কবর হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও কারামত নিয়