কুরবানি (قربانى) শব্দটি আরবি। ‘কোরবানুন’ মাসদার থেকে শব্দটির উৎপত্তি। কুরবানি শব্দের অর্থ হলো, নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য লাভ, আত্নত্যাগ, জবেহ ইত্যাদি। শরীয়তের পরিভাষায়, মহান আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তোষ লাভের আশায় নির্ধারিত তারিখের মধ্যে হালাল কোন পশু আল্লাহর নামে জবেহ করা।
কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন:
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানি নির্ধারণ করেছি যাতে তারা হালাল পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’
সূরা হজ-৩৪
কুরবানির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই কুরবানির শর্ত হল শিরকমুক্ত আকীদা ও হালাল সম্পদ দ্বারা তা আদায় করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:
‘নিশ্চই আমার নিকট কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই কবুল হয় না, তবে আমার নিকট পৌঁছে একমাত্র তাকওয়া।’
সূরা হজ-৩৭
আদম (আঃ) এর পুত্রদের ঘটনাঃ
আল্লাহ বলেন-
“হে রাসুল! আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত যথাযথভাবে পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়েই কুরবানি করেছিল, তখন একজনের কুরবানি কবুল হল এবং অন্যজনের কুরবানি কবুল হল না। সে (কাবিল) বলল, আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন (হাবিল) বলল, অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিদের কুরবানি কবুল করেন।’ সে (হাবিল) বলল, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হাত বাড়াবো না। কেননা আমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।’”
সুরা মায়েদা: আয়াত ২৭-২৮
আদম (আঃ) এর এক সন্তান ছিল তাকওয়াপূর্ণ এবং সে উত্তম পশু কুরবানি করেন আল্লাহ তা কবুল করেন। এতে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মুত্তাকী হওয়ার প্রমাণ হয়। অপরদিকে তাকওয়াপূর্ণ না হওয়ায় অপরজনের কুরবানী কবুল হয়নি। এতে সে নিজেকে সংশোধন না করে উল্টো শত্রুতাবশত নিজ ভাইকে হত্যা করলো। কাবিলের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল সে আল্লাহর ফায়সালা/বিচারে অনুগত বা সন্তুষ্ট না হয়ে বরং ইবলিসের মত শত্রুতায় লিপ্ত হয়।
এখন যারা কাবিলের মত আল্লাহর কুরআনের আইন, বিচার, নিয়মনীতি নিয়ে সমালোচনা করেন অন্যরা সংশোধনের দাওয়াত দিলে তাদের নামে উল্টো হামলা, মামলা চালায় তারা যত বড় পশু জবাই করুক না কেন তাদের কুরবানী হবে কাবিলের মত।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, তার খুনের বোঝা আদম (আঃ)-এর ঐ প্রথম সন্তানের উপরেই পতিত হয়। কেননা সে-ই সর্বপ্রথম ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে রক্ত বইয়েছিল।” (বুখারী ও মুসলিম)।
তাহলে যারা কোন সমাজে কুফর, শিরক গোনাহ চালু করলো যতগুলো লোক তা পালন করবে, চালুকৃত ব্যক্তিদের উপরও গোনাহ লিখিত হবে। অপরদিকে ইব্রাহিম (আঃ) ও তার পুত্র ইসমাইল (আঃ) বিনা যুক্তিতে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছিলেন। আল্লাহ পরীক্ষা করেছিলেন – ইব্রাহিম (আঃ) এর নিকট আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে প্রিয় কিনা!?
আল্লাহ বলেন,
“অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন।”
সূরা আস সাফফাতঃ ১০২-১১১
আল্লাহর বিধানের প্রতি একনিষ্ঠ অনুগত্যই ছিল ইব্রাহিম (আঃ)-এর আদর্শ। প্রকৃত মুত্তাকীরা আজও তাই মেনে চলে। যারা তথাকথিত নেতাদের আদর্শ মানতে গিয়ে আল্লাহর আইন, বিধানের বিপরীত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে তাদের কুরবানী কি আসলে কবুলযোগ্য!?