কুরআন ব্যতীত তাবিজ হারাম এই ব্যাপারে ওলামারা ঐক্যমত। কিছু আলেম কুরআন দ্বারা তাবিজ মানলেও অধিকাংশ তার বিরুদ্ধে।
কিন্তু কথা হল – আসলে তাবিজ কি গুপ্তবিদ্যা!? ইসলামে কি আসলে এই ধরনের গুপ্তবিদ্যা আছে কি!? রসুল (সা:) ও সাহাবীরা দ্বীন সুস্পষ্ট জানিয়ে গেছেন কোনকিছু গোপন রাখেন নি!! অথচ বহুজনই আজ ইসলামের নামে (কুরআন দ্বারা) যা করছে, ছড়াচ্ছে তা জাহেলিয়াত ও কুরআন অবমাননা ও মানুষের ঈমান নিয়ে ব্যবসায় মেতেছে। বাজারে বহুরকম তাবিজের বই পাবেন কুফরীতে ভরা।
আজ প্রসিদ্ধ বই আমালী কুরআন যার লেখক আশরাফ আলী থানভী বলে আলেমরা প্রচার করে থাকেন এবং সবচেয়ে বেশি তাবিজ এই বই অনুসারে করেন তথাকথিত আলেমগন তা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
এই পোস্টের উদ্দেশ্য ফেতনা সৃষ্টি করা নয় বরং এসব তাবিজ ও বইয়ের বিরোধিতা করায় বহু ভাইকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে!! আসুন দেখি ওরা কিভাবে তাবিজ করে – এই বইয়ে কুরআনের আয়াত দ্বারা কিছু দোয়া ও তাবিজের কথা বলা আছে।
কিন্তু কিছুক্ষেত্রে যা লেখা আছে তা সত্যিই বিব্রতকর –
১.শত্রু দমনের আমল
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُبۡطِلُوۡا صَدَقٰتِکُمۡ بِالۡمَنِّ وَ الۡاَذٰی ۙ کَالَّذِیۡ یُنۡفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِؕ فَمَثَلُهٗ کَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَیۡهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَکَهٗ صَلۡدًا ؕ لَا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّمَّا کَسَبُوۡا ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ
(সূরা বাকারা : ২৬৪)
বৈশিষ্ট্য : যদি শত্রু খুব যালেম হয় আর তার ক্ষতি করা শরীয়তসম্মত হয়, তাহলে শনিবার দিন এক টুকরা কাঁচা চাঁড়া বানাবে এবং সেদিনই কোনো পুরাতন কবরস্থান ও বিরাণ ঘর থেকে কিছু মাটি সংগ্রহ করবে। আর কিছু মাটি এমন খালি ঘর থেকে সংগ্রহ করবে, যে ঘরের অধিবাসী ইন্তেকাল করেছে । এ তিন প্রকার মাটি সংগ্রহ করার পর উপরোক্ত আয়াতটি চাঁড়ার উপর লিখে চাঁড়াটি খুব মিহি করে পিষবে। এরপর ঐ তিন প্রকার মাটির সাথে মিশিয়ে শুক্রবার দিন সকালে শত্রুর ঘরে ছিটিয়ে দিবে । ইনশাআল্লাহ শত্রু ধ্বংস হয়ে যাবে। (পৃষ্ঠা -৮১)
নাউজুবিল্লাহ!! এই ধরনের আমল সাহাবী, তাবেয়ীরা করেছিলেন কি!? মুসলিমদের অজস্র শত্রু ছিল – তা দাওয়াত, জেহাদ, দোয়ার মাধ্যমে দমন হয়েছিল!! কুরআনের আয়াত লিখে তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে যেন মানুষ এর উপর হেটে যায়।
২. ঘুমন্ত স্ত্রীর গোপন রহস্য অবগত হওয়ার আমল
وَ قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعۡدُوۡدَۃً ؕ قُلۡ اَتَّخَذۡتُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ عَهۡدًا فَلَنۡ یُّخۡلِفَ اللّٰهُ عَهۡدَهٗۤ اَمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۸۰﴾ بَلٰی مَنۡ کَسَبَ سَیِّئَۃً وَّ اَحَاطَتۡ بِهٖ خَطِیۡٓــَٔتُهٗ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۸۱﴾ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۸۲﴾
(সূরা বাকারা : ৮০-৮২)
বৈশিষ্ট্য : রবিবার দিবাগত রাতের পাঁচ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পর নাবালেগ মেয়ের ব্যবহৃত কাপড়ে আয়াতগুলো লিখবে। এরপর যে মহিলার গোপন রহস্য জানতে চায় তার বুকের উপর কাপড়টি রেখে দিবে। তাহলে সে যা কিছু করেছে সব বলে দিবে। শরীয়ত বিরোধী কোনো স্থানে এ আমল করা হারাম। (পৃ-৭৪)
নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ মানুষের দোষ ক্রুটি লুকিয়ে রাখেন বলে হয়তো আজও আমরা দাওয়াত দিতে পারছি!! ইসলাম গোপন বিষয় তালাশ করা নিষেধ করেছে। যারা বিনা ওজুতে কুরআন ধরা জায়েজ নয় ফাতওয়া দেয় অথচ নাবালক মেয়ের ব্যবহৃত কাপড়ে কিভাবে কুরআনের আয়াত লিখেন!? নাউজুবিল্লাহ তা কি অপরিস্কার নয় তাও আবার স্ত্রীলোকের বুকের উপর রাখা।
৩. সহজে বাচ্চা প্রসব হওয়ার আমল
اِذَا السَّمَآءُ انۡشَقَّتۡ* وَ اَذِنَتۡ لِرَبِّهَا وَ حُقَّتۡ* وَ اِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ* وَ اَلۡقَتۡ مَا فِیۡهَا وَ تَخَلَّتۡ
(সূরা ইনশিকাক: ১-৪)
বৈশিষ্ট্য : সহজে সন্তান প্রসবের জন্য উক্ত আয়াতগুলো লিখে গর্ভবতী মহিলার বাম রানে বেঁধে দিলে ইনশাআল্লাহ অনেক সহজেই সন্তান প্রসব হবে। তবে সন্তান প্রসব হওয়ার সাথে সাথে তাবিজটি খুলে ফেলতে হবে। (পৃ-৫৫)
নাউজুবিল্লাহ – এই ধরনের কোন আমল সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীরা করেছিলেন? শুধু একটা দলিল দেখাক।
আমাদের উদ্দেশ্য নয় – ফেতনা ছড়ানোর বরং এগুলোর বিরুদ্ধে বলায় অনেককে ইহুদির দালাল, উগ্রবাদী, আলেমদের শানে বেয়াদপির অভিযোগ আনে আর গরিবদের বিশ্বাস ও টাকা লুটছে তাই এগুলো প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। বহু লাইব্রেরীতে এই বই পাবেন।
আমাদের গালি না দিয়ে যাচাই করুন।
আল্লাহ বলেন-
সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানেরা যা আবৃত্তি করত, তারা তা অনুসরণ করত। অথচ সুলাইমান কুফরী (সত্যপ্রত্যাখ্যান) করেননি বরং শয়তানেরাই কুফরী (অবিশ্বাস) করেছিল। তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত, যা বাবেল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল। ‘আমরা (হারূত ও মারূত) পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরী (সত্যপ্রত্যাখ্যান) করো না’ — এ না বলে তারা (হারূত ও মারূত) কাউকেও শিক্ষা দিত না। তবু এ দু’জন হতে তারা এমন বিষয় শিখত, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তারা কারো কোন ক্ষতিসাধন করতে পারত না। তারা যা শিক্ষা করত, তা তাদের ক্ষতিসাধন করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিতভাবে জানত যে, যে কেউ তা (যাদুবিদ্যা) ক্রয় করে, পরকালে তার কোন অংশ নেই। আর তারা যার পরিবর্তে আত্মবিক্রয় করেছে, তা নিতান্তই জঘন্য, যদি তারা তা জানত! (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১০২)
অর্থাৎ, ঐ ইয়াহুদীরা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর অঙ্গীকারের কোন পরোয়া তো করলই না, উপরন্তু শয়তানের অনুকরণ করে তারা যোগ-যাদুর উপর আমল করতে লাগল। শুধু তাই নয়; বরং তারা এ দাবীও করল যে, সুলাইমান (আঃ) কোন নবী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন যাদুকর এবং যাদুর জোরেই তিনি রাজত্ব করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ) মহান আল্লাহ বললেন, সুলাইমান (আঃ) যাদুর কার্যকলাপ করতেন না। কারণ, তা কুফরী। কুফরী কাজের সম্পাদন সুলাইমান (আঃ) কিভাবে করতে পারেন?
কথিত আছে যে, সুলাইমান (আঃ)-এর যামানায় যাদুর কার্যকলাপ ব্যাপক হয়ে গিয়েছিল। সুলাইমান (আঃ) এ পথ বন্ধ করার জন্য যাদুর কিতাবগুলো সংগ্রহ করে তাঁর আসন অথবা সিংহাসনের নীচে দাফন করে দেন। সুলাইমান (আঃ)-এর মৃত্যুর পর শয়তান ও যাদুকররা ঐ কিতাবগুলো বের করে কেবল যে মানুষদেরকে দেখালো তা নয়, বরং তাদেরকে বুঝালো যে, সুলাইমান (আঃ)-এর রাজশক্তি ও শৌর্যের উৎস ছিল এই যাদুরই কার্যকলাপ। আর এরই ভিত্তিতে ঐ যালেমরা সুলাইমান (আঃ)-কে কাফের সাব্যস্ত করল। মহান আল্লাহ তারই খন্ডন করেছেন। (ইবনে কাসীর, ইত্যাদি)। আর আল্লাহই ভালো জানেন।