কেয়ামতের আলামত পর্ব-১০ (ইস্তাম্বুল বিজয়)

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বাইতুল মাকদিসে বসতি স্থাপন ইয়াসরিবের বিপর্যয়ের কারণ হবে এবং ইয়াসরিবের বিপর্যয় সংঘাতের (মালহামা) কারণ হবে। যুদ্ধের ফলে কুস্তুনতুনিয়া বিজিত হবে এবং কুস্তুনতুনিয়া বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের আলামত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন তার ঊরুতে বা কাঁধে নিজের হাত দ্বারা মৃদু আঘাত করে বলেন, এটা নিশ্চিত সত্য, যেমন তুমি এখানে উপস্থিত, যেমন তুমি এখানে বসা আছো। অর্থাৎ তিনি মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে লক্ষ করে বলেন। (আবুদাউদ -৪২৯৪,আহমদ)

হাদীস হতে বুঝা যায় বায়তুল মাকদীসে যখন বসতি হবে তখন মদীনা বা ইয়াসরিবের বিপর্যয়ের কারণ হবে। এরপর মালহামা, ও মালহামার ফলশ্রুতিতে ইস্তাম্বুল বিজয় এবং এরপর দাজ্জাল বের হবে।

এখন হাদীসগুলো নিয়ে অনেকে ব্যাখা করে জেরুজালেম ইহুদিদের বসতি হবে আবার অনেকে বলে সুলতান ফতেহ মাহমুদের সময় ইস্তাম্বুল বিজয় হয়েছে।

কিন্তু মুহাদ্দিসগণের আলোচনা হতে যেটা সঠিক মনে হয়েছে – এখানে হাদীসে ইহুদিদের বসতির কথা উল্লেখ নেই বরং বহু হাদীস দ্বারা এটা বুঝা যায় জেরুজালেমে খেলাফত প্রতিষ্ঠা হবে তখন মুসলিমদের বসতি হবে, এরপর রুমের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধবিরতি সন্ধি হবে তা ভঙ্গ করে ওরা যুদ্ধ করতে আসবে তখন মুসলিমরা মদীনা হতে মুসলিম বাহিনী নিয়ে ওদের মোকাবিলায় দাবিক বা আমাকে আসবে তাই মদীনা খালি হবে। (মুসলিম শরীফ- কেয়ামতের ফেতনা অধ্যায়, আবু দাউদ)।

আবদুল্লাহ ইবনু হাওয়ালাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এ গনীমতের সম্পদ লাভ করার জন্য আমাদেরকে পদাতিক বাহিনী হিসেবে এক অভিযানে পাঠালেন।

আমরা এমন অবস্থায় ফিরে আসলাম যে, আমরা গনীমতের কিছুই লাভ করতে পারিনি। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তি ও দুর্বলতার ছাপ দেখতে পেয়ে আমাদের মাঝে (বক্তৃতার উদ্দেশ্যে) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তাদের দায়িত্ব এভাবে আমার ওপর অর্পণ করো না যে, আমি তাদের পক্ষ হতে তা বহন করতে দুর্বল হয়ে পড়ি।

(হে আল্লাহ!) তাদের ওপর এমন কাজের দায়িত্ব অর্পণ করো না যা সমাধা করতে তারা অক্ষম হয়ে পড়ে। (হে আল্লাহ!) তাদেরকে অন্য লোকের ওপরও অর্পণ করো না। কেননা তারা নিজেদের প্রয়োজনকে তাদের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দেবে।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি (সা.) আমার মাথার উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, হে ইবনু হাওয়ালাহ্! যখন তুমি দেখবে খিলাফাত (মদীনাহ্ হতে স্থানান্তরিত হয়ে) পবিত্র ভূমিতে (বায়তুল মাকদিস) পৌছে গেছে, তখন তুমি বুঝে নিবে যে, ভূমিকম্প, দুঃখ-দুর্দশা, বড় বড় নিদর্শনসমূহ ও ফিতনা-ফাসাদ খুবই কাছে এসে গেছে এবং আমার এই হাত তোমার মাথা থেকে যত নিকটে, কিয়ামত সেদিন এটা অপেক্ষাও অতি কাছাকাছি হবে। (সহীহ: আবু দাউদ ২৫৩৫)।

হাসসান ইবনু আতিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, মাকহুল ও ইবনু আবূ যাকারিয়া খালিদ ইবনু মা’দান-এর নিকট যেতে রওয়ানা হলে আমিও তাদের সঙ্গে গেলাম। তারা জুবায়র ইবনু নুফাইরের সূত্রে আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করলেন সন্ধি সম্পর্কে। তিনি বলেন, জুবায়র (রহঃ) বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবী যু-মিখবার (রাঃ)-এর নিকট চলুন। সুতরাং আমরা তার নিকট উপস্থিত হলে জুবায়র তাকে সন্ধি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ অচিরেই তোমরা রোমানদের সঙ্গে সন্ধি করবে। অতঃপর তোমরা ও তারা একত্র হয়ে তোমাদের পশ্চাৎবর্তী একদল শত্রুর মোকাবিলা করবে। তোমরা তাতে বিজয়ী হবে, গানীমাত অর্জন করবে এবং নিরাপদে ফিরে আসবে। শেষে তোমরা টিলাযুক্ত একটি মাঠে যাত্রাবিরতি করবে। অতঃপর খৃষ্টানদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি ক্রুশ উপরে উত্তোলন করে বলবে, ক্রুশ বিজয়ী হয়েছে। এতে মুসলিমদের মধ্যকার এক ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে তাকে হত্যা করবে। তখন রোমানরা চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিবে। (আবুদাউদ)

যেরূপটা বদর, উহুদের সময় হয়েছিল। সাহাবীরা মদীনায় থাকার মর্যাদা জানা স্বত্বেও জেহাদের জন্য বের হয়েছিলেন।

সুলতান ফতেহ মাহমুদ কি সত্যিই হাদিসে বর্ণিত ইস্তাম্বুল বিজয় করেছিল?

সুলতান ফতেহ মাহমুদের সময় ইস্তাম্বুল বিজয় যদি হাদীসে বর্নিত বিজয় ধরি তাহলে দাজ্জাল প্রকাশিত হয়নি কেন!? কারণ সবগুলো হাদিস মিলালে সহজ হবে – আসুন দেখি। যেসব হাদীসে বলা হয় – মদীনাহ একেবারে জনশূন্য হয়ে যাবে, পশুপাখি থাকবে তা আসলে ঈসা (আ:) ও মুসলিমরা বিশ্ব হতে বিদায় নেওয়ার পর যখন মানুষের কাছে মদীনার গুরুত্ব কমে যাবে।

আর মদীনার মর্যাদার হাদীস রয়েছে। আর উমর (রা) মদীনায় শাহাদাতের দোয়া করেন আর আল্লাহ কবুল করেন তাহলে খলিফা মাহাদী (হাফি) ও তার বাহিনী মদীনার মর্যাদা ছেড়ে দাবিক ও জেরুজালেমে কেন যাবে? আসলে তা মালহামা ও দাজ্জালের মেকাবিলা করার জন্য। ঈসা (আঃ) জেরুজালেম মসজিদে সালাত পড়াবেন। কারণ দাজ্জালের যুগেও মদীনায় মুসলিম ও মুনাফেক থাকবে আর দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।

এছাড়া মুসলিম শরীফের সকল হাদীস মিলালে দেখা যায়-

১. ইস্তাম্বুল বিজয় হবে মালহামার পর

২. সে বাহিনীতে যারা থাকবে তাদের ও তাদের নেতার প্রশংসা করা হয়েছে। অর্থাৎ নিশ্চিতরূপে তোমরা কুস্তুনতুনিয়া জয় করবে। সুতরাং তার শাসক কতই না উত্তম হবে এবং তার জয় লাভকারী সৈন্যরাও কতই না উত্তম হবে! (মুসনাদে আহমদ)। অপরদিকে সুলতান ফতেহর জীবনী নিয়ে বিতর্ক আছে, তার বিজয়ে জেনেসারিদের ভূমিকা বেশি। আর খলিফা হবে কোরাইশ হতে (সহীহ মুসলিম – প্রশাসন অধ্যায়ের বহু হাদীস আছে) এখানে শাসক বলতে খলিফা মাহাদীকে (হাফি:) বুঝানো হয়েছে।

৩. হাদীসে আছে – মালহামা হবে নওমুসলিমদের বাচানোকে কেন্দ্র করে। “কিয়ামত কায়িম হবে না যতক্ষণ না রোমানরা আ’মাক কিংবা দাবিক নামক এলাকাদ্বয়ে অবস্থান করবে। (যা শাম এলাকার ‘হালাব শহরের নিকটবর্তী এলাকা)।

তখন মদীনা থেকে মোসলমানদের একটি সেনাদল তাদের উদ্দেশ্যে বেরুবে। তারাই হবে সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। যখন তারা পরস্পর যুদ্ধের জন্য মুখোমুখী হবে তখন রোমানরা বলবে: তোমরা ওসকল ব্যক্তিদেরকে আমাদের হাতে তুলে দাও যারা ইতিপূর্বে আমাদের মধ্য থেকেই ধর্মান্তরিত হয়েছে। আমরা তাদের সাথেই যুদ্ধ করবো (এটা এ কথা প্রমাণ করে যে, ইতিপূর্বে মোসলমান ও রোমানদের মাঝে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। যাতে মোসলমানরা তাদের উপর জয়ী হয়েছে। আর তখন রোমানরা মোসলমানদের হাতে ধরা পড়ে পরবর্তীতে তারা মোসলমান হয়ে আবার মোসলমানদের সাথেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে)। তখন মোসলমানরা বলবে: না, তা হতে পারে না। আল্লাহ’র কসম ! আমরা আমাদের মোসলমান ভাইদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারবো না। তখন তাদের পরস্পরের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হবে। তাতে মোসলমানদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পালিয়ে যাবে যাদের তাওবা আল্লাহ তা’আলা কখনো কবুল করবেন না। আরেক তৃতীয়াংশ সৈন্যকে হত্যা করা হবে যারা হবে আল্লাহ তা’আলার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ এবং আরেক তৃতীয়াংশ সৈন্য যুদ্ধে জয়লাভ করবে যারা আর কখনো পরীক্ষার সম্মুখীন হবে না। তখন তারা কুস্তুনতুনিয়্যাহ তথা ইস্তাম্বুল শহর বিজয় করবে। যখন তারা নিজেদের তলোয়ারগুলো যায়তুন গাছে টাঙ্গিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদগুলো নিজেদের মাঝে বন্টন করবে তখনই শয়তান তাদেরকে ভীত করার জন্য চিৎকার দিয়ে বলবে: দাজ্জাল তো এখন তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের উপর এক ভীষণ তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। তখন তারা দ্রুত তার উদ্দেশ্যে বের হবে; অথচ কথাটি একটি গুজব মাত্র। এ দিকে যখন মোসলমানরা শাম এলাকা তথা সিরিয়ায় পৌঁছুবে তখনই দাজ্জাল বের হবে।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন তারা রোমানদের সাথে যুদ্ধের পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বন্টন করার এখনো সুযোগ পায়নি এমতাবস্থায় তারা দাজ্জালের কথা শুনে তার সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিবে ও সবাই সারিবদ্ধ হবে তখনই নামাযের ইক্বামাত দেয়া হবে এবং ঈসা (আ) অবতীর্ণ হবেন। (মুসলিম শরীফ)

৪. ইস্তাম্বুল বিজয়ে অস্ত্র হবে কালেমা ও তাকবীর ধ্বনি যা সুলতান ফতেহর সময় হয়নি।

তাহলে সুলতান ফতেহর নাম কেন ছড়ালো?

সুলতান ফতেহর জীবদ্দশায় তেমন কেউ দাবি করেনি তিনি হাদিসে বর্ণিত সেই মহান নেতা। আব্বাসীরা কোরাইশি হওয়া স্বত্বেও খলিফা দাবি করতো যদিও তা রাজতন্ত্র ছিল, ও জুলুম করতো। পরে উসমানীরা সুলতান ফতেহ মাহমুদের বিজয়কে হাদীসে বর্নিত বিজয় অভিহিত করে যুদ্ধ করে বিজয় লাভ করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামে বংশধারার ভিত্তিতে নয়, মজলিসে শুরার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন হয়।

মুহাম্মাদ বিন যায়দ বর্ণনা করেন যে যখন মু’আবিয়াহ তার ছেলের জন্য বায়আত নিচ্ছিলেন, মারওয়ান বললঃ “এটি আবু বাকার ও উমারের সুন্নাহ”। “আব্দুর রহমান জবাব দিলেনঃ “এটি হারকাল ও কায়সারের সুন্নাহ্”। তখন মারওয়ান বললঃ “এই সেই ব্যক্তি, যার ব্যাপারে কুরআনে অবতীর্ণ হয়েছে, আর এমন লোক আছে যে, মাতাপিতাকে বলে, তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা কি আমাকে এ ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হব যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে, তখন তার মাতাপিতা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য। বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু সে বলে এ তো অতীতকালের উপকথা ব্যতীত কিছুই নয়। [সুরা আহক্বাফ ৪৬:১৭] ।

একথা শুনে ‘আইশাহ্ বললেনঃ “আল্লাহর কসম! সে মিথ্যা বলেছে, আল্লাহ্ এই আয়াত আমাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ করেননি। আর আমি যদি চাই, তাহলে বলতে পারি এই আয়াত কার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমি আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মারওয়ান ও তার পিতার ওপর লা’নত করতে শুনেছি, যখনও মারওয়ান জন্ম নেয়নি। কাজেই, মারওয়ান আল্লাহর লা’নতের ভাগীদার”।

[সহিহ বুখারী: ৪৮২৭, সুনানুন নাসাই আল কুবরাঃ ১১৪৯১, মুস্তাদরাক লিল হাকিমঃ ৮৪৮৩, ইমাম হাকিম বলেনঃ হাদিসটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ]

উসমানীরা ছিল যাযাবার জাতি, যারা সুলতানের চেয়ে গোত্রপ্রধানদের প্রতি অনুগত থাকতো। ফলে বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখা দিত আর সুলতানদের বংশধররা ক্ষমতার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাই সুলতান জেনেসারি বাহিনী গড়ে তোলেন নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে।

জেনেসারিদের উৎপত্তি নিয়ে প্রায়ই হাজি বেকতাশ নামক জনৈক দরবেশের কথা বলা হয়। ওরহানকে যিনি ‘ইয়েনিচারি’ বা নতুন সৈন্যদল গঠনের কথা বলেন। এই ইয়েনিচারি থেকেই জেনেসারি নামের উদ্ভব বলে ধরা হয়। সে যা-ই হোক, জেনেসারিদের ‍গোটা ইতিহাসে এই বেকতাশি মতবাদ প্রভাব রেখেছে। এ কথাও সত্য, সেই সময়ে বেশিরভাগ রাজ্যের সৈন্যরা লাল টুপি পড়তো। এদের মধ্যে সাফাভি, খ্রিস্টান, এমনকি আনাতোলিয়ার বেলিকরাও ছিলো। যুদ্ধের মাঠে কিংবা অন্যত্র অটোম্যান সৈন্যকে যেন চিনতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য সাদা টুপির পরামর্শ দেন আলি পাশা। বিশেষ বাহিনী হিসেবে জেনেসারিদের আত্মপ্রকাশ এখান থেকেই। ওরহানের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসা তৃতীয় শাসক মুরাদকে (১৩৬২-৮৯) কৃতিত্ব দেয়াটা হবে বেশি যৌক্তিক। প্রথমদিকে যুদ্ধলব্ধ দাসের এক-পঞ্চমাংশ ‍সুলতান নিজের জন্য পেতেন, যার থেকে শুধুমাত্র সুলতানের অনুগত এক বিশেষ বাহিনী গঠিত হয়। এজন্য অনেক ঐতিহাসিক জেনেসারির প্রতিষ্ঠাতা বলতে মুরাদের নাম আনতে চান।

দেভশিরমে পদ্ধতির মাধ্যমে জেনেসারিতে সৈন্য নিয়োগ দেয়া হতে থাকে ১৩৮০ সাল থেকে। দেভশিরমে মানে Blood Tax বা রক্ত কর। এটি ছিলো অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আনাতোলিয়া ও বলকান অঞ্চলের খ্রিস্টানদের জন্য। ৮-১৮ বছরের ছেলেদের রাষ্ট্রের সেবার জন্য তাদের পরিবার থেকে ধরে আনা হতো। প্রতি ৪০ ঘরের জন্য এক ছেলে। দেভশিরমের স্বর্ণসময়ে প্রতিবার ১,০০০-৩,০০০ তরুণকে নেয়া হতো। গ্রীস, বলকান ও রাশিয়া হতে নিয়ে জেনেসারি বাহিনী বানানো হতো।

আস্তে আস্তে তারা বড় পদ দখল করে এবং ইস্তাম্বুল বিজয়ের তাদের অবদান ছিল বেশি। পরে তারা অত্যাচারী হয়ে উঠে, রাজাদের বিদ্রোহ করে কখনও রাজাদের ক্ষমতা হতে সরায়।

শাসক দ্বিতীয় উসমান পরপর কয়েকটি যুদ্ধে হারের পর জেনেসারি বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করেন। কিন্তু সেই জেনেসারিদের কাছেই বন্দী অবস্থায় নিহত হতে হয় তাকে। জেনেসারিদের ক্ষমতা উত্তরোত্তর লাগামছাড়া হচ্ছিলো। তৃতীয় সেলিম এদিক বুঝতে পেরে নিজামে জাদীদ নামে নতুন বাহিনী গড়ে তোলেন। পরে দ্বিতীয় মাহমুদের সময় বিদ্রোহ করে জেনেসারিরা। কিন্তু ততদিনে জেনেসারি বিরোধী একটা শ্রেণী তৈরি হয়ে গেছে সুলতানের চারপাশে।

জেনেসারিদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, কাউকে পুড়িয়ে মারা হয়। এসময় কুর্দী ও ডনমেদের ব্যবহৃত করা হয়েছিল বলে অনেকের অভিমত। তুর্কীদের নথিপত্র হতে নামনিশানা মুছে ফেলা হয়। ১৮২৬ সালের দিকে জেনেসারি শেষ হওয়ার কিছু বছর পর উসমানীদের পতন হয়। এই ইতিহাস মুসলিমরা ভুলে গেলেও বলকানসহ রাশিয়ার লোকেরা মনে রেখেছে। তাই তাদের আক্রমণ হতে বাচতে তুরস্ক ন্যাটোতে যোগ দেয় অপরদিকে উসমানীয়দের পতনের পর কুর্দীদের সুযোগ সুবিধা কমে আসে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের দ্বারা যেমন ইসলামের অনেক ভালো কাজ হয়েছিল তেমনি জুলুম ও বিদআত ছড়িয়েছিল। তাই মানুষকে খেলাফায় রাশেদীন, সাহাবী, আহলে বায়াতের জীবনী জানান ও তাদের অনুসরণ করাই উত্তম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *