জন্মের পর হতে এমন দৃশ্য এদেশে দেখা হয়নি। চারপাশে অথৈ পানি। পানিতে ভেসে গেছে- মানুষ, ঘরবাড়ি, স্বপ্ন। দুচোখে ক্ষনে ক্ষনে প্রিয়হারা অশ্রুধারা তবু হাহাকার পানির (বিশুদ্ধ) ও খাদ্যের। ক্ষুধার্ত অসহায় শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কষ্ট ও আর্তনাদে আমাদেরও চোখে জল ঝরছে।
দান/ত্রান সাহায্য দিয়ে ভাইয়েরা ছুটছে সবদিকে, আহ কত অসহায় মানুষ। অনেকে ত্রান লুটে নিচ্ছে কাল বা পরে যদি খাদ্য না পায়, পরিবার নিয়ে কিভাবে বেচে থাকবে এই ভাবনায়। এখন স্বপ্ন কোন উচ্চবিলাসী নয় শুধু একমুঠো খেয়ে বেচে থাকা।
রোজ কেয়ামতের ভয়াবহ সময়ে সবাই নিজেকে বাচাতে ব্যস্ত থাকবে। ভাবনা হবল শুধু – জাহান্নাম হতে বেঁচে থাকা। অবাক হলেও সত্যি, দুনিয়ার বিপদ থেকে পরিত্রান পেতে ত্রানের জন্য আমরা যতটা সচেষ্ট, আজও জাহান্নাম হতে বাঁচতে আমরা ততটা সচেতন নই।
বর্তমান বন্যায় আপনাদের কষ্ট আমাদের সহ্য হচ্ছে না। যখনি ভাবি কুফর, শির্ক করার কারনে যদি আজীবন জাহান্নামে জ্বলতে হয়। ভীষন চিন্তা ও ভীতি লাগে। ইহজীবনের কষ্ট শেষ হবে একদিন কিন্তু যদি আজীবন জাহান্নামের বসতি হয় তা কতটা কষ্টকর! তাই ত্রানের পাশাপাশি পারলে দ্বীনও জানান।
হাজারো ত্রান, সাহায্য নিয়ে বাঁচানো সম্ভব হবে না, না বৃষ্টি প্রতিরোধ হবে। যদি না বান্দা তওবা করে দ্বীনের পথে ফিরে আসে। সবাই দাওয়াহ দিবেন – তওবা করার এবং এই বিপদ হতে যদি বেঁচে ফিরে যেন কুরআন পড়ে দ্বীন শিখে। হাদীসে এসেছে –
বনি ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করে দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খ্রিস্টান পাদরির কথা বলা হলে সে তার কাছে এসে বলল যে সে ৯৯ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এ অবস্থায় তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? আলেম বলল, নেই। ফলে লোকটি আলেমকেও হত্যা করল।
এভাবে তাকে হত্যা করে সে একশ সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করায় তাকে একজন আলেমের কথা বলা হলো। সে তাঁর কাছে গিয়ে বলল যে সে একশ জনকে হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তাওবার মাঝে কিসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও।
সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সঙ্গে ইবাদত করো। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা।
লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আজাবের ফেরেশতামণ্ডলীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে।
পক্ষান্তরে আজাবের ফেরেশতা বলল, লোকটি কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের কাছে আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের সালিস নিযুক্ত করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখো। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে।’
আল্লাহ তাআলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পেছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকের এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবজ করল। [আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, বুখারি, হাদিস : ৩৪৭০, মুসলিম, হাদিস : ২৭৬৬)]
এটা হল তওবা, হিজরত ও ইলম শেখার ফজিলত। এই লোকটা যে শহরে, জনবসতির সাথে ছিল সেখানে সঙ্গ দোষ বা পূর্বকর্মের কারনে আবার পাপে জড়িয়ে যেতে পারতো।
পক্ষান্তরে সে এমন জনবসতিতে যাওয়ার পরামর্শ পেল- যেখানে গেলে দ্বীনদার লোকের সংস্পর্শে দ্বীন শিখে আমল করতে পারবে। যারা তওবা করে দ্বীন ইসলাম মানতে চায়, ইলম শিখতে চায় তাদের সাহায্য আল্লাহই করেন। এখন সময় শুধু নিয়ত। সামান্য প্রচেষ্টাই হয়তো জান্নাত পাওয়ার কারন হতে পারে ।
মানুষকে কালেমার অর্থ জানাতে হবে – কারো মৃত্যুকে ঠেকানো যাবে না, তবু দাওয়াহর কারনে যেন ঈমান এনে জাহান্নাম হতে বাঁচতে পারে! আর আমাদের নিয়ত যেন হয় বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে দ্বীন ইসলামের বানী সবখানে পৌছানো এবং একে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা। মরতে যখন হবে একদিন তাহলে দ্বীনের জন্য শহীদ হয়ে আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়া উত্তম নয় কি!
