কথায় কথায় খারে-জী বলা লোকগুলোর মাঝে আজ খারে-জীর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। খা-রেজীর একটা বৈশিষ্ট্য মুশরিকদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকবে অথচ মুমিনদের ব্যাপারে কঠোর। প্রকৃত খেলাফাহর শাসনের বিরোধিতা করবে আর নিজেদের মনমতো শাসনকে কুরআনের ব্যাখা দিয়ে ইসলামী শাসন দাবি করবে। আলী (রা:), হাসান (রা:) এর প্রকৃত খেলাফাহর শাসনব্যবস্থার শত্রুতায় লিপ্ত ছিল খারে-জীরা। আর তারা কুরআনের আয়াতকে ভুল ব্যাখা করে মুমিনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, আঘাত ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করবে।
আজ ক্ষমতার লোভে, ফাঁদে একদল যখন মুশ-রিকদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় নীতি পালন ও উৎসাহ দিচ্ছে অন্যদিকে মুমিনরা তাদেরকে সতর্ক করে তওবার আহ্বান করছে।
ওরা তওবা না করে উল্টো মুমিনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হু-মকি দেয় অথচ নাস্তিক, ইসলাম বিরোধী শত্রুদের রক্ষায় তারা সদা সজাগ থাকে। কিছু মুশরিকরা বহু ষড়যন্ত্র করলেও তারা উদারনীতির নামে চুপ থাকে। ভাই, গাধা যত জোরেই ডাকুক, তার ডাকে বাঘ কি ভয় পায় নাকি বাঘের ডাকে গাধা ভয় পায়?
আল্লাহ বলেন-
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি, তারা গাধার মত! যে বহু পুস্তক বহন করে। কত নিকৃষ্ট সে সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত যারা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে! আর আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা জুমাআ-৫)
বনী ইসরায়েল জাতির যাদের কাছে তাওরাতের ইলম ছিল, সেই অনুযায়ী তারা সত্য প্রচার করেনি, সঠিক পথপ্রদর্শন করেনি বরং নিজেদের সুবিধা হাসিলের জন্য প্রয়োজনমত কিতাবের ব্যাখা করেছে।
তাওরাতের ইলম অর্জনের কারনে অন্যদের চেয়ে তাদের নিকট অতি সহজ ছিল রসুলকে (সাঃ) চেনা। তাদের উচিত ছিল রসুলের (সা:) পথে সাহায্য করা এবং রসুল (সা:) আসার পূর্বে তাদের অনেককে স্বপ্ন দেখাত – আহম্মদ (সা:) আসলে তাদের বিজয়ের পথ সুগম হবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন মিথ্যা প্রচার, নিজেদের স্বার্থে দ্বীনকে অপব্যাখার কারনে যখন রসুল (সা:) তাদের এসব রীতিনীতির বিরুদ্ধাচারন করলো তারা রসুলের (সা:) নবুওয়তকে অস্বীকার করলো এবং বিরোধিতা ও শত্রুতায় সবচেয়ে কঠোর হলো।
আজ যারা নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে ইসলামের ভুল ব্যাখা করছেন আর ইস-লামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আর খলিফা মাহাদীর (হাফি) নেতৃত্বে বিজয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন! মাহাদী (হাফি:) আসলে যখন তাদের এসব নিয়মনীতির বিরোধিতা করবে তখন ওরাই তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর শত্রুতায় লিপ্ত হবে।
ওদের জাহেলিয়াত ও ধোকার মধ্যে অন্যতম হল দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য হারাম মানা যায়, যেমন হালাল না থাকলে হারাম খেয়ে জীবন রক্ষা করা যায়।
প্রথম কথা, এই যুক্তি অবান্তর। হারাম কখনও জায়েজ ধরলেও কিন্তু যে বিষ খেলে সাথে সাথে মারা যাবে তা নাজায়েজ। ক্ষুধার কষ্টে কেউ হারাম খেল, কিন্তু ক্ষুধা হতে বাচাতে কেউ জেনেশুনে বিষ খেলে আত্মহত্যা হবে, বাচবে না উল্টো দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বরং জীবন বাচাতে খাদ্য জোগাড়ের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, না ফেলে যতটুকু হারাম খেয়ে জীবন বাচে ততটুকু করা যাবে।
তেমনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা না হলে ঈমান বাচিয়ে প্রচেষ্টা চালাতে হবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার যদিও অনেক হারাম হতে পুরাপুরি মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন- রসুল (সা:) মক্কা বিজয়ের পর রাষ্ট্র হতে সুদের লেনদেন নিষিদ্ধ করেন। আজও সমাজে সুদ ও তার ধোয়া ছড়িয়ে আছে – যতদিন না ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না পায় তা হতে মুক্ত হওয়া সম্পূর্ণ সম্ভব নয়।
তেমনি মানবরচিত কুফর, শির্ক নীতি দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ওরাই নিজেদের ইহকাল, পরকাল ধ্বংস করছে। ইসলাম ও মুসলিমদের কোন কল্যান হচ্ছেই না বরং নিজেদের নীতিতে অটল থাকতে গিয়ে ইসলাম, মুমিনদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হচ্ছে।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- কবরের প্রশ্ন হবে তোমার রব কে? দ্বীন কি? নবী কে? বা কার সুন্নাহ মেনেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারবে যারা রসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ অনুযায়ী দ্বীন মেনেছে।
আর তথাকথিত গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আল্লাহকে একমাত্র রব, বিধানদাতা, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে অস্বীকার করে। জনগনকে মানে বিধানদাতা ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক।
কোরআন বলছে,
‘গোটা পৃথিবীর একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২৮)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেকে ‘মালিকুল মুলক’ নামে অভিহিত করেছেন। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২৬)। যার অর্থ হয়েছে ‘সার্বভৌম শক্তির মালিক’। সুতরাং সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই।
ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন আর গনতন্ত্র নিজেই ভিন্ন দ্বীন যা পরিবর্তনশীল। তারা নিজ প্রয়োজনে কতবার গনতান্ত্রিক সংবিধান পরিবর্তন করে। আগে যেটা ভালো ছিল পরে মন্দ মনে হয় এবং আগে যেটা মন্দ ছিল তা আবার ভালো হয়ে যায়।
আর কুরআনের আইন অপরিবর্তনশীল।
আর আপনি রসুলের (সা:) সুন্নাহ অনুসরণ করছেন কিনা সেটা জিজ্ঞেস করা হবে। তার জন্য সেই সুন্নাহ অনুযায়ী ব্যক্তি জীবন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা অনুযায়ী জান্নাতের ফলাফল হবে – যদি রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলেও বিজয়। যদি উম্মতকে জাগাতে শহীদ হোন তাও উত্তম বিজয়। যার বিনিময়ে রয়েছে উত্তম জান্নাত। আবার জালেমের নিয়মনীতির বিরোধিতা করে শহীদ হলেও উত্তম শহীদ। সুতরাং সর্বক্ষেত্রে বিজয় মুমিনের আর ধ্বংস অবিশ্বাসীদের।
হামজা (রা), মুসাইব ইবনে ওমর (রা), হুসাইন (রা) আজও উম্মাহর জন্য আদর্শ।
আর গনতন্ত্র রসুলের সুন্নাহর বিপরীত তাগুতদের অনুসরণ করতে আহ্বান করে। আপনি তাগুত স্বীকার করা ব্যতীত গনতন্ত্র নির্বাচন করতেই পারবেন না। আর তাগুত অস্বীকার ঈমানের শর্ত।
আল্লাহ বলেন-
আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে এ মর্মে রাসুল পাঠিয়েছি যে তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো ও ‘তাগুত’ বর্জন করো। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক মানুষকে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং কিছুসংখ্যকের জন্য বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, মিথ্যা আরোপকারীদের কী পরিণতি হয়েছিল। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৩৬)