কেয়ামতের আলামত নিয়ে আলোচনা এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যেন উম্মাহ ফেতনা চিনতে পারে এবং রসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করে নিজেকে জাহান্নাম হতে সুরক্ষিত করতে পারে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই লোকেদের উপর প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির যুগ আসবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী গণ্য করা হবে, আমানতের খিয়ানতকারীকে আমানতদার, আমানতদারকে খিয়ানতকারী গণ্য করা হবে এবং রুওয়াইবিয়া হবে বক্তা।
জিজ্ঞাসা করা হলো, রুওয়াইবিয়া কি? তিনি বলেনঃ নীচ প্রকৃতির লোক সে জনগণের হর্তাকর্তা হবে। (আহমদ ৭৮৫২, ইবনে মাজাহ ৪০৩৬)।
একটু মিলিয়ে দেখুন- বর্তমান মিডিয়াগুলো দ্বীনদার আলেমদের মিথ্যাবাদী, অপরাধী হিসেবে প্রচার করে আর প্রকৃত অপরাধীকে সত্যবাদী, নেককার বলে প্রচার করে চলছে। আর জনগণের প্রতিনিধি কারা? নিচ প্রকৃতির লোকেরা, তারাই যেকোন বিষয়ে বিভ্রান্ত ও অযৌক্তিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন – ‘(হে কা’ব!) তুমি নির্বোধ আমীর (শাসক) থেকে আল্লাহ’র আশ্রয় চেও। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: নির্বোধ আমীর কে?
রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন: (ওরা হল) এমন সব আমীর যারা আমার পরে আসবে। তারা না আমার দেখানো পথে চলবে, আর না আমার আদর্শ মাফিক রীতি-নীতি চালু করবে।
কাজেই যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার -এর সহায়তা করবে, ওরা আমার (কেউ) নয়, আমিও তাদের (কেউ) নই এবং তারা (কেয়ামতের দিন আমার) হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে আসতে পারবে না।
আর যে ব্যাক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্ত্বায়ন করবে না এবং তাদের জুলুম-অন্যায়-অবিচার এর সহায়তা করবে না, ওরা আমার, আমিও তার এবং (কেয়ামতের দিন) তারা আমার হাউজ (-ই-কাউসার)-এর নিকটে সহজে আসতে পারবে’ [মুসনাদে আহমদ, ৩/৩২১ ; সহিহ ইবনে হিব্বান– ৫/৯ হাদিস ১৭২৩; মুসনাদে বাযযার- ২/২৪১ হাদিস ১৬০৯; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ১১/৩৪৫; মুসতাদরাকে হাকিম- ৩/৩৭৯; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৪৭]
আরও বর্ণিত আছে – হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ‘শেষ জামানায় জালেম ও অন্যায়-অবিচারক শাসকদের আগমন ঘটবে। তাদের মন্ত্রীরা হবে ফাসেক (পাপিষ্ট, পঁচন ধরা), তাদের বিচারকরা হবে খেয়ানতকারী, তাদের (সাথে থাকা) আলেমরা হবে মিথ্যুক। তোমাদের মধ্যে যারা সেই জামানা পাবে, তারা ওদের কর-উসূলকারী, আরেফ এবং সৈন্য হতে যেও না। [মু’জামে আ্উসাত, ত্বাবরানী, হাদিস ৪১৯০; মু’জামে ছাগীর, ত্বাবরানী, হাদিস ৫৬৪; তারীখে বাগদাদ, খতীব-১১/৫৭৭; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৩৩]
রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- “আমার পর অতি শীঘ্রই এমনসব শাসকদের (আভির্ভাব) হবে, যারা (দ্বীন ইসলামের মাথা উঁচু করার জন্য নয়, বরং নিছক) দেশের জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহ বাঁধাবে; এর জন্যই তারা একে অপরকে হত্যা করবে”। [আল-মুসনাদ, ইবনু আবি শাইবা- ১/২৯১ হাদিস ৪৩৮; আল-মুসান্নাফ, ইবনু আবি শাইবা- ১৫/৪৫; মুসনাদে আহমাদ- ৪/২৬৩; মুসনাদে আবু ইয়া’লা- ৩/২১২ হাদিস ১৬৫০; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৭/২৯৩]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন- ‘তোমাদের উপর এমনসব আমীর/প্রশাসকের আগমন ঘটবে যে, তারা মাজুস (অগ্নীপূজক)-এর চেয়েও খারাপ হবে’। [আল-মুজামুস সাগীর, ত্বাবরাণী: ১০১৫; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২৩৫]
একটু খেয়াল করুন- তথাকথিত মুসলিম নামধারী শাসকগণ আজ ক্ষমতার জন্য দেশের নামে যুদ্ধ করছেন দ্বীনের জন্য নয়। তাই তো পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে কঠোর হলেও চীনের উইগুরের মুসলিম নির্যাতনের ক্ষেত্রে নিরব বরং চীন তাদের প্রধান মিত্র রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ী বন্ধু। তুরস্ক কুর্দীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অথচ বাশার আল আসাদের নুসাইরিয়া বাহিনীর নির্যাতনের ক্ষেত্রে নিরব, যারা নুসাইরিয়াদের সম্পর্কে জানেন তারা জানে – সবচেয়ে জঘন্য আকীদা হল নুসাইরিয়া আকীদা।
যারা কুরআনকে বিকৃত মানে, আয়েশা (রাঃ) ও হাফজা (রাঃ) কে রসুলুল্লাহ’র হত্যাকারী ভাবে আর চার সাহাবী ছাড়া সব সাহাবীকে কাফের বলে আ্যাখায়িত করে।
আর লাখো মুসলিমদের হত্যাকারী ওরা। এই বিষয়ে পূর্বে দলিলসহ পোস্ট আছে – কমেন্টে দেওয়া হবে। তেমনি সৌদী আরব ইয়েমেনের ক্ষেত্রে কঠোর অথচ ইসলামের শত্রুরা তাদের বন্ধু।
ইয়াযীদ বিন মাছরাদ রহ.-এর সূত্রে বর্ণিত, হযরত মুআয বিন জাবাল রা. বলেছেন-
‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একথা বলতে শুনেছি: (খলিফা/প্রশাসকের) উপহার গ্রহণ করতে পারো যতক্ষন তা উপহার হিসেবে থাকে। তবে সেটা যদি দ্বীনের দৃষ্টিতে ঘুষ হয়ে যায়, তখন তা গ্রহণ করো না।
কিন্তু (আক্ষেপ হল) তোমরা (মুসলমানরা ভবিষ্যতে) তা পরিহার করে চলবে না। অভাব ও প্রয়োজন -তোমাদের জন্য (আমার এই নির্দেশ পালনে) বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
ভাল করে শুনে রাখো, (কুরআনের মাধ্যমে দ্বীন) ইসলামের পরিধি সচল হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা আল-কিতাব (কুরআন)-এর সাথে থাকবে তা যেখানেই যাক না কেন, (কোনো অবস্থাতেই কুরআনকে ছাড়বে না)।
ভাল করে শুনে রাখো, নিশ্চয় আল-কিতাব ও রাষ্ট্র ক্ষমতা অতিশীঘ্রই (একটি অপরটি থেকে) আলাদা হয়ে যাবে, (আল্লাহ’র কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা চলবে না; চলবে মানুষের বানানো আইন দিয়ে)। তখনও তোমরা আল-কিতাব থেকে আলাদা হয়ো না।
ভাল করে শুনে রাখো, অতি শীঘ্রই তোমাদের উপর এমনসব আমীর-ওমরা’রা (রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, প্রশাসক’রা) আসবে, যারা তাদের নিজেদের জন্য (সুবিধা মতো) যে বিচার-ফয়সালা করবে, সে বিচার-ফয়সালা তারা তোমাদের জন্য করবে না।
তোমরা যদি তাদের অবাধ্যতা প্রদর্শন করো তাহলে তারা তোমাদেরকে (বিভিন্ন অযুহাতে) মেড়ে ফেলবে। আর তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো, তাহলে তারা তোমাদেরকে (আল্লাহ’র দ্বীন থেকে) পথভ্রষ্ঠ করে দিবে।
লোকেরা বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! (এমতাবস্থায়) আমরা কি করবো? তিনি বললেন: (তোমরাও তা-ই করবে) যেমনটা ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ)-এর সাহাবীগণ করেছিলেন। তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে ফেলা হয়েছিল, শুলিতে চড়ানো হয়েছিল (কিন্তু তারা আল্লাহ’র দ্বীন ছাড়েনি)। আল্লাহ’র নাফরমানীর জীবনের চাইতে আল্লাহ’র আনুগত্যের পথে মৃত্যুও শ্রেয়। [আল-মু’জামুল কাবীর, ত্বাবরাণী- ২০/৯০; আল-মু’জামুস সগীর, ত্বাবরাণী- ২/৪২; মুসনাদে শামেয়ীন, ত্বাবরাণী- ১/৩৭৯; হিলইয়াতুল আউলিয়াহ, আবু নুআইম- ৫/১৬৬; মাজমাউয যাওয়ায়ীদ, হাইছামী- ৫/২২৮]
আজ দেখুন – আল্লাহর দ্বীনের বিধান ও রসুলুল্লাহ’র (সা) সুন্নাহ বাদ দিয়ে কাদের বিধান ও আর্দশ চলছে!! যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে ওদের চিন্তা-চেতনার উপাসনা করছে তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না।
তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তারা হলো, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৯৬)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যাচারীকে পৃথিবীতে সুযোগ ও অবকাশ দিয়ে থাকেন। আবার যখন তাকে ধরেন তখন আর ছাড়েন না। বর্ণনাকারী সাহাবী আবু মূসা আশ’আরী বলেনঃ তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “এরূপই আপনার প্রতিপালকের শাস্তি! তিনি শাস্তি দান করেন জনপদসমূহকে যখন ওরা যুলুম করে থাকে। নিশ্চয়ই তার শাস্তি মর্মম্ভদ, কঠিন। (সুরা হুদ -১০২)” [বুখারীঃ ৪৬৮৬, মুসলিমঃ ২৫৮৩]