণত করতে চায়!! যেন মুসলিমরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের লোন শোধ করতে না পারে যাতে তারা প্রভুত্ব অর্জন করতে পারে এবং ভূমিগুলোয় তাদের আধিপত্য বিরাজ করে।