মোটামুটি সবাই জানে দাজ্জাল নিজেকে নবী দাবি করবে এবং রব দাবি করবে। অথচ মুসলিমদের আকীদা হল- রসুল (সাঃ) এর পর কেউ নবী হবে না। তার মানে যারা রসুল (সাঃ) এর পর নবুওয়তে বিশ্বাসী তারা দাজ্জালের অনুসারী হবে।
দাজ্জাল কানা হবে অথচ আমাদের রব কানা নন। নমরুদ, ফেরাউনরা পূর্বে এবং পরে দাজ্জাল নিজেকে মিথ্যা রব দাবি করবে। তার ফেতনা হতে বাচার সহজ বিধান হল – প্রকৃত রব আল্লাহর সঠিক পরিচয় জানা।
কুরআনে বহুবার রব নাম এসেছে, সৃষ্টির সূচনায় রবের স্বীকারোক্তি ও মৃত্যুর পর কবরে প্রথম প্রশ্ন হল রব সম্পর্কিত অথচ আমরা রবের পরিচয় বা অর্থ জানি না। রবের পরিচয় জানতে হলে আসমাউল হুসনা জানতে হবে এবং সকল প্রকার মিথ্যা রব চেনার উপায় সেটা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পর তাঁর ডান হাত আদমের পৃষ্ঠদেশে রাখলেন, এর ফলে সব বনি আদম পিপিলীকার ন্যায় তার পৃষ্ঠদেশ থেকে বের হলো। হজরত আদম জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহ! এরা কারা? আল্লাহ বললেন, এরা হচ্ছে তোমার সন্তান-সন্তুতি। সেখানে আল্লাহ সবাইকে উদ্দেশ্য করে যে কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তা কুরআনে এসেছে এভাবে- ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭২)।
রব শব্দের অর্থ প্রতিপালক, বিধানদাতা, লালন-পালনকারীসহ অনেক অর্থ। এক কথায় রব হলেন তিনি, যিনি প্রত্যেককে তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বিবেচনা করে যখন যা প্রয়োজন তা দিয়ে ধীরে ধীরে লালন-পালন করে পূর্ণতায় পৌঁছান। অর্থাৎ যখন যার যা প্রয়োজন, চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তখন তাকে প্রয়োজন মতো যিনি ঐ চাহিদা মোতাবেক জিনিস দিতে পারেন তিনি হলেন রব।
আজ শুধু সুরা ফাতেহা হতে রবের পরিচয় তুলে ধরবো যা সকল প্রকার দাজ্জাল হতে সুরক্ষা দিবে।
সুরা ফাতেহা –
১. যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক।
২. যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়।
৩. যিনি বিচার দিবসের মালিক।
৪. আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
৫. তুমি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর।
৬. এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে তুমি পুরস্কৃত করেছ।
৭. তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে।
(আমীন! তুমি কবুল কর!)
১ম আয়াতে বলা হয়েছে সকল প্রশংসা বিশ্ব জাহানের রবের। এখন যারা দুনিয়ার সাময়িক সুখ-সমৃদ্ধির জন্য যে প্রশংসা আল্লাহ পাওয়ার যোগ্য অন্য কাউকে সেরূপ প্রশংসা করলো সে তাকে রব মানলো।
২য় আয়াতের মানে- আল্লাহ শুধু রিযিকদাতা বা প্রতিপালক নয় বরং তিনি পরমদয়ালু। মানুষের শত কুফরী, শিরক করা স্বত্বেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে রিযিক দিয়ে যান। আল্লাহকে রব হিসেবে অস্বীকার করার জন্য সাথে সাথে তার রিযিক কেড়ে নিয়ে শাস্তি দেন না বরং তওবা ও ফিরে আসার সময় দেন।
অথচ দাজ্জাল, নমরুদ, ফেরাউনসহ বর্তমান রব (বিধানদাতা, পালনকর্তা দাবিদাররা) তাদের সামান্য বিরোধিতা করলে রিযিক কেড়ে নেয়, সাথে সাথে কঠোর শাস্তির ব্যবস্হা করে।
৩য় আয়াতে বলা হয়েছে- আমাদের রব আল্লাহ একমাত্র বিচার দিবসের মালিক। প্রকৃত বিচার করবেন তিনি মৃত্যুর পর। বিচার শেষে- পুরস্কার ও শাস্তিসরূপ জান্নাত বা জাহান্নাম দিবেন। দুনিয়াতে কেউ জীবিত অবস্থায় জান্নাত বা জাহান্নাম পাবে না। অথচ রব মিথ্যুকগুলো যেহেতু বিচার দিবসের মালিক নন বরং শেষবিচারে তারা নিজেরা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে অন্যদের কি জান্নাত দিবে!! তাই তারা দুনিয়ায় জান্নাত ও জাহান্নামের মিথ্যা শাস্তির ভয় দেখায়। আর কোন ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তার রবকে দেখবে না এবং জান্নাত, জাহান্নামও ভোগ করবে না।
৪র্থ আয়াতের অর্থ- মুমিনরা শুধু রব আল্লাহর অনুগত্য করে, শুধুমাত্র তার বিধান মেনে চলে আর গায়েবী সাহায্যের জন্য শুধু তাকেই ডাকে। আজ যারা আল্লাহর মত করে অন্যদের বিধানে অনুগত্য করে চলছে আর অদৃশ্য সাহায্যের জন্য বিভিন্ন পীর, বুজুর্গের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে তারা দাজ্জালের অনুসারী হবে।
অথচ সৃষ্টির শুরু হতে মানুষ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো যতদিন নমরুদ, ফেরাউনরা জন্ম বা জনসমক্ষে উপস্থিত হয়ে রব দাবি করতে পারে নি। কিন্তু একমাত্র আল্লাহতাআলা আড়ালে থেকেও রব দাবি করার অধিকার রাখেন। তার কোন জন্ম নেই, না আছে মৃত্যু। আমাদের রব চিরঞ্জীব।
৫,৬,৭ নং আয়াতে আল্লাহর কাছে সরলপথ চাওয়া হয়েছে। যে পথ নবী রসুলদের পথ এবং ইহুদি, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম হতে আলাদা। অথচ দাজ্জালের অনুসারী হবে ইহুদিদের সবচেয়ে বেশি। মুমিন সবসময়ই নবী-রসূলদের অনুসারী থাকবে সুতরাং দাজ্জাল হতে সুরক্ষিত হবে।
কিন্তু আজ যারা মুশরিকদের নিয়মনীতি, তন্ত্রমন্ত্র আর্দশ, চেতনা, জাতীয়তাবাদ, উৎসব মেনে চলছে তওবা করে ফিরে না আসলে তারা নিশ্চিত দাজ্জালের অনুসারী হবে। যদি কেউ মন হতে হেদায়েত প্রার্থনা করে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে সরল পথে অটল রাখবে তাই বেশি বেশি দোয়া করুন।
মূল বক্তব্য হল- মিথ্যা রব হতে বাচতে প্রকৃত রব আল্লাহর সিফাত জানুন। কুরআনে সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ।
[…] দাজ্জাল পর্ব-২ […]