● রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমার উম্মতের ধ্বংস রয়েছে যুদ্ধ ও প্লেগ রোগে; আর তা হল জ্বিন জাতির তোমাদের দুশমনদের খোঁচা। আর উভয়ের মধ্যেই রয়েছে শহীদের মর্যাদা।” (মুসনাদে আহমাদ, হাকেম/১৯৫২৮, ত্বাবারানী)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, “প্লেগ রোগ হল জ্বিন জাতির তোমাদের দুশমনদের খোঁচা। আর তা হল তোমাদের জন্য শহীদী মরণ।″ (হাকেম)।
মহামারীতে মুমিনের মৃত্যু হলে সে শহীদ হিসেবে গণ্য হয়। আর মানব শয়তান ও জ্বিন শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও শাহাদাতের মর্যাদা পায়।
যুদ্ধনীতি
শয়তান তার মানুষদের সাথে সলাপরামর্শ বা ধোকায় ফেলে মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রচারনা করে। শয়তান তার বন্ধুবান্ধবকে উৎসাহিত ও উত্তেজিত করে, যাতে তারা মু’মিনদেরকে মানসিক ও শারীরিক কষ্ট প্রদান করে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“এই গোপন পরামর্শ তো শয়তানেরই প্ররোচনা, যাতে বিশ্বাসীরা দুঃখ পায়। তবে আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শয়তান তাদের সামান্যতমও ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়। আর বিশ্বাসীদের কর্তব্য আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।”
সূরা আল মুজাদালাহ-৫৮:১০
তার বন্ধুবান্ধবদের গোপন পরামর্শ, গোপন বৈঠক ও সভা-সমাবেশ মুসলিমদেরকে চিন্তিত ও দুঃখিত করে। বরং সে চায় তার বন্ধুবান্ধবরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক। সুতরাং তাদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। যুদ্ধ বাধিয়েও দেয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা অবিশ্বাসী তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। নিশ্চয় শয়তানের কৌশল দুর্বল।”
সূরা আন নিসা-৪:৭৬
সে সর্বদা মু’মিনদেরকে তার বন্ধুবান্ধবের ভয় দেখায়। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা, পার্থিব আয়-উন্নতি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ভয় দেখায়। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ঐ (বক্তা) তো শয়তান; যে (তোমাদেরকে) তার (কাফের) বন্ধুদের ভয় দেখায়; সুতরাং যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তাহলে তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় কর।”
সূরা আলে ইমরান-৩: ১৭৫
“আর স্মরণ কর, যখন শয়তান তাদের জন্য তাদের কার্যাবলীকে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের উপর বিজয় অর্জনকারী নেই, আর নিশ্চয় আমি তোমাদের পাশে অবস্থানকারী। অতঃপর দুদল যখন পরস্পর দৃশ্যমান হল তখন সে পিছনে সরে পড়ল এবং বলল, নিশ্চয় আমি তোমাদের থেকে সম্পর্কমুক্ত, নিশ্চয় আমি এমন কিছু দেখছি যা তোমরা দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমি আল্লাহ্কে ভয় করি, আর আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।”
সুরা আনফল
● আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, মক্কার কুরাইশ বাহিনী যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়, তখন তাদের মনে এমন এক আশংকা চেপে ছিল যে, আমাদের প্রতিবেশী বনু-বকর গোত্রও আমাদের শত্রু; আমরা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে চলে গেলে সেই সুযোগে শত্রু গোত্র না আবার আমাদের বাড়ী-ঘর এবং নারী-শিশুদের উপর হামলা করে বসে। সুতরাং কাফেলার নেতা আবু সুফিয়ানের ভয়ার্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ী থেকে তারা বেরিয়ে গেল বটে, কিন্তু মনের এ আশংকা তাদের পায়ের বেড়ী হয়ে রইল। এমনি সময়ে শয়তান সোরাকাহ ইবন মালেকের রূপে এমনভাবে সামনে এসে উপস্থিত হল যে, তার হাতে রয়েছে একটি পতাকা আর তার সাথে রয়েছে বীর সৈনিকদের একটি খণ্ড দল। সুরাকাহ ইবন মালিক ছিল সে এলাকার এবং গোত্রের বড় সর্দার।
কুরাইশদের মনে তারই আক্রমণের আশংকা ছিল। সে এগিয়ে গিয়ে কুরাইশ জওয়ানদের বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক ভাষণ দিয়ে বলল, আজকের দিনে এমন কেউ নেই যারা তোমাদের উপর জয়লাভ করতে পারে। আর বনূ-বকর প্রভৃতি গোত্রের ব্যাপারে তোমাদের মনে যে আশংকা চেপে আছে যে, তোমাদের অবর্তমানে তারা মক্কা আক্রমণ করে বসবে, তার দায়-দায়িত্ব আমি নিয়ে নিচ্ছি। আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। [তাবারী]
মক্কার কুরাইশরা সুরাকাহ ইবন মালেক এবং তার বিরাট ব্যক্তিত্ব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সম্পর্কে পূর্ব থেকেই অবগত ছিল। কাজেই তার বক্তব্য শোনামাত্র তাদের মন বসে গেল এবং বনু-বকর গোত্রের আক্রমণাশংকা মুক্ত হয়ে মুসলিমদের মোকাবেলায় উদ্বুদ্ধ হল। এ দ্বিবিধ প্রতারণার মাধ্যমে শয়তান তাদেরকে নিজেদের বধ্যভূমির দিকে দাবড়ে দিল।
কিন্তু যখন মক্কার মুশরিক ও মুসলিম উভয় দল (বদর প্রাঙ্গণে) সম্মুখ সমরে লিপ্ত হল, তখন শয়তান পিছন ফিরে পালিয়ে গেল। বদর যুদ্ধে যেহেতু মক্কার মুশরিকদের সহায়তায় একটি শয়তানী বাহিনীও এসে উপস্থিত হয়েছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাআলা তাদের মোকাবেলায় জিবরীল ও মিকাঈল আলাইহিমাস সালাম-এর নেতৃত্বে ফিরিশতাদের বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন।
● ইমাম ইবন জরীর আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-এর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, শয়তান যখন সুরাকাহ ইবন মালেকের রূপে স্বীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন সে জিবরীল-আমীন এবং তার সাথী ফিরিশতা বাহিনী দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। সে সময় তার হাত এক কুরাইশী যুবক হারেস ইবন হিশামের হাতে ধরা ছিল।
সঙ্গে সঙ্গে সে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে চাইল। হারেস তিরস্কার করে বললঃ এ কি করছ? তখন সে বুকের উপর এক প্রবল ঘা মেরে হারেসকে ফেলে দিল এবং নিজের বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেল। হারেস তাকে সোরাকাহ মনে করে বললঃ হে আরব সর্দার সোরাকাহ! তুমি তো বলেছিলে আমি তোমাদের সমর্থনে রয়েছি। অথচ ঠিক যুদ্ধের ময়দানে এমন আচরণ করছ! তখন শয়তান সুরাকাহর বেশেই উত্তর দিল, আমি কৃত চুক্তি থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছি। কারণ, আমি এমন জিনিস দেখছি যা তোমাদের চোখ দেখতে পায় না। অর্থাৎ ফিরিশতা বাহিনী। আর আমি আল্লাহকে ভয় করি। কাজেই তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছি। [তাবারী]
শয়তান যখন ফিরিশতা বাহিনী দেখতে পেল এবং সে যেহেতু তাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত ছিল, তখন বুঝল যে, এবার আর পরিত্রাণ নেই। শয়তানের বাহিনী যুদ্ধে নেমেছিল আর আল্লাহ মালাইকাদের নামিয়েছিলেন, এভাবে আল্লাহ শয়তানের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন। আজও হয়তো কোন শক্তিধর নেতার বেশে এসে শয়তান যুদ্ধবিগ্রহ ছড়াচ্ছে।
রোগ
অনেক আলেমের মতে- আল্লাহর নবী আইয়ূব (আঃ) এর যে ব্যাধি হয়েছিল, তা আসলে ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে তা অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছায়। আল্লাহ আইয়ুব (আঃ)-এর সবরের উদাহরণ রেখে গেছেন- যে আল্লাহর উপর ভরসা সবর করবে শয়তানের কুমন্ত্রণা তার ক্ষতি করতে পারবে না।
রোগ ও ক্ষতি
মহান আল্লাহ বলেছেন,
“স্মরণ কর, আমার দাস আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে।”
সূরা সোয়া-দ-৩৮/ ৪১ . আবূ দাউদ . হা/২৮৭, তিরমিযী, হা/১২৮, মিশকাত হা/৫৬১
মহিলাদের মাসিক যথানিয়মে প্রত্যেক মাসে একবার করে আসে। কিন্তু কোন কোন সময় তা নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করে এবং অতিরিক্ত খুন আসতে থাকে। শরয়ী পরিভাষায় একে ‘ইস্তিহাযাহ’ বলে। এটা একটা স্ত্রীরোগ। এ রোগ সৃষ্টি করে শয়তান।
● নবী (সা) হামনা বিনতে জাহাশকে বলেছিলেন, “এ হল আসলে শয়তানের (লাথি) পদাঘাতের পরিণাম।” (আবূ দাউদ. হা/২৮৭, তিরমিযী, হা/১২৮, মিশকাত হা/৫৬১)।
তাই শয়তান হতে বাচার জন্য প্রয়োজনীয় দোয়া ও ব্যবস্হা নেওয়া প্রয়োজন।
● রাসূল (সা) বলেন, “(রাত্রে ঘুমাবার আগে) তোমরা পাত্র ঢেকে দাও, পানির মশকের মুখ বেঁধে দাও, দরজা বন্ধ করে দাও, প্রদীপ নিভিয়ে দাও। কেননা, শয়তান মুখ বাঁধা মশক খুলে না, বন্ধ দরজাও খুলে না এবং পাত্রের ঢাকনাও উন্মুক্ত করে না। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি পাত্রের মুখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আড় করে রাখার জন্য কেবল একটি কাষ্ঠখন্ড ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তাহলে সে যেন তাই করে। কারণ ইঁদুর ঘরের লোকজনসহ ঘর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।” (মুসলিম -৫৩৬৪)।
অন্য এক বর্ণনায় আছে,
● রাসূল (সা) বলেন, “যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে, তখন বাতিগুলো নিভিয়ে দিয়ো। কারণ শয়তান (ইঁদুর) এর মতো কিছুকে (বাতি) এর প্রতি পথনির্দেশ করে তোমাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলবে। (আবূ দাউদ -৫২৪৯)