জাদু প্রধাণত দুরকম – একধরনের জাদু হল চোখের ধোকা, বিভিন্ন কলাকৌশলের মাধ্যমে করা হয়। আলেমদের মতে এটা হারাম। আরেক ধরনের জাদু হল বড় শিরক ও কুফরি। জাদুর সমস্ত কারবার তথা জাদু শিখা বা শিখানো অথবা করা বা করানো কিংবা জাদুর সাহায্যে চিকিৎসা অথবা জাদু প্রদর্শন ইত্যাদি সবই কুফরি। আবার এমন কিছু জাদু আছে যা ছোট শিরক ও ছোট কুফরির পর্যায়ের।
জাদু শয়তানদের শিক্ষা এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:
“আর সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করেছে। আর সুলাইমান কুফরী করেননি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে শিক্ষা দিত জাদু ও (সে বিষয় শিক্ষা দিত) যা বাবিল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল হয়েছিল। তারা উভয়েই এই কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, ‘আমরা নিছক একটি পরীক্ষা; কাজেই তুমি কুফরী করো না’। তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো। অথচ তারা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। আর তারা তা-ই শিখত যা তাদের ক্ষতি করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিত জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে, (অর্থাৎ জাদুর আশ্রয় নেয়) তার জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা নিজেদের বিকিয়ে দিচ্ছে, তা খুবই মন্দ, যদি তারা জানত!”
সুরা বাকারাহ-১০২
তার মানে জাদু কোন বিছিন্ন কিছু নয় এটা শয়তানী বিদ্যা। দেখবেন – তথাকথিত খোনার, তান্ত্রিকরাও দাবি করে অমুক জায়গায় অমুক পাহাড়ে দীর্ঘদীন ধ্যানমগ্ন, তপস্যা করে এই বিদ্যা অর্জন করেছে। মূলত জাদু হল শয়তান ও তান্ত্রিক, খোনার বা সাহায্যপ্রার্থীদের সাথে চুক্তি করা। তারা শয়তানের কথা মেনে নিবে তার বিনিময়ে শয়তান তাদের সাহায্য করবে। আর তথাকথিত তান্ত্রিকরা ভক্তদের প্রতারিত করে ঈমানহারা করে ও সম্পদ হাতিয়ে নেয়।
জাদুকররা জাদুতে জিন ও শয়তানদেরকে ব্যবহার করে এবং উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের নামে কুরবানি, ভোগ, সেজদা মাহরামের সাথে সহবাস, শিশু ধর্ষন ও সমকামিতা, কুরআনকে টয়লেটে ফেলা, কুফরী দোয়া, রসুলের (সাঃ) অবমাননা ইত্যাদি করে থাকে যা সুস্পষ্ট কুফর। দুনিয়ার লোভে শয়তান এভাবে ঈমানহারা করে। আল্লাহপাক শয়তানের ফাদে পতিত না হতে কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে বলেন-
‘(শয়তান) তোমাদেরকে এ নির্দেশ দেবে যে, তোমরা অশ্লীল ও কু-কর্মে লিপ্ত হও; আর আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে যা তোমরা জান না তা বলতে আদেশ করে।’
সুরা বাকারাহ-১৬৯
জাদুকর চেনার উপায়
১. রোগীকে তার নাম ও মার নাম জিজ্ঞাসা করা; যদিও নাম জানা না জানার সঙ্গে চিকিৎসার কোন সম্পর্ক নেই। এর কারণ আল্লাহ পিতৃপরিচয়ে ডাকতে নির্দেশ করে কিন্তু শয়তান বিপরীত দিকে আহ্বান করে। কুরআনে বর্নিত –
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।”
সূরা আহযাব-৫
২. রোগীর শরীরের সাথে লেগে থাকে এমন কোন জিনিস তলব করা। যেমন: গেঞ্জি, জামা ইত্যাদি। হয়তো জ্বিনজাতি ঘ্রান শুনে বুঝতে পারে কার উপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে।
৩. কখনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পশু-পাখী তলব করা। যেমন: কালো বা লাল রঙের মুরগী বা খাশী ইত্যাদি, যা জিনের জন্য জবাই করে। আবার কখনো সে পশুর রক্ত দ্বারা রোগীর শরীর রঞ্জিত করে।
৪. জাদু মন্ত্র লেখা বা পড়া যা বুঝা যায় না এবং যার কোন অর্থও নেই। অনেক সময় ওরা কুরআনের কিছু সুরা উচ্চস্বরে পড়ে আর নিচুস্বরে কুফরী বাক্য পড়ে। অথচ – এটা যদি ইসলামী বিদ্যা কুরআনের আয়াত দ্বারা করা হয় তাহলে গোপনীয়তার কি প্রয়োজন!!! এই বিদ্যা মুসলিমদের শিখানো উচিত ছিল। ইসলাম মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। তা প্রচার ও প্রসার হতে এসেছে গোপন থাকতে নয়।
৫. রোগীকে চতুর্ভুজ দাগ কাটা কাগজের ভিতরে বিভিন্ন অক্ষর ও নম্বর লিখা পেপার দেওয়া।
৬. রোগীকে নির্দিষ্ট সময় ধরে মানুষ থেকে দূরে অন্ধকার ঘরে একাকী থাকতে বলা। একাকী থাকলে ভয়ের সৃষ্টি হয় ফলে জ্বিন শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৭. রোগীকে নির্দিষ্ট সময় ধরে পানি স্পর্শ করতে বারণ করা। আল্লাহ পবিত্রতা পছন্দ করে আর শয়তান অপবিত্র থাকতে পছন্দ করে। তাই কিছু জ্বিন টয়লেট, নালায় থাকে।
৮. রোগীকে কিছু দিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখতে নির্দেশ করা।
৯. রোগীকে নির্দিষ্ট কোন পেপার দিয়ে তা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া গ্রহণ করতে বলা।
১০. রোগীর কথা বলার বা শুনার পূর্বে তার কিছু বৈশিষ্ট্য বলা, যা কেউ জানে না অথবা তার নাম, শহর ও রোগের কথা বলা। এগুলো ক্বারিন জ্বিন দ্বারা করা হয়।
১১. অনেক সময় ওরা জাদুর জন্য এতিম ইদুর, বৃদ্ধ মাছ ইত্যাদি চায়। আসলে এগুলো এজন্য কারণ মানুষ কিভাবে বুঝবে ইদুরটা এতিম, মাছটা দীর্ঘজীবি। ফলে ওরা খোনার, তান্ত্রিকের পরামর্শ চাইবে – সে অধিক টাকার বিনিময়ে যেকোন ইদুর এনে বলবে এটা এতিম ইদুর। মরক্কোয় ব্ল্যাক ম্যাজিকের জন্য প্রকাশ্যে এসব পশু আজও বেচাকেনা হয়।
১২. অনেক সময় ওরা সাহায্যপ্রার্থীকে মৃত ব্যক্তির কবর খুড়ে কাফন নিয়ে আসতে বলে। এই ব্যাপারে অনেকের ধারণা – মানুষ মরার পরও তার সঙ্গী জ্বিন জীবিত থাকে। পুড়িয়ে ফেললে এই জ্বিন শক্তিশালী হয়, দাফন করলে সেও বন্দী হয়। যখন কাফনের জন্য কবর খুড়া হয় তখন সে মুক্তি পেয়ে মৃত ব্যক্তির ছদ্মবেশ ধরে ভয় ও ফেতনা ছড়ায়। আল্লাহ ভালো জানেন।
আর ওরা সবচেয়ে বড় ধোকা দেয় নিঃসন্তানকে সন্তান দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে। অথচ কুরআন সুস্পষ্ট জানায় ইব্রাহিম (আঃ) ও জাকারিয়া (আঃ) দীর্ঘদিন সন্তানহীন ছিলেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাদের সন্তান দেন। যেখানে নবীরা নিজ সন্তান হওয়ার গ্যারান্টি পাননি সেখানে তারা কিভাবে সন্তানের গ্যারান্টি দেয়। এটা আল্লাহ ইখতিয়ার তিনি কাকে কখন সন্তান দিবেন।