হাদীসে এসেছে,
সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ)— আনাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ইয়াহুদী বালক নবী (সাঃ) এর খিদমাত করত। সে একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সাঃ) তাকে দেখার জন্য আসলেন।
তিনি তার মাথার কাছে বসে তাকে বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহন কর, সে তখন তার পিতার দিকে তাকাল, সে তার কাছেই ছিল, পিতা তাকে বলল, আবুল কাসিম (রসুলের কুনিয়াত) এর কথা মেনে নাও। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করল।
নবী (সাঃ) সেখান হতে বের হয়ে যাওয়ার সময় ইরশাদ করেনঃ যাবতীয় প্রশংসা সে আল্লাহর, যিনি তাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিলেন (বুখারী ১২৭৩)।
মৃত্যুশর্য্যায় রসুল (সা:) তাকে ইসলামের পথে দাওয়াহ দিয়েছেন। এখন এই সময় নয়, যেহেতু রোগীর আগে চিৎকিসা করাতে হবে, বাঁচলে তখন দাওয়াহ হবে এরুপ মনোভাব ছিল না। কারন মৃত্যু যেকোন মুহূর্তে আসতে পারে! সতর্কীকরণ, দাওয়াহ বিপদের সময় জরুরি।
তাহলে ঈমান এনে মৃত্যু হলে হয়তো জাহান্নাম হতে রক্ষা করবেন আর বেঁচে থাকলে ঈমানের দৌলতে আমল সমৃদ্ধ হবে। তাই এখন দাওয়াহ দেওয়ার সময় নয়, শুধু ত্রান/দান দেন পরে বন্যা শেষে দাওয়াহ দিবেন – এমন যেন না হয়।
অথচ কালকের সকাল অনেকে দেখবে না, আর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য আপনাদের কষ্ট, অবদানের (দান/সাহায্য) উসিলায় অনেকে হয়তো ইসলামের সৌন্দর্য্য দেখে ঈমান আনতে পারে। তাই কষ্ট যখন করছেন এই মহান সুযোগ কাজে লাগান- একজনও যদি ইসলাম না মানে আপনি ঠিকই দাওয়াহর কারনে আল্লাহর নিকট প্রিয় হবেন, জান্নাতের কল্যান পাবেন।
কোন ব্যক্তি সারাজীবন শিরক করে মুসলিম হওয়ার পর তার সকল গোনাহ ক্ষমা করা হয়। আল্লাহ রসুলগণকে পাঠিয়েছেন জাহান্নাম হতে সতর্ক ও জান্নাতের সুসংবাদ দিতে। আল্লাহ মানব কল্যানের জন্য ইসলাম দিয়েছেন। যদি ওদের প্রকৃত কল্যাণ চান দাওয়াহও দেন। দুনিয়ার সামান্য আযাব হতে জাহান্নাম অনেক কঠিন। আর এর হতে নিজে বাচুন ও অন্যকে বাচানোর জন্য চেষ্টা করুন।
আর সকল বিপদ হতে রক্ষা করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।