আজকাল একদল আলেম আছে সামান্য মাসায়ালাগত মতবিরোধ হলে খারেজী বলা শুরু করে। একদল আরেক দলকে খারেজী বলে চলছে হাদীসের ভুল ব্যাখা করে। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ায় খারেজীদের নিয়ে একটা অধ্যায় আছে। খারেজীরা মোট ১৯-২০ বার আসবে, শেষ দল দাজ্জালের সাথে যোগ দিবে। প্রথম দলটা আলী (রাঃ) এর সময় প্রকাশিত হয়। উমাইয়া সাম্রাজ্যের সময় ওদের ইরাক হতে উচ্ছেদ করা হলে ওরা ইয়েমেনের হাদরামাউতে চলে যায়।আজও ইয়েমেন, তানজানিয়ার অনেকে একই আকীদা রাখে। ওদের বৈশিষ্ট্য হল – ওরা উসমান (রা), আলী (রা), মুয়াবিয়া (রাঃ) কে কাফের বলতো অথচ হোসেন (রাঃ) কে হত্যার পর ইয়াজিদকে রাদিআল্লাহু বলতো। আলেমরা খারেজীদের বহুভাগে বিভক্ত করেছেন- আযারিক্বা, নাজদাত, ইবাদিয়া আরো অনেক। মোটকথা মাসায়ালাগত যত বিরোধই থাকুক কোন সুন্নীই খারেজী নয়। ওরা রসুল (সাঃ) এর সাহাবীদের (রাঃ) অবদান স্বীকার করে ও ভালোবাসে। আর খারেজী আগে হতে মুসলিম নামধারী হতে আসবে নওমুসলিমদের হতে খারেজী হবে না। এবার আসুন হাদীসের আলোকে খারেজীর হাদীসগুলো মিলিয়ে দেখি-
(১) তারা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, এই হাদীস নিয়ে আলেমরা ভুল ব্যাখা করে। তাহলে হোসাইন (রাঃ) ইয়াজিদের বিরুদ্ধে আর মুয়াবিয়া (রাঃ) আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তারাও নাউজুবিল্লাহ খারেজী হয়ে যায়। আসলে খারেজীদের সকল হাদীস মিলাতে হবে ২/১ টা নয়। আর খারেজীরা ন্যাড়া হবে তখন সকল হাজীকে খারেজী মনে হবে। আর এখানে মুসলিম শাসক বলতে বর্তমান মানবরচিত আইন অনুযায়ী শাসন করা শাসক নয়, বরং কুরআনের আইন অনুযায়ী শাসকের (খলীফা) বিপক্ষে যুদ্ধ করবে যেমনটা আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে করেছে।
(২) তারা সুরালো কুরআন পড়বে ও দীর্ঘ সালাতে মানুষকে ঈর্ষান্বিত করবে, মধুর কথা বলবে অথচ আমল বিপরীত, বয়সে নবীন হবে। এটাকে ভুল ব্যাখা করে যেকোন প্রান্তের মুসলিম মুজাহিদদের খারেজী বলে। আচ্ছা মুজাহিদ বা তথাকথিত মিডিয়ার জঙ্গিরা কি মধুর কথা বলে? কয়জন বা কয়টা কুরআন তেলাওয়েত তাদের শুনেছেন বা আছে? বরং তাদের কথা হল কঠোর ‘হয় মার নয় মর’। তারা লুকিয়ে সালাত পড়তে হয় যে দীর্ঘমেয়াদী সালাত দেখে ঈর্ষান্তিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
(৩) ন্যাড়া হবে তারা অথচ তারা দাড়ি, বাবরি চুলের অধিকারীদের খারেজী বলে। মুশরিকদের ছেড়ে মুসলিমদের হত্যা করবে এটা মিলান।
(৪) তারা মুসলিম শাসকদের নিন্দা করবে বা কাফের বলবে এটা কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী ইসলামী শাসনের কথা বলা হয়েছে।
(৫) তারা কুরআন, সুন্নাহের অপব্যাখা করবে মানে পূর্বসূরী সাহাবী, তাবেয়ীদের মত নয় নিজেদের মন মতো।
(৬) যেসব আয়াত কাফেরের জন্য তারা মুমিনের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করবে।
(৭) তাদের সবচেয়ে শত্রুতা হবে হক্বপন্হী আলেমদের সাথে। অথচ বেশিরভাগ যাদের খারেজী বলা হয় তাদের বিরোধ শাসকদের সাথে।
(৮) যতবার তাদের আবির্ভাব ঘটবে ততবার তারা ধ্বংস হবে আর শেষদল দাজ্জালের সঙ্গী হবে। তার মানে দাজ্জালের পতনের আগ পর্যন্ত খারেজী থাকবে, তারা হবে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি।
(৯) ওরা কবীরা গোনাহের কারণে কাফের, মুরতাদ বলবে এটার ভুল ব্যাখা করা হয়। শাসকদের কুফরী নিয়ে বললে একদল সবাইকে খারেজী আ্যাখা দেয়। অথচ ওরাই মাসায়ালগত কারণে অন্যকে কাফের, মুরতাদ বলে। মূলত কবীরা গোনাহের মধ্যে শিরক, কুফরও আছে সেজন্য কাদেয়ানী, নুসাইরিয়া, রাফেজী, আলাভী শিয়াদের ব্যাপারে সকল আলেমদের ইজমা ওরা কাফের, মুরতাদ বা জিন্দিক। রাফেজীদের যারা মুসলিম বলে প্রচার করে তারা কষ্ট করে উসুলুল কাফী বই pdf পড়ুন। ইউটিউবে ওদের কালেমা ও আযান শুনেন, সেখানে আলী ওলীউল্ল্যাহ লাগিয়ে কালেমা ও আযান বদলে দিয়েছে। তারা বলে চার সাহাবী ছাড়া সকল সাহাবী কাফের। তাদের মতে কুরআনের আয়াত ১৭ হাজার ও আবু বকর, উমর, উসমানসহ (রাঃ) কাফেরগণ তা নষ্ট করেছে, তাদের মাহাদী ইরাকের সামেরী গুহা হতে পূর্ণাঙ্গ কুরআন ফিরিয়ে আনবেন। তাদের আকিদা ঈমামগণ সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাশীল। আয়েশা (রাঃ) এর চরিত্র নিয়ে অপবাদ দেয়, সে হিসেবে তারা রসুলকে (সাঃ) দাইয়ুস প্রচার করছে। যেখানে ইব্রাহিম (আঃ) এর নির্দেশে ইসমাইল (আঃ) তার স্ত্রীকে তালাক দেন শোকরিয়া ছিলো না বলে সেখানে শ্রেষ্ঠ রসুল (সাঃ) এর স্ত্রী ও আমাদের মায়ের উপর অপবাদ দেওয়া। আর খলিফা মাহাদীর বিরুদ্ধে সেনা পাঠাবে শাম হতে যাদের অধিকাংশ হবে বনু কাল্বের সুফিয়ানীর নির্দেশে। রসুল (সাঃ) এর সাহাবী দাহিয়া ইবনে কাল্ববিয়া যার ছদ্মবেশ ধরে জিবরাইল (আঃ) আসতো, কাল্ব গোত্রের লোকই। সালমান ফারসী (রাঃ) কে দাস হিসেবে বিক্রি করেছিলো বনু কাল্ব গোত্রই। তাদের বসবাস সিরিয়ার লাটাকিয়ায়। বাশার আল আসাদ সে গোত্রের যদিও সে সুফিয়ানী নয়। সুফিয়ানী হবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান হতে, এজন্য তাকে সুফিয়ানী বলা হবে। তারা মুসলিমদের হত্যা করবে, রসুলের (সাঃ) বংশধররকে হত্যা করবে (আল ফিতান, মুসলিম কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়)। আর আমার কথা বিশ্বাস না হলে গালি না দিয়ে কষ্ট করে ঢাকার শিয়াদের মসজিদ হতে ওদের বই নিয়ে পড়ে দেখুন (উসুলুল কাফী- আল কুনাইনী ১/২৮৪, ১/২৮৫, ২/৬৩৪)। মূলত এখানে বলা হয়েছে শিরক, কুফর নয় এমন কবীরা গোনাহের কারণে খারেজীরা অন্যদের কাফের বলবে।
(১০) ওরা আরেকটা হাদীসের ভুল ব্যাখা করে খারেজীদের যেখানে পাও হত্যা করো। তাহলে এক আলেম আরেক আলেম, একদল আরেকদলকে খারেজী বলে হত্যা করবে, মুসলিম নিধনে কাফেরের আর দরকার কি!? আসলে এটাই ইসলামের শত্রুদের কৌশল ছিল। মূলত বলা হয়েছে – যখন ওদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে মেকাবিলা হবে তখন তাদের যেখানে পাবে সেখানে হত্যা করবে। আর আলী (রাঃ) মানা করেছেন যতক্ষণ না খারেজীরা নিজ হতে যুদ্ধ না করে ততক্ষণ তাদের সাথে যুদ্ধ না করতে। (হাদীসমূহ: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, বুখারী- ৩৬১০, ৭৪৩২, ৬৯৩০, ৭৫৬২, ৩৬১১, ৫০৫৭, মুসলিম – ১০৬৪, ২৪৬২, ২৪৬৯, আবু দাউদ ৪৭৬৭, ৪৭৬৫, আহমদ ২০৪৪৬, ১২৯৭২, ইবনু মাজাহ-১৫৭)। তাই আলেমদের মাঝে যত মাসায়ালাগত দ্বন্দ্ব থাক না কেন ওদের কেউ কেউ হয়তো মুনাফেকী, কুফরী করতে পারে তবু তাদের খারেজী বলে আ্যাখা দেওয়াটা ভুল এবং উম্মাহকে বিভক্ত করা হয়, বরং তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন। আলী (রাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) এর যুদ্ধ হয়েছিল মুনাফেকদের ষড়যন্ত্রে ভুল বুঝার কারণে, জেহাদের পর সবাই পরস্পর শ্রদ্ধাশীল ছিল। আর কোন মিডিয়ার উপর ভিত্তি করে একে অপরকে খারেজী বলছেন, যেখানে নিজদেশের খবরের সত্যটা যাচাই করা দায়। ইহুদিদের বড় ধর্মগুরু আবদুল্লাহ ইবনে সালেম (রাঃ) রসুলের (সাঃ) কাছে এসে মুসলিম হন। তিনি বললেন- ইহুদিরা মিথ্যাবাদী সম্প্রদায় আমি একজন আলেম পিতার আলেম সন্তান। তেমনিভাবে একজন রয়িস (নেতা) পিতার সন্তান। আপনি ইহুদিদের ডেকে আমার ঈমান আনার কথা গোপন রেখে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। রসুল (সাঃ) তাই করলো, ইহুদিরা বললো- তিনি (ইবনে সালেম রা) আমাদের রয়িসের ছেলে রয়িস, আলেমের ছেলে আলেম। রসুল (সাঃ) বললেন- সেকি ইসলাম গ্রহণ করতে পারে? তারা বললো – কক্ষনো না। রসুল (সাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে সালেমকে (রাঃ) লুকানো হতে বের হতে বললেন এবং ইবনে সালেম (রাঃ) জানালেন তিনি মুসলিম হয়েছেন। ইহুদিরা তখন বলল- তুমি ভন্ড, মিথ্যুক, বিশ্বাসঘাতক। তুমি আমাদের সম্প্রদায়ের একজন নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। তোমার বাবাও ছিল ইতর। (বুখারী, আসহাবে রসুল)।আজ তারা একই কাজ করে চলছে, যে লোকটা বা দেশ তাদের পক্ষে থাকে তাদের প্রশংসা করে মিডিয়ায় তাদের উঠায় কিন্তু তারা ধর্মান্তর বা ওদের বিপক্ষে বললে তখন সন্ত্রাসী, শান্তির শত্রু, নিকৃষ্ট ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। অপেক্ষা করুন আল্লাহ ফোরাতের লুকিয়ে থাকা স্বর্ণের পাহাড় বের করবেন তখন আড়ালে থাকা সব সত্য পরিষ্কার হয়ে যাবে কারণ মুমিনরা এই পাহাড়ের পিছে ছুটে যাবে না।