যুগ যুগ ধরে ইয়াজুজ-মাজুজ নিয়ে সত্য মিথ্যা মিশ্রিত লেখা ও বক্তব্য চলছে। উম্মাহর অনেকে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাচ্ছে না। কেউ এমনও প্রচার করেছে ইয়াজুজ-মাজুজ বের হয়ে গেছে, কেউ বলছে আমেরিকা-ইউরোপ-ইসরায়েল হচ্ছে ইয়াজুজ-মাজুজ। আবার কেউ বলছে চীন, যেহেতু ওদের সংখ্যা অসংখ্য তাই ওদের লুকিয়ে থাকা অসম্ভব। আর বর্তমানে স্যাটেলাটের কারণে সর্বত্রই মানুষের নজর যাচ্ছে। তাহলে প্রাচীর ভেঙ্গে না গেলে কোথায় প্রাচীর? সেই হিসেবে কেউ বলছে চীনের প্রাচীর হল ইয়াজুজ-মাজুজের সেই প্রাচীর।
আসুন কুরআন-সুন্নাহের আলোকে যুক্তিগুলো খন্ডন করি-
১. কেয়ামতের আলামতসমূহঃ কেয়ামতের আলামতগুলো ধাপে ধাপে আসবে। রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট থেকে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুযাইফা বিন আসিদ রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বর্ণনা করেছেন। সে হাদিসে সব মিলিয়ে ১০ টি আলামত উল্লেখ করা হয়েছে। আলামতগুলো নিচে উল্লেখ করা হল।
কেয়ামতের ১০ টি বড় আলামত:
১. দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ,
২. হযরত ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর পৃথিবীতে প্রত্যাগমন,
৩. ইয়াজুজ ও মাজুজের উদ্ভব,
৪. প্রাচ্যে ভূমি ধ্বস
৫. পাশ্চাত্যে ভূমিধ্বস
৬. আরব উপদ্বীপে তিনটি ভূমিধ্বস হওয়া,
৭. ধোঁয়া (ধূম্র) বের হওয়া,
৮. সূর্যাস্তের স্থান হতে সূর্যোদয় বা পশ্চিম দিগন্তে প্রভাতের সূর্যোদয়,
৯. বিশেষ জন্তু বা অদ্ভুত প্রাণীর (দাব্বাতুল আরদ) আবির্ভাব,
১০. পরিশেষে ইয়েমেন থেকে এমন বিশাল এবং ভয়াবহ আগুনের লেলিহান শিখার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে।
এই আলামতগুলো একটার পর একটা প্রকাশ হতে থাকবে। প্রথমটি প্রকাশিত হওয়ার অব্যবহিত হওয়ার পরেই পরেরটি প্রকাশ পাবে। এর মধ্যে প্রথমে দাজ্জাল, পরে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) ও পরে ইয়াজুজ-মাজুজ আসার ব্যাপারে হক্বপন্হী আলেমগণ একমত।
২. সংখ্যাগরিষ্ঠতাঃ এবার আসি ওদের আরেক যুক্তি, ওরা অসংখ্যা তাহলে কোথায় লুকিয়ে আছে? প্রথমত তাদের সংখ্যা যদি অজস্র ধরা হয় তাহলে ইউরোপ, আমেরিকা, ইসরায়েল কিভাবে ইয়াজুজ-মাজুজ হয়?
ওরা ভূখন্ডের দিক দিয়ে বড় হলেও সংখ্যার দিক দিয়ে তুর্ক জাতি বা চীন, জাপান, মাআউন্নাহরের দেশগুলো (কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্হান) ও ভুটান, থাইল্যান্ড, তুরস্কের অনেকে তুর্কদের বংশধর। হাদীসমতে ইয়াজুজ-মাজুজ নূহের (আঃ) পুত্র ইয়াসেফের বংশধর।
এবার দেখি ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যার ব্যাপারে হাদীস কি জানায়-
● হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা ডাকবেন- হে আদম! তিনি আওয়াজ করবেন, আমি হাজির আছি। সৌভাগ্যবান হয়েছি এবং সবরকম কল্যাণ আপনার হাতেই নিহিত। আল্লাহ তায়ালা আদেশ করবেন- জাহান্নামীদের বের কর। আদম (আ) জিজ্ঞেস করবেন জাহান্নামীদের সংখ্যা কত? আল্লাহ বলবেন- প্রতি হাজারে ৯৯৯। তখন ছোটরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। লোকদেরকে নেশা করা মাতালের মত লাগবে অথচ তারা মাতাল নয়, এগুলো আল্লাহর ভয়ংকর আযাব। সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে একজন মাত্র আমাদের মধ্যে কে হবেন? রাসূল (সঃ) বললেন- তোমরা আনন্দিত হও। কেননা, তোমাদের মধ্য হতে ১ জন এবং ১০০০ হবে ইয়াজুজ মাজুজ। যাঁর হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম, আমি আশা করি সমস্ত জান্নাতবাসীর তোমরাই হবে অর্ধসংখ্যক। (সহীহ বুখারী-৩১০৩)।
এখানে আলেমদের মধ্যে দুটো অভিমত বিদ্যামান –
১. প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে যাবে ইয়াজুজ-মাজুজ আর এর বিপরীতে মুসলিমরা মাত্র ১ জন যাবে।
২. এখানে তোমরা বলতে সাহাবী বা আরবদের বুঝানো হয়েছে উম্মাহকে নয়। কারণ উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে তারমধ্যে ৭২ দল জাহান্নামে যাবে। (আহমদ, আবুদাউদ)। আর আদম (আঃ) এর সন্তানের মধ্যে যে ৯৯৯ জন জাহান্নামীর কথা বলা হয়েছে তা ইয়াজুজ-মাজুজসহ সমগ্র মানবের কথা বলা হয়েছে। তারা এই হাদীসের দলিল দেয় –
● ইমরান বিন হুছাইন রা. থেকে বর্ণিত, কোন এক ভ্রমণে আমরা নবীজীর (সা) সাথে ছিলাম। সাথীগণ বাহন নিয়ে এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়ল। নবীজী উচ্চকণ্ঠে পাঠ করলেন-
“হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্য-ধাত্রী তার দুধের শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব বড় কঠিন।”
সূরা হাজ্ব ১-২
নবীজীর উচ্চবাচ্য শুনে সাহাবিগণ একত্রিত হতে লাগলেন, সবাই জড়ো হলে বলতে লাগলেন- “তোমরা কি জান- আজ কোন দিবস? আজ হচ্ছে সেই দিবস, যে দিবসে আদমকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বললেনঃ জাহান্নামের উৎক্ষেপণ বের কর! আদম বলবেঃ জাহান্নামের উৎক্ষেপণ কি হে আল্লাহ..!? আল্লাহ বলবেন- প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন জাহান্নামে আর একজন শুধু জান্নাতে!! নবীজীর কথা শুনে সাহাবিদের চেহারায় ভীতির ছাপ ফুটে উঠল। তা দেখে নবীজী বলতে লাগলেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! সেদিন তোমাদের সাথে ধ্বংস-শীল আদম সন্তান, ইয়াজুজ-মাজুজ এবং ইবলিস সন্তানেরা-ও থাকবে, যারা সবসময় বাড়তে থাকে (অর্থাৎ ওদের থেকে নয়শ নিরানব্বই জন জাহান্নামে, আর তোমাদের থেকে একজন জান্নাতে)। সবাই তখন আনন্দ ও স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল। আরো বললেন- আমল করে যাও! সুসংবাদ গ্রহণ কর! ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ নিহিত! মানুষের মাঝে তোমরা সেদিন উটের গায়ে ক্ষুদ্র-চিহ্ন বা জন্তুর বাহুতে সংখ্যা-চিহ্ন সদৃশ হবে।” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)।
অর্থাৎ হাশরের ময়দানে ইয়াজুজ-মাজুজ, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি এবং ইবলিস বংশধরদের উপস্থিতিতে তোমাদেরকে মুষ্টিমেয় মনে হবে। ঠিক উটের গলায় ক্ষুদ্র চিহ্ন আঁকলে যেমন ক্ষুদ্র দেখা যায়, হাশরের ময়দানেও তোমাদের তেমন দেখাবে।
কিন্তু সাহাবীদের মধ্যে কিভাবে জাহান্নামী হতে পারে- এখানে মূলত তোমাদের বলতে রসুল (সাঃ) এর সময় যারা বাহ্যিকভাবে ঈমান এনেছিল কিন্তু অন্তরে মুনাফেকি ছিল তাদেরও ধরা হয়েছে। যেমন: উবাহ ইবনে সালুলের সাথীগণ ও যাকাত অস্বীকারীগণ অনেকে সাহাবীদের সাথেই ছিল।
৩. প্রাচীরের ফাটলঃ অনেকে এই হাদীসের দলিল দেয় প্রাচীরের ফাটল রসুল (সাঃ) এর সময় দেখা গিয়েছিল তাহলে এতদিনে তাদের মুক্তি হওয়াটা স্বাভাবিক। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জীবদ্দশাতেই ইয়াজুজ-মাজুজ পৃথিবীতে মুক্তি পেয়ে যায়।
● যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ”একবার নবীজি (সঃ) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবের লোকেদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির আগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলির অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব? তিনি বলেন, হ্যাঁ যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে।” (সহিহ বুখারি)।
কিন্তু এর বিপরীতে আরও হাদীস আছে যেখানে প্রাচীর ফাটলের ব্যাখা আছে-
● আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, প্রাচীরের বর্ণনা দিতে গিয়ে নবী করীম সা. বলেন- “অতঃপর প্রতিদিন তারা প্রাচীর ছেদন-কার্যে লিপ্ত হয়। ছিদ্র করতে করতে যখন পুরোটা উন্মোচনের উপক্রম হয়, তখনি তাদের একজন বলে, আজ তো অনেক করলাম, চল! বাকীটা আগামীকাল করব! পরদিন আল্লাহ পাক সেই প্রাচীরকে পূর্বে থেকেও শক্ত ও মজবুত-রূপে পূর্ণ করে দেন। অতঃপর যখন সেই সময় আসবে এবং আল্লাহ পাক তাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দেবেন, তখন তাদের একজন বলে উঠবে, আজ চল! আল্লাহ চাহেন তো আগামীকাল পূর্ণ খোদাই করে ফেলব! পরদিন পূর্ণ খোদাই করে তারা প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসবে। মানুষের ঘরবাড়ী বিনষ্ট করবে, সমুদ্রের পানি পান করে নিঃশেষ করে ফেলবে। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ দূর দূরান্তে পলায়ন করবে। অতঃপর আকাশের দিকে তারা তীর ছুড়বে, তীর রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসবে।” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাকে হাকিম)।
হাদিস থেকে যা বুঝা যায়…
• প্রাচীরের ছিদ্র যেমন হয় আল্লাহ তা মিলিয়ে দেন।
• তারা দিনরাত বিরামহীন খোদাই করে না। যদি করত, তবে পূর্ণ করে ফেলত। সন্ধ্যা পর্যন্ত করে ফিরে যায়।
• প্রতীক্ষিত কাল পর্যন্ত কখন-ই তারা ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ চাহেন তো) বলবে না।
বুঝা গেল, তাদের মাঝেও কর্মঠ ও পরিশ্রমী ব্যক্তি আছে। নেতৃত্ব কর্তৃত্বের অধিকারী-ও আছে।
৪. পবিত্রভূমি ও পানি পানঃ বিগত ১৫-২০ বছর ধরে একটা মতবাদ ছড়িয়ে যাচ্ছে সেটা হল খাযাফ ইহুদিরা ইয়াজুজ-মাজুজ। কারণ হিসেবে তাবারিয়া হ্রদের পানি কমে যাওয়া ও পবিত্রভূমি দখলকে দলিল দেখায়। আল্লাহ বলেন-
“যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত। যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।”
সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং- ৯৫ ও ৯৬
১. সুরা আম্বিয়ায় কোথাও জেরুজালেম ও পবিত্রভূমি উল্লেখ নেই। অতীতের তাফসীর গ্রন্থে এর ব্যাখা ছিল এরূপ – যে জাতি অন্যায় আচরণ, ব্যাভিচার, বাড়াবাড়ি ও সত্যের পথ নির্দেশনা থেকে দিনের পর দিন মুখ ফিরিয়ে নেয়া এত বেশী বেড়ে যায় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, তাকে আবার ফিরে আসার ও তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয় না। গোমরাহী থেকে হেদায়াতের দিকে ফিরে আসা তার পক্ষে আর সম্ভব হতে পারে না। [ইবন কাসীর]
২. যে জনপদ আমি আযাব দ্বারা ধ্বংস করেছি, তাদের কেউ যদি দুনিয়াতে এসে সৎকর্ম করতে চায়, তবে সেই সুযোগ সে পাবে না। এরপর তো শুধু কেয়ামত দিবসের জীবনই হবে। আল্লাহর আদালতেই তার শুনানি হবে। [ইবন কাসীর; সাদী]
৩. এখানে ‘হারাম’ শব্দটি শরীআতগত ‘অসম্ভব’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তখন আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, যে জনপদ ও তার অধিবাসীদেরকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি, তাদের কোন আমল কবুল করা অসম্ভব। [কুরতুবী] আর পূর্বের আয়াত দেখলে নিশ্চিত হওয়া যায় – ইয়াজুজ-মাজুজ কেয়ামতের আলামত।
এবার আসি ইয়াজুজ মাজুজ মানুষ, কিভাবে পানি পান করে শুকিয়ে ফেলতে পারে? ইয়াজুজ-মাজুজ আসবে দাজ্জালের পরে। আর দাজ্জালের যুগে দুর্ভিক্ষ, অনাবৃষ্টির কারণে নদ-নদী অনেকটুকু শুকিয়ে যাবে বাকীটুকু ইয়াজুজ-মাজুজ পান করা অস্বাভাবিক কিছু না।
দাজ্জাল প্রকাশের পূর্বে মুসলমান এবং রোমান খৃষ্টানদের মধ্যে বড় ধরনের কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হবে। আল্লাহর রহমতে মুসলমানগণ চূড়ান্ত বিজয়ার্জন করবেন।
● নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জালের পূর্বে তিনটি মহা দুর্ভিক্ষময় বৎসর অতিবাহিত হবে। প্রাকৃতিক সকল খাদ্যোপকরণ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে পড়ে যাবে। প্রথম বৎসর আল্লাহ আসমানকে এক তৃতীয়াংশ বৃষ্টি এবং জমিনকে এক তৃতীয়াংশ ফসল বন্ধ করে দেয়ার আদেশ করবেন। দ্বিতীয় বৎসর আল্লাহ আসমানকে দুই তৃতীয়াংশ বৃষ্টি এবং জমিনকে দুই তৃতীয়াংশ ফসল বন্ধ করে দেয়ার আদেশ করবেন। তৃতীয় বৎসর আল্লাহ আসমানকে সম্পূর্ণ বৃষ্টি এবং জমিনকে সম্পূর্ণ ফসল বন্ধ করে দেয়ার আদেশ করবেন। ফলে এক ফোটা বৃষ্টি-ও বর্ষিত হবে না। একটি শস্য-ও অঙ্কুরিত হবে না। আল্লাহ চাহেন তো মুষ্টিমেয় ছাড়া সকল ছায়াদার বস্তু ধ্বংস-মুখে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে (অর্থাৎ গাছপালা ও বৃক্ষকুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে)।” (সহীহ মুসলিম, আল ফিতান)।
● আরও বর্নিত আছে, ঈসা আ. দাজ্জালকে হত্যা করবেন অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করবেন, “আমার বান্দাহদেরকে তূর পাহাড়ে সরিয়ে নাও। কেননা, আমি এমন একদল বান্দা অবতীর্ণ করছি যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি বলেন, তারপর আল্লাহ ইয়াজুজ মাজুজের দল পাঠাবেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী অনুযায়ী তাদের অবস্থা হলো,
“তারা প্রত্যেক উচ্চভূমি হতে ছুটে আসবে।”
সূরাঃ আম্বিয়া আয়াত নং ৯৬
তিনি বলেন, তাদের প্রথম দলটি (সিরিয়ার) তাবারিয়া উপসাগর অতিক্রমকালে এর সমস্ত পানি পান করে শেষ করে ফেলবে।
এদের শেষ দলটি এ স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে বলবে, নিশ্চয়ই এই জলাশয়ে কোন সময় পানি ছিল। তারপর বাইতুল মাকদিসের পাহাড়ে পৌঁছার পর তাদের অভিযান সমাপ্ত হবে। তারা পরস্পর বলবে, আমরা তো দুনিয়ায় বসবাসকারীদের ধ্বংস করেছি, এবার চল আকাশে বসবাসকারীদের ধ্বংস করি। তারা এই বলে আকাশের দিকে তাদের তীর নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তীরসমূহ রক্তে রঞ্জিত করে ফিরত দিবেন। তারপর ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ) ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। তারা (খাদ্যভাবে) এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হবেন যে, তখন তাদের জন্য একটা গরুর মাথা তোমাদের এ যুগের একশত দীনারের চাইতে বেশি উত্তম মনে হবে। তিনি বলেন, তারপর ঈসা (আঃ) ও তাঁর সাথীরা আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হয়ে দুআ করবেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তখন ইয়াজুজ মাজুজ বাহিনীর ঘাড়ে মহামারীরূপে ‘নাগাফ’ নামক কীটের উৎপত্তি করবেন। তারপর তারা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে যেন একটি প্রাণের মৃত্যু হয়েছে।(মুসলিম, আল ফিতান)।
তার মানে ইয়াজুজ-মাজুজের বিপক্ষে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই – অথচ আমেরিকা, রাশিয়া দুদেশই আফগানে পরাজয় বরণ করেছে। আর ঈমাম মাহাদীর নিকট বর্তমানের সকল পরাশক্তি পরাজয় বরণ করবে আর ঈসা (আঃ) এর নিকট দাজ্জাল ও তার বাহিনীরা।
৫. প্রাচীর কোথায়ঃ সে জ্ঞান সম্পূর্ন আল্লাহর নিকট।
ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার পর আল্লাহ ঈসাকে (আঃ) জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ পাক বলেন-
“আপনার জাতি তা মিথ্যারোপ করেছে। আপনি বলুন, আমি তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নই! প্রতিটি সংবাদের-ই নির্ধারিত সময় আছে! (সময় এসে গেলে) ঠিকই তোমরা সব জানতে পারবে।”
সূরা আনআম ৬৬-৬৭
আধুনিক কালের টেকনোলোজি প্রাচীন-কালে কেন আবিষ্কৃত হয়নি; কারণ, সেটার জন্য-ও আল্লাহ পাক সময় নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তবে একজন সাহাবী সেই প্রাচীর দেখেছিলেন।
● ইমাম বুখারী রহ. অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। একব্যক্তি নবীজীর কাছে এসে বলল, আমি সেই প্রাচীর দেখেছি। লাল পথের ধারে সাদা কালো রেখাযুক্ত কাপড়ের মত দেখতে। নবী করীম সা. বললেন- হ্যাঁ..! তুমি ঠিক-ই দেখেছ!!”
৬. কেন মিথ্যাচারঃ তাতারীরা যখন আক্রমণ করেছিল তখন অনেক আলেমরা ওদের ভয়াবহতা দেখে ইয়াজুজ-মাজুজ ঘোষণা করে এবং প্রচার করে এদের পরাজিত করা অসম্ভব।
তাই জেহাদ হতে সরে যায় অথচ মুসলিমরা ও তাতারীদে হতে মুসলিম হয়ে ওদের মেকাবিলা করে প্রমান করে ওদের পরাজিত করা সম্ভব।
তাই যখনি এই ধারনা প্রচার করা যাবে বর্তমানে ইয়াজুজ-মাজুজ বের হয়ে গেছে পরবর্তীতে জাতিকে জেহাদবিমুখ করা যাবে। অথচ ওরা যাদের ইয়াজুজ-মাজুজ প্রচার করে তাদের অনেকে মুসলিম হয়ে মুসলিমদের পক্ষে লড়ছে বা লড়বে। যেমন মুসলিম শরীফের একটি হাদীস হলঃ
● রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “রোমানরা তোমাদের আক্রমণ করবে এবং আস শামের আল আমাকে তাঁবু খাটাবে (অবস্থান গ্রহণ করবে)। মদিনা থেকে একটি বাহিনী তাঁদের মোকাবেলা করতে যাবে।” রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেন – “এবং তাঁরা হবে তাঁদের সময়কার শ্রেষ্ঠ মুমিন” এবং এই মুসলিম বাহিনী তাঁদের অবস্থান গ্রহণ করবে, এবং রোমানরা তাঁদের বলবে – “আমাদের লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও”, অর্থাৎ ওইসব রোমান যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না। সুতরাং উভয় দল যুদ্ধ করবে। অপরদিকে ইয়াজুজ-মাজুজ বেশিরভাগই জাহান্নামী।
৭. যৌক্তিকতাঃ বর্তমানে যদি ইয়াজুজ-মাজুজ বের হয়, যতই সংখ্যাগরিষ্ঠ হোক আধুনিক পারমাণবিক বোম ও সমরাস্ত্রের কাছে ইয়াজুজ-মাজুজ অসহায় হয়ে পড়বে। ইয়াজুজ-মাজুজ বের হবে তখন যখন মহাযুদ্ধ ও দাজ্জালের ফেতনার পর আধুনিক বিজ্ঞান শেষ হয়ে যাবে, যুদ্ধবিগ্রহে অনেকে মারা যাবে। তাই সাধারণ মানুষের তুলনায় ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যা বেশি ও শক্তিশালী হবে।
অন্যান্য লেখার তুলনায় বেটার মনে হলো।