ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে বহু সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে – যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হল সে হারামেই লিপ্ত হল। যেমন রাখাল, যে তার পশু বাদশাহের সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে।
জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর জমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়।
আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হলো অন্তর।”
সহীহ – মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।
এটিই সাহাবিদের নীতি তারা যেমন হারামকে ঘৃণা করতেন তেমনি সন্দেহজনক জিনিস হতেও দূরে থাকতেন।
আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রা)-এর একটা গোলাম ছিল, যে তাঁকে কিছু কর প্রদান করত। আর আবূ বকর তাঁর কর হতে খাবার গ্রহণ করতেন। একদা এক গোলাম কিছু জিনিস নিয়ে এল এবং আবূ বকর (রা) তা থেকে কিছু আহার করলেন। তখন গোলামটি তাঁকে বলল, আপনি কি জানেন, এটা কি (যা আপনি খেলেন)? আবূ বকর (রা) বললেন, সেটা কী ছিল?
সে গোলাম বলল, জাহেলী যুগে আমি এক লোকের ভবিষ্যৎ গণনা করেছিলাম। মূলত আমি ভাগ্য গুণতে জানতাম না; বরং তাকে আমি প্রতারিত করেছিলাম মাত্র।
আজ সে লোকটি আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে ঐ কাজের মূল্য প্রদান করল। এটাই সে বস্তু যা থেকে আপনি খেলেন। এ কথা শুনে আবূ বকর নিজের হাতখানা মুখে প্রবেশ করিয়ে বমি করে পেটের সবকিছু বের করে দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)
অপরদিকে ইয়াহুদীদের বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের যখনই তাদের দ্বীনের পথে আহ্বান করা হতো সত্যকে গ্রহণ না করে উল্টো যুক্তি দিয়ে ফেতনা ছড়াত।
আবু বকর একদা ইহুদীদের শিক্ষালয়ে গেলেন। সেখানে ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছিল। ঐ বিদ্যালয়ে ‘ফানহাস’ নামক একজন বড় পণ্ডিত ছিল। আর তাঁর সাথে ‘আশ্ইয়া’ নামক একজন বড় আলেম ছিল। আবু বকর আল ফানহাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার অমঙ্গল হোক। আল্লাহকে ভয় কর এবং ইসলাম গ্রহণ কর। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তুমি জান যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছেন।
তোমরা তাওরাত এবং ইঞ্জিলে তাঁর আলোচনা পেয়েছ। ফানহাস বলল, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ আমাদের মুখাপেক্ষী, আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী নই। আমরা তাঁর এরূপ কাকুতি-মিনতি করি না যেমন তিনি আমাদের কাছে কাকুতি মিনতি করেন। আমরা তাঁর নিকট মোটেই মুখাপেক্ষী নই। কারণ আমরা ধনবান। তিনি যদি ধনী হতেন তাহলে আমাদের নিকট ঋণ চাইতেন না।
যেমন আপনার নবী সুদ হতে বিরত রাখতে চাচ্ছেন অথচ আল্লাহ নিজেই সুদ দিচ্ছেন। তিনি যদি ধনীই হবেন তাহলে আমাদের সুদ দিতে চাইবেন কেন? এ কথা শুনে আবু বকর রেগে গেলেন তাঁর গালে সজোরে চড় মারলেন এবং বললেন : হে আল্লাহর দুশমন! যদি তোমাদের মাঝে চুক্তি সম্পাদিত না হতো তাহলে তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম।
এরপর ফানহাস নবী (সা)-এর নিকট গিয়ে বিচার দিয়ে বলল, দেখ তোমার সাথী আমার সাথে কী ব্যবহার করেছে। নবী (সা) বললেন, হে আবু বকর! এমন কী হলো যে, তুমি এরূপ করলে? আবু বকর বললেন, আল্লাহর দুশমন ভয়ানক কথা বলেছে। সে মনে করে আল্লাহ গরীব আর তাঁরা ধনী। এজন্য তাঁর চেহারায় আঘাত করেছি। ফাহনাস অস্বীকার করে বলল, না, আমি এরূপ বলিনি। তখন আল্লাহ ফাহনাসকে মিথ্যুক প্ৰমাণ করত এবং আবু বকর কে সত্য প্রমাণ করত এ আয়াত অবতীর্ণ করেন
“নিশ্চয় আল্লাহর তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে: আল্লাহ দারিদ্র আর আমরা ধনী। শীঘ্রই আমি লিখে রাখবো তাঁরা যা বলেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যার বিষয়া ও এবং আমি বলব, তোমরা উত্তপ্ত আযাব ভোগ কর।”
(সূরা আলে ইমরান আয়াত-১৮১) (তাফসীরে কুরতুবী, ৪/২৯৫)
আজও বহু আলেম ও নামধারী মুসলিমদের দাওয়াত দিলে তারা সুস্পষ্ট হারামের ব্যাপারে উল্টো যুক্তি দেখায়!!
হক্বপন্থী আলেমরা যেসব নিয়মনীতিকে শিরক, কুফর বলে প্রচার করে অন্যরা এসব নিয়মনীতি দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।