তাকদ্বীর পর্ব-২ (লাওহে মাহফুজ)

তাকদ্বীরের পাচটি পর্যায় রয়েছে। কিছু লিখিত তাকদ্বীর অপরিবর্তনশীল। আর তাকদ্বীরের পরিবর্তন বলতে কি বুঝায় ইনশাআল্লাহ পর্যায়ক্রমে আলোচনা হবে।

প্রথম পর্যায়ঃ লাওহে মাহফুজ

আল্লাহ বলেন-

‘বরং এটা মহান কোরআন।
লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ।’

সুরা বুরুজ : ২১-২২

অপর আয়াতে রয়েছে-

‘তুমি কি জান না যে আসমান-যমীনে যা কিছু আছে, সব বিষয়ে আল্লাহ জানেন। এ সবকিছুই কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।’

সূরা আল হাজ্জ : ৭০

অন্যত্র মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

‘যমীনে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর এমন কোন মুছীবত আসে না, যা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ হয় নি। নিশ্চয়ই এটি আল্লাহর পক্ষে সহজ।’

সূরা আল-হাদীদ : ২২

তিনি লাওহে মাহফুজে (সংরক্ষিত ফলকে) সব কিছু লিখে রেখেছেন।

● আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকুল সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকুলের তাকদির লিখে রেখেছেন।’ (মুসলিম)

● তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বললেন—লেখো। কলম বলল, হে রব! কী লিখব? তিনি বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদির লেখো।’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪৭০০)।

ইমরান ইবনে হুছাইন (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ ছিলেন; তাঁর পূর্বে কিছুই ছিল না। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে। অতঃপর আল্লাহ আসমান-যমীন সৃষ্টি করলেন এবং লাওহে মাহফূযে সবকিছু লিখে রাখলেন’।

আসমান-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ লাউহে মাহফূযে সবকিছুর তাক্বদীর লিখে রাখেন। লাউহে মাহফুযে বান্দার ভাগ্যে ভাল বা মন্দ যা-ই লিখে রাখা হয়েছে, তা ই সে পাবে। লাওহে মাহফুজের লিখিত তাকদ্বীর অপরিবর্তিনশীল। আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছু ঘটে না।

কুরআনে বর্নিত হয়েছে-

“আর আপনার রব যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং যা ইচ্ছে মনোনীত করেন, এতে ওদের কোন হাত নেই। আল্লাহ্ পবিত্ৰ, মহান এবং তারা যা শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে!”

সুরা কাসাস : ৬৮

● রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের ঠিকানা জান্নাতে অথবা জাহান্নামে লিখা হয়ে গেছে। তখন তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তবে কি আমরা আমল বর্জন করব না এবং আমাদের কিতাবের উপর ভরসা করব না?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন না, আমল করতে থাকো। আর প্রত্যেকের জন্য ঐ আমল করা সহজ হবে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (বুখারী ও মুসলিম)।

● অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ যে আমল করে এবং কষ্ট স্বীকার করে সে ব্যাপারে আপনার কী অভিমত? এ ব্যাপারে কি কলম শুকিয়ে গেছে এবং আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে? নাকি তারা যা করছে নতুনভাবে করছে?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বললেন, এ ব্যাপারে কলম শুকিয়ে গেছে এবং আমলনামা গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে আমল করে লাভ কি?

জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমল করতে থাকো। আর প্রত্যেকের জন্য ঐ আমল করা সহজ হবে যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (বুখারী)।

আল্লাহ তাআলা সবকিছু জানেন এবং তিনি যা জানেন তাই লিখে রেখেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন যে, অমুক ব্যক্তি ঈমান আনবে এবং নেক-কাজ করবে। ফলে সে জান্নাতে যাবে। আবার আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে লিখে রেখেছেন যে, সে গুনাহের কাজ করবে এবং জাহান্নামে যাবে।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা জানেন বলে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, অমুক ব্যক্তি একটি মেয়েকে বিয়ে করবে এবং তার সাথে সহবাস করবে। ফলে তার সন্তান হবে এবং আরেক ব্যক্তি সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন যে, সে আহার করবে এবং তৃপ্ত হবে।

এমতাবস্থায় কেউ যদি একথা বলে যে, আমি যদি জান্নাতী হই তবে তো আমার আমলের কোনো প্রয়োজন নেই, আমল ছাড়াই আমি জান্নাতে যেতে পারব তাহলে তার একথা বাতিল বলে সাব্যস্ত হবে।

কেননা সে জানে যে, সে তার নেক-আমল দ্বারা জান্নাতে যাবে। এখন যদি সে আমল ছাড়া জান্নাতে দাখেল হয় তাহলে তা আল্লাহ তাআলা যা জানেন এবং তিনি যা ফয়সালা করে রেখেছেন তার বিরোধী হবে।

মূলত আল্লাহ অতীত, ভবিষ্যৎ সব জানেন।

যে জান্নাতের যাবার নিয়ত রাখে তার জন্য পথ সহজ করা হয়েছে আর যার নিয়ত হলো দুনিয়ার সমৃদ্ধি সে জান্নাতের কথা ভুলে পাপের পথে চলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম।

আল্লাহ বলেন-

“যারা দুষ্কর্ম করেছে তারা কি মনে করে যে, জীবন ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে আমি তাদেরকে এ সব লোকের সমান গণ্য করব, যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে? তাদের বিচার কতইনা মন্দ!”

সূরা আল-জাছিয়া : ২৯

অন্যত্র রয়েছে-

“যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করল সে সফল হলো। আর যে নিজেকে কলুষিত করল সে ব্যর্থ হলো।”

সূরা শামস : ৯-১০

আল্লাহ তার জ্ঞান অনুযায়ী রিযিক লিখে রেখেছেন। আর ভবিষ্যতে কে কি আমল করবে তা জানেন। আর সে অনুযায়ী জান্নাতী ও জাহান্নামী কে হবে লিখে রেখেছেন।

লাওহে মাহফুজ কেমন!?

● বগভি (রহ.) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, লাওহে মাহফুজের সর্বোচ্চ স্থানে লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক। তার ধর্ম ইসলাম। মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসুল।

সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনবে, তার অঙ্গীকারকে সত্যায়ন করবে, তার রাসুলকে অনুসরণ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’

তিনি আরও বলেন, লাওহে মাহফুজ সাদা মুক্তার তৈরি। তার দৈর্ঘ্য আসমান-জমিন সমান। প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিম সমান। তার দুই পাশ্বদেশ মুক্তা ও ইয়াকুত পাথরের, তার দুই কিনারা লাল ইয়াকুতের। তার কলম নূরের এবং তার উপরাংশ আরশের সঙ্গে সম্পৃক্ত, নিম্নাংশ ফেরেশতার ওপর। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১ম খন্ড)

কালেমা কতটা গুরুত্বপূর্ণ অথচ অধিকাংশ লোকই কালেমার মর্ম বুঝে না।

তাকদ্বীর সিরিজের পোস্টগুলো দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *