যুগে যুগে জালেম ও ইসলামের শত্রুরা মুসলিম ও ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু বরাবরই ইসলাম ও মুমিনদের বিজয় হয়েছে। নূহ (আ), ইব্রাহিম (আ) হতে শুরু করে রসুল (সা) পর্যন্ত জালেমদের ষড়যন্ত্রের মেকাবেলায় আল্লাহর পরিকল্পনাই বিজয় লাভ করেছে।
আল্লাহ সবকিছু জানেন তারাই ষড়যন্ত্র করবে এর জন্য মহাপরিকল্পনা রেখেছেন, ওদের ষড়যন্ত্র ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু অবাক লাগে – আমাদের অনেক আলেমরা শেষ জমানা ও বিশ্ব পরিস্থিতির বর্ননা দিতে গিয়ে এমন কিছু প্রচার করছে যা হাদীসের বিপরীত। বিশ্বে ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার ষড়যন্ত্র চলছে, ওরা যা চায় তাই হয়। গ্রেটার ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা হবে, থার্ড টেম্পল হবে। দাজ্জাল জেরুজালেম হতে বিশ্ব শাসন করবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ মালহামা দুটোই এক করে ফেলছে।
আসুন কুরআন সুন্নাহ ও বাস্তবতার আলোকে কথাগুলো মেলাই
আল্লাহ বলেন-
মহিমান্বিত সেই সত্তা, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত। তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’
সুরা: মুলক, আয়াত: ১
কাফেররা চাইলে যা খুশি করতে পারে না বরং বিশ্বক্ষমতা আল্লাহর নিকট, তিনি যা চান তাই হয়। তিনি সাময়িকভাবে কাফেরদের ছেড়ে দিলেও তাদের জন্য রয়েছে চূড়ান্ত শাস্তি জাহান্নাম। অপরদিকে মুমিনদের বিপদ-আপদ দিয়ে পাপ মুক্ত করেন বা পরীক্ষা করেন এরপর চিরস্থায়ী জান্নাত দিবেন। সর্বক্ষেত্রে মুমিনরাই বিজয়ী। আমরা আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ঠুরতা দেখছি- নিরীহ নারী, শিশু মারা যাচ্ছে কিন্তু আল্লাহ তাদের জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করছেন। অপরদিকে ইসলামের শত্রুরা ওদের হত্যা করে জাহান্নামের শাস্তি বাড়াচ্ছে। তবে চিন্তার বিষয় – মুসলিম উম্মাহর দুর্ভোগের সময় আমরা কি ভূমিকা রাখছি, আল্লাহর নিকট কি হিসাব দিবেন।
কাফেরদের পরিকল্পনা মত যদি বিশ্ব চলত- মহামারীতে তারা কেন বেশি মরে, আফগান, ভিয়েতনামের মত ছোটদেশগুলোতে কেন তাদের পরাজয় হয়!?
আল্লাহ বলেন-
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমক্ষে তোমরা কোন বিষয়ে অগ্রণী হয়ো না আর তোমরা আল্লাহ্র তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
সুরা হুজরাত
আল্লাহ আমাদের শেষ জমানা সম্পর্কে রসুলের (সা) হাদীসে ভবিষ্যৎবানী করেছেন এর বিপরীত কোন বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।
গ্রেটার ইসরায়েল ও থার্ড টেম্পল কি হবে বা দাজ্জাল কি জেরুজালেম হতে বিশ্ব শাসন (ওয়ান ওয়াল্ড অর্ডার) করবে?
বিগত ১৪০০ বছর ধরে পৃথিবীতে কখনও ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা হয়নি তা কেবল তখনই হবে যখন ঈসা (আ) জেরুজালেম হতে বিশ্ব শাসন করবে। যখনই রোম, পারস্য শক্তি ছিল – তাদের প্রতিরোধে মুসলিম বাহিনী এসেছে। চেঙ্গিস খান ও কাফেরদের হতে আল আকসা বিজয় করেছে মুসলিমরা। কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমদের একটা দল হক্বের উপর অটল থাকবে।
জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ
কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মাতের একদল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে কিতাল করতে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন। মুসলমানদের আমীর বলবেনঃ আসুন, সালাতে আমাদের ইমামত করুন। তিনি উত্তর দিবেনঃ না, আপনাদেরই একজন অন্যদের জন্য ইমাম নিযুক্ত হবেন। এ হল আল্লাহর প্রদত্ত এ উম্মাতের সম্মান। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ২৯২)
ইসলামের শত্রুরা ষড়যন্ত্র গ্রেটার ইসরায়েল, থার্ড টেম্পল যা করুক আল্লাহ তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করবেন।
একটু চিন্তা করুন – বিশ্ব কি এক শাসন ব্যবস্হার দিকে যাচ্ছে না সংঘাতের দিকে? রাশিয়া, ইরান, চীন কি আমেরিকার কথামতো চলে নাকি এর বিপরীত!? বরং খোরাসান বা পূর্বদিক হতে বাহিনী (খোরাসানের হাদীস দুর্বল হলেও পূর্বদিকের হাদীসটা শক্তিশালী) এসে জেরুজালেম বিজয় করবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে।
আবদুল্লাহ ইবনু হাওয়ালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এ গনীমতের সম্পদ লাভ করার জন্য আমাদেরকে পদাতিক বাহিনী হিসেবে এক অভিযানে পাঠালেন।
আমরা এমন অবস্থায় ফিরে আসলাম যে, আমরা গনীমতের কিছুই লাভ করতে পারিনি। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তি ও দুর্বলতার ছাপ দেখতে পেয়ে আমাদের মাঝে (বক্তৃতার উদ্দেশ্যে) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তাদের দায়িত্ব এভাবে আমার ওপর অর্পণ করো না যে, আমি তাদের পক্ষ হতে তা বহন করতে দুর্বল হয়ে পড়ি।
(হে আল্লাহ!) তাদের ওপর এমন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করো না যা সমাধা করতে তারা অক্ষম হয়ে পড়ে। (হে আল্লাহ!) তাদেরকে অন্য লোকের ওপরও অর্পণ করো না। কেননা তারা নিজেদের প্রয়োজনকে তাদের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দেবে।
বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সা.) আমার মাথার উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, হে ইবনু হাওয়ালাহ্! যখন তুমি দেখবে খিলাফাত (মদীনাহ্ হতে স্থানান্তরিত হয়ে) পবিত্র ভূমিতে (বায়তুল মাকদিস) পৌছে গেছে, তখন তুমি বুঝে নিবে যে, ভূমিকম্প, দুঃখ-দুর্দশা, বড় বড় নিদর্শনসমূহ ও ফিতনা-ফাসাদ খুবই কাছে এসে গেছে এবং আমার এই হাত তোমার মাথা থেকে যত নিকটে, কিয়ামত সেদিন এটা অপেক্ষাও অতি কাছাকাছি হবে। (সহীহ: আবু দাউদ ২৫৩৫)।
এগুলো নিয়ে পূর্বে পোস্ট আছে – জেরুজালেম বিজয় দাজ্জাল আসার আগে হবে অর্থাৎ ইসলামের শত্রুদের পরিকল্পনা আল্লাহ ব্যর্থ করবেন। আবার রোমের জালেমরা একত্রিত হবে – আমাক বা দাবিকে মালহামায় চিরতরে মুসলিমদের ধ্বংস করতে। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে মুসলিমদের বিজয় দিবেন। (মুসলিম শরীফ)
অনেকে মালহামা ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে একত্রিত করেন! ১ম, ২য়, ৩য় বিশ্বযুদ্ধ কাফেরদের দেওয়া নাম। ২য় যুদ্ধে ওদের লোকসংখ্যা বেশি মরেছে তাই তারা একে বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছে!? অথচ গত কয়েক বছরে লাখো মুসলিম হত্যা হয়েছে তারা বিশ্বযুদ্ধ নাম দেয়নি। ইসলামে মালহামা হল – মুসলিমদের সাথে কাফেরদের যুদ্ধ তা স্বল্পমেয়াদী হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন-
“মানুষের (মাঝে) মালহামাহ (তথা মহাযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটবে) পাঁচটি। দুটো ইতিপূর্বে (আগের উম্মতদের মধ্যে) ঘটে গেছে। আর (বাকি) তিনটি (ঘটবে) এই উম্মতের মধ্যে। (১) মালহামতুত-তুরক, (২) মালহামতুর-রূম, এবং (৩) দাজ্জাল (-এর সাথে ঘটিত মালহামাহ/মহাযুদ্ধ)। দাজ্জালের পরে আর কোনো মালহামাহ নেই।” [আল-ফিতান, ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ-)
আমাদের মালহামা ও মালাহীম পোস্টে বিস্তারিত পাবেন।
আর মালাহামা হবে রোমের সাথে তারা ৮০ টা পতাকাতলে জড়ো হবে সিরিয়ার আমাক বা দাবিকে। এরপর ইস্তাম্বুল বিজয় হলে দাজ্জাল বের হবে। আর দাজ্জালের সাথে ইহুদিরা যোগ দিবে যারা হবে ইরানের ইস্পাহানের তারাও পুরো বিশ্বশাসন করতে পারবে না এমনকি – মক্কা মদীনাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসরণ করবে।
আনাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আসফাহানের (ইরানের একটি প্রসিদ্ধ শহরে) ৭০ হাজার ইহুদি দাজ্জালের অনুসরণ করবে; তাদের কাঁধে থাকবে ত্বাইলেসি রুমাল।’ (রিয়াদুস সালেহিন-৫/১৮২১, আহমাদ-১২৯৩১, সহীহ মুসলিম ৭১২৫)
দাজ্জালের নেতৃত্বে তাদের পরিকল্পনা ইসলাম ও মুসলিমদের সমূলে শেষ করতে পবিত্রভূমি শামে আসবে – উল্টো আল্লাহ ঈসাকে (আ:) দিয়ে তাদের ধ্বংস করবেন।
দাজ্জাল জেরুজালেমের নিকটবর্তী হলে ঈসা (আ) আসবেন তখন মুসলিমরা বায়তুল আকসায় থাকবে (তার মানে তখনও মুসলিমদের দখলে থাকবে) এবং লূদে দাজ্জালকে হত্যা করবে।
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না রোমান সেনাবাহিনী ’আমাক’ অথবা ’দাবিক’ নগরীতে অবতরণ করবে। তখন তাদের মুকাবিলায় মদীনা হতে এ পৃথিবীর সর্বোত্তম মানুষের এক দল সৈন্য বের হবে। অতঃপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হবার পর রোমানরা বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকদের পৃথক করে দাও, যারা আমাদের লোকদের মধ্যে যাদের বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে লড়াই করবো।
তখন মুসলিমগণ বলবে, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের ভাইদের থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হবো না। অবশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পালিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা কখনো তাদের তাওবা কবুল করবেন না। সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে আল্লাহর নিকট শহীদানের মাঝে সর্বোত্তম শহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজিয়ী হবে। জীবনে আর কখনো তারা ফিতনায় আক্রান্ত হবে না। তারাই ইস্তাম্বুল জয় করবে। তারা নিজেদের তরবারী যায়তুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ বন্টন করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তাদের মধ্যে শয়তান চিৎকার করে বলতে থাকবে- দাজ্জাল তোমাদের পেছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে।
এ কথা শুনে মুসলিমরা সেখান থেকে বের হবে। অথচ এটি মিথ্যা খবর। তারা যখন সিরিয়া পৌছবে তখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হতে শুরু করবে তখন সালাতের সময় হবে।
অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) অবতরণ করবেন এবং সালাতে তাদের ইমামত করবেন। আল্লাহর শত্রু তাকে দেখামাত্রই বিগলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। যদি ঈসা (আলাইহিস সালাম) কাউকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী
তাহলে থার্ড টেম্পল কিভাবে প্রতিষ্ঠা হবে!
ইয়াজুজ-মাজুজ ষড়যন্ত্র করবে মুসলিম ও মানবজাতিকে ধ্বংস করার কিন্তু আল্লাহ তাদের রোগ দ্বারা ধ্বংস করবেন এবং সারাবিশ্বে ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা এক নীতির শাসন চলবে সেটাই হল দ্বীন ইসলামের। (মুসলিম শরীফ- ফেতনাসমূহ ও কেয়ামতের নির্দেশনাবলী অধ্যায়ে এই বিষয়ে হাদীস পাবেন)
আল্লাহ মুমিনকে কখনও একলা ছাড়েন না। কখনও শাহাদাতের বিজয়, কখনও বিপদ, আপদ দ্বারা পরীক্ষা বা পাপমুক্ত করেন অথবা কখনও দ্বীন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার শক্তি দিয়ে বিজয়ী করেন। তাই জালেম যতই ষড়যন্ত্র করুক তা ধ্বংস হবেই সুনিশ্চিত ।
আমাদের উচিত ওদের ষড়যন্ত্র ভয় না করে দ্বীনের পথে অটল থেকে জান্নাত নিশ্চিত করা। কুরআন ও রসুলের (সা) হাদীসে কাফেরদের ভীতি নয় বরং জাহান্নামের ভীতি ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। সাহাবীরা জাহান্নাম হতে মুক্তির সংগ্রাম ও জান্নাত পাবার একান্ত আশা আল্লাহর নিকট রাখতেন – তাই তারা বিজয়ী ছিলেন আর উম্মাহর জন্য তাদের জীবনী প্রকৃত অনুসরণীয়।