দাজ্জাল পর্ব-১

দাজ্জাল মহাবিশ্বের বড় ফেতনা অথচ কুরআনে তার নাম আসেনি। এর অন্যতম কারণ দাজ্জালের ফেতনা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবচেয়ে বড় ফেতনা যখন সে বের হবে। আর শয়তানের ফেতনা সর্বযুগে রইবে। আর তাই কুরআনে বারবার শয়তান হতে সতর্ক করা হয়েছে। দাজ্জাল কোন মুমিনকে প্রতারিত করতে পারবে না। অথচ ইবলিশ আদমকে (আঃ) প্রতারিত করেছিল। দাজ্জালকে হত্যা করা যাবে অথচ কেয়ামত পর্যন্ত ইবলিশ জীবিত থাকবে। দাজ্জালের ষড়যন্ত্র ইবলিশের ষড়যন্ত্রের পূর্নরূপ। দাজ্জালের হাতে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। তাকে অস্বীকার করলে আগুনে ফেলা হবে। ইবলিশ দুনিয়ার সুখকে জান্নাতের মত স্হায়ী ধারণা দেয় আর দুনিয়ার ক্ষতিকে জাহান্নামের মত ভয় দেখায়। আর ইবলিশের অনুসারীরা আসহাবে উখদুদ ও ইব্রাহিম (আঃ) কে আগুনে ফেলেছিল সমকালীন তাগুতকে অস্বীকার করায়। দাজ্জালের সময় দুর্ভিক্ষ হবে ফলে খাদ্য, সাহায্য ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করে দাজ্জালের অনুসারী বানানো হবে। বিভিন্ন দেশের শরণার্থী ও উপজাতিরা খাদ্য, সাহায্য ও ভয়ভীতি, ক্ষতি এসব কারণে বর্তমানে কি ধর্মান্তরিত হচ্ছে না?! নূহ (আঃ) হতে শুরু করে সব নবী ও সাহাবীরা দাজ্জাল হতে সতর্ক করেছেন। অথচ দাজ্জালের জন্ম হয় বহু পরে ইয়াহুদী বংশে। ইয়াকুব (আঃ) এর উপাধি ছিল ইসরাঈল অর্থ আল্লাহর বান্দা। তার বংশধরদের বনী ইসরায়েল বলা হতো। আর তার এক সন্তানের নাম ছিল ইয়াহুদ। তার নাম অনুযায়ী পরবর্তীতে একদল লোক তাকে অনুসরণের নামে বাড়াবাড়ি করে নিজেদের মুসলিম পরিচয় বাদ দিয়ে ইয়াহুদী পরিচয় দিতে শুরু করে। আজও দেখুন আমরা আমাদের মূল পরিচয় মুসলিম ভুলে আলেমদের নামে বহু পরিচয় সৃষ্টি করে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। আসলে ইদ্রিস (আঃ) এর পরবর্তীতে নূহ (আঃ) এর সময়কালে শিরক প্রসার লাভ করে। আর দাজ্জালের সাথে সম্পর্ক হল শিরকের, তাই তখন হতে বার বার সর্তক করা হয়েছে। আর নূহ (আঃ) এর সময় বন্যায়/আযাবে তারাই রক্ষা পেয়েছিল- যারা শিরকমুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে নূহ (আঃ) এর অনুসরণ করেছিল। তেমনি দাজ্জাল আসার পূর্বে যারা শিরকমুক্ত থাকবে রসুলের (সাঃ) নির্দেশ অনুযায়ী- খলিফা মাহাদীর (হাফিঃ) দলে যোগ দিবে। তারাই ফেতনা হতে বাঁচতে পারবে। নবী, রসুলগণ যতবার দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তারচেয়ে বহুগুন বেশি শয়তান, তাৎকালীন জালেম শাসক ও শিরকের বিরোধিতা করেছেন। দাজ্জাল আসার পূর্বে শয়তান মুসলিমদের মনোবল ভাঙ্গার জন্য তার বের হওয়ার গুজব ছড়াবে। (মুসলিম- ৬ অধ্যায় -কেয়ামতের ফেতনা, আল ফিতান)। একটা সময় যখন চেঙ্গিস খানের বাহিনী মুসলিমদের পরাজিত করে ভূখন্ডগুলো দখল করে তখন অনেক আলেমরা ফাতওয়া দেন ওরা ইয়াজুজ মাজুজ। যেহেতু ইয়াজুজ মাজুজের সাথে কেউ লড়াই করতে পারবে না, পালাতে হবে। তাই লড়াই বন্ধ করে অনেকে পালালো। মুমিনরা লড়লো ও বিজয়ীও হল। তেমনি দাজ্জাল হতে পালাতে বলেছে কারণ ঈসা (আঃ) ছাড়া লড়াই করে তাকে পরাজিত করা যাবে না। তাই এখন যদি এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় – এটাই দাজ্জালের ফেতনা, ও সে বের হয়ে গেছে তাহলে মুসলিমদের একটা সময় জেহাদবিমুখ করা যাবে। মূলত খলিফা মাহাদীও জানবেন না দাজ্জাল ঠিক কোন সময় (দিন, ঘন্টা) আত্মপ্রকাশ করবে। তাই তো গুজব রটালে তিনি খবর নিতে ঘোড়সওয়ার বাহিনী পাঠাবেন। আসলে দাজ্জাল যখন বের হবে শয়তানের নির্দেশে – তার সঙ্গীরা (ক্বারিন, ইফেত্রিস, সোলাইমন (আঃ) এর সময় বন্দীকৃত জিনরা মুক্ত হয়ে, ও অন্যান্য জিন শয়তান) দাজ্জালের সাথে যোগ দিবে যাতে মানুষের উপর চরম ফেতনা সৃষ্টি করা যায়। জ্বিনদের প্রকার ও ইবলিস নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করবো ইনাশাল্লাহ। এমনিতে শয়তান বড় ফেতনা তার উপর দাজ্জাল ও শয়তানের সম্মলিত বাহিনীর ফেতনা, তাই সেই সময় দাজ্জাল হবে বিশ্বের বড় ফেতনা। বর্তমানের ফেতনার অন্যতম কারিগর জিন ও মানব শয়তান। যা সেই বহুযুগ ধরে করে আসছে, মুমিনরা আজও তা মেকাবিলা ও লড়াই করে পরাজিত করতে পারবে। অথচ দাজ্জাল হতে পালাতে বলা হয়েছে। তাও সবার জন্য নয় দুর্বল ঈমানদারের জন্য। ঈসা (আঃ) আসার পূর্বে অনেক মুজাহিদ দাজ্জালের বিপক্ষে লড়াই করে শহীদ হবে। ঈসা (আঃ) এর সময় অল্পকিছু মুমিন মুজাহিদ দাজ্জালের বাহিনীর উপর বিজয়ী হবে। দাজ্জালের সাথে সম্পর্ক শিরকের। এখন বর্তমান শিরকী রীতিনীতি, জাতীয়তাবাদ, ধর্মের ভুল ব্যাখা, জুলুম-নির্যাতন বাদ দিয়ে দাজ্জাল নিয়ে আজগুবি কাহিনী বলে। রসুলের (সাঃ) সুন্নাহের অনুসরন না করে শয়তানের কাজটাই সহজ করছে অনেক বক্তাই জনপ্রিয়তার জন্য। হাদীসে বলা হয়েছে – দাজ্জাল আসার আগে বহুবছর মসজিদ হতে তার আলোচনা হবে না। অথচ তখন মাহাদী (হাফিঃ) ও তার সঙ্গীগণ জীবিত থাকবে। এর কারণ তখন একের পর এক যুদ্ধ ও ফেতনা চলবে। সেগুলো নিয়ে আলোচনাই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যারা মাহাদীর (আঃ) সাথে জেহাদ করার পর জীবিত থাকবে দাজ্জালের ফেতনা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যেমন – মালহামা ও ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর জীবিত মুজাহিদরা, এছাড়া গাজাওয়ে হিন্দের জীবিতরা ঈসা (আঃ) এর সাথে মিলিত হয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। (মুসলিম – কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়, আল ফিতান, আবুদাউদ)। তাই যারা জেহাদ, শহীদ হওয়াকে অপছন্দ করবে তারা দাজ্জালের ফেতনায় ঠিকই পড়বে।

দাজ্জাল পর্ব-২

দাজ্জাল পর্ব-৩

5 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *