আমাদের অনেকেরই কেয়ামতের আলামত নিয়ে আগ্রহ বেশি কিন্তু আলামত ও ফেতনার মাঝে পার্থক্য বুঝি না। তাই অনেক আলেম, ইউটিউবার কিছু চমকপ্রদ কথা বলে জনপ্রিয়তা ও অর্থ অর্জন করে চলছে!! আর বক্তার ফেতনার ওয়াজ শুনে উল্টো ফেতনায় জড়াচ্ছে।
কেয়ামতের পূর্বে যা কিছু ঘটবে তাই আলামত, এর মধ্যে ফেতনাও আছে। কিন্তু কিছু আলামত রহমতস্বরুপ যেমন- ঈসা (আ:) এর আগমন ও ইসলাম প্রতিষ্ঠা।
বিশ্বে কোন প্রান্তে কোন ঘটনা ঘটলে তা যুক্তি দিয়ে দাজ্জাল আসার আলামত বলে প্রচার করে হচ্ছে। একশ্রেনীর আলেম, ইউটিউবার আর ভক্তরা দাজ্জালের ফেতনায় ভীত ও সতর্ক না হয়ে কৌতূহলী হচ্ছে। অনেকে অমুক অমুক তারকা দাজ্জালের এজেন্ট বলে প্রচার করে। ফলে অনেকে এসব তারকাদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে জেনা করছে।
আল্লাহ বলেন –
আর যিনার ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনী ইসরায়েল, ৩২)
এই তারকা দাজ্জালের এজেন্ট হোক বা না হোক শয়তানের এজেন্ট। আর শয়তানের অনুসারীদের প্রতিহত করা বা দূরে থাকা উচিত। অথচ দাজ্জালের সাথে সম্পর্ক শিরকের আর বর্তমান যুগে চারপাশে শিরক বিদ্যমান তার ওয়াজ করা সবচেয়ে বেশি জরুরী।
সহীহ মুসলিমের হাদীস দেখলে বুঝা যায় দাজ্জাল আসার আগে মালহামা ও ইস্তাম্বুল বিজয়ের পর শয়তান দাজ্জাল বের হয়েছে বলে প্রচার করবে যেন মুসলিমদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।
দাজ্জালের আলোচনা অন্তত জরুরী তারচেয়ে জরুরী বর্তমানের শিরক, কুফর ও সহীহ দ্বীন জানা। দাজ্জাল আসার আলামত এটা না যে ইসলাম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বরং দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটবে যখন খলিফা মাহাদীর নেতৃত্বে ইসলাম পূর্ন শক্তি লাভ করবে। বর্তমানের যত ফেতনা আছে ইনশাআল্লাহ অবসান ঘটবে, এরপর দাজ্জাল আসবে কিন্তু মুমিনদের ক্ষতি (ঈমানের) করতে পারবে না।
আর মালহামা, ইস্তাম্বুল, গাজাওয়ে হিন্দের বিজয়ীদের কোন ফেতনাই ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম, আল ফিতান)
আমাদের উচিত বিশ্ব পরিস্থিতি দেখে এসব দিকে প্রস্তুতি নেওয়া।
খলিফা মাহাদী ও ঈসা (আ:) এর যুগে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর আমল করার চেয়ে বর্তমানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করাই উত্তম।
আল্লাহ বলেন –
তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যারা পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। (সুরা হাদীদ-১০)
মক্কা বিজয়ের পূর্বে মুসলিমরা দুর্বল ছিল, দ্বীনের পথে কষ্ট ও বাধা ছিল কল্পনাতীত, তখন দান ও জেহাদ করার যে মর্যাদা ছিল পরে তা ছিল না!! বর্তমানে যারা ইসলামের জন্য অবদান রাখবে তাদের মর্যাদাও ইনশাআল্লাহ বেশি হবে, বিজয়ের পর ইসলাম মানা হতে।
আসুন দেখি দুটো হাদীস যা অধিকাংশরা ভুল ব্যাখা করে-
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘‘কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে’’। এখানে ইলম বলতে ইলমে দ্বীন তথা কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেনঃ
‘‘আল্লাহ তাআলা মানুষের অন্তর থেকে ইলমকে টেনে বের করে নিবেন না; বরং আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবেনা তখন লোকেরা মূর্খদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবে। তাদেরকে কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বিনা ইলমেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরা গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরকেও গোমরাহ করবে’’। (বুখারী)
একদিকে অনেকেই দাবি করছে এখনই সেসময় – হক্বপন্হী আলেমরা বিশ্ব হতে বিদায় নিচ্ছে, ইলম উঠে যাচ্ছে অপরদিকে নিজেদের হক্ব দাবি করছে, জনপ্রিয়তা নিয়ে গর্ব করছে অন্যদের সমালোচনা করে চলছে।
অথচ কেয়ামতের কিছু ছোট আলামত হবে ঈসা (আ:) এর পরবর্তী সময়ে, যখন সকল মুসলিমরা বিদায় নিবে আর মুনাফেকরা রয়ে যাবে। আচ্ছা ভবিষ্যতে মুসলিমরা (প্রকৃত) খলিফা মাহাদীকে নেতা বানাবেন তার সাথে যারা থাকবেন (মনসুর ইয়ামেনী, হারস হাররাস, আবদাল, আসাইব) ওদের কি ইলম থাকবে না!?
আর বর্তমানে দ্বীনের প্রচার ছড়িয়ে যাচ্ছে কিছু হক্ববাদী আলেম, টেকনোলজির মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে। অথচ অতীতে খুবই কষ্টকর ছিল, একটা মাসয়ালা, হাদীস জানার জন্য কত কষ্ট করতে হয়েছে, বহু পথ পাড়ি দিয়ে আলেমদের কাছে ছুটে যেতে হতো। বরং মুসলিমদের সুসংবাদ যে প্রকৃত আলেমরা খলিফা মাহাদীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম ছড়িয়ে দিবে।
অপর হাদিসে নবী করীম সা. বলেন- “কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ধন-সম্পদ ছেয়ে যাবে। যাকাত দিতে গেলে গ্রহীতা পাওয়া দুষ্কর হবে। -যতক্ষণ না আরব ভূ-খণ্ড সুউচ্চ বাগিচা ও নদীতে ভরে উঠবে।” (মুসলিম)
মুয়ায বিন জাবাল রা. বলেন- তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা নবী করীম সা. এর সাথে বের হলাম। (ভ্রমণকালে) নবীজী দুই নামাযকে একত্রে পড়তেন। জুহর-আসর এবং মাগরিব-এশা একত্রে পড়ে নিতেন। যথারীতি বের হয়ে নবীজী জুহরের নামায কিছুক্ষণ দেরী করে জুহর-আসর একত্রে পড়ে নিলেন। মাগরিবের সময় হলে মাগরিব-এশা একত্রে পড়ে নিলেন। অতঃপর বললেন- আগামীকাল ইনশাল্লাহ তোমরা তাবুকের (ঐতিহাসিক) ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবে। প্রভাত-রবি উদ্ভাসিত হওয়ার আগে সেখানে পৌঁছতে পারবে না। আমি না পৌঁছা পর্যন্ত ঐ ঝর্ণার পানি তোমরা পান করো না। অতঃপর যথাসময়ে আমরা ঝর্ণার কাছে এসে পৌঁছালাম। আমাদের আগেই দু-জন এসে পৌঁছেছিল। ঝর্ণাটি জুতার ফিতার ন্যায় সক ছিল। খুব-ই স্বল্প পানি সেখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নবীজী এসে -তোমরা কেউ পানি স্পর্শ করেছো?” জিজ্ঞেস করলে ঐ দুজন বলল- জ্বি হ্যাঁ..!! নবীজী তখন রাগত স্বরে তাদেরকে কিছু কটু কথা বললেন।
অতঃপর সবাই ঝর্ণা থেকে অঞ্জলি ভরে একটু একটু করে পানি এনে এক পাত্রে জমা করলেন। নবীজী পাত্রের পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে পানিকে পুনরায় ঝর্ণার প্রবাহ পথে রেখে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল স্রোতের মত পানি আসতে লাগল। আমরা সকলেই সেখান থেকে পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করলাম। অতঃপর নবী করীম সা. বললেন- ওহে মুয়ায। আয়ু থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থানকে তুমি বাগ-বাগিচায় পূর্ণ দেখতে পাবে।” (মুসলিম)
বর্তমানে এই হাদীস ভুল ব্যাখা করে অনেকে দাবি করছে এই আলামত ঘটে গেছে, দাজ্জাল আসার আলামত।
কিন্তু হাদিস দেখলে বুঝা যায় এখানে সৌদি আরব নয় বরং তাবুকসহ পুরো আরব উপদ্বীপ (কাতার, কুয়েত, ওমান, সুদান) সবর্ত্রই সুউচ্চ বাগিচা, নদীতে পরিণত হবে, ধনসম্পদ বৃদ্ধি পাবে। এগুলো ঘটবে ঈসা (আ:) এর পরবর্তীতে যখন সারাবিশ্বে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে, প্রচুর বৃষ্টি হবে, ফসল হবে। (মুসলিম)
আর দাজ্জাল আসার আলামত বৃষ্টি কমে যাবে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, তাই সাময়িক কিছু আলামত দেখা দিলে তাকে হাদীসে বর্নিত সে আলামত বলে প্রচার করলে পরবর্তীতে (যখন তা মিলবে না ) তখন এসব আলেমরাই হয়তো বলবে খলিফা মাহাদী (যখন মাহাদী (হাফি) আসবে তাকে অস্বীকার করবে) ও দাজ্জাল আসতে এখনও দেরি আছে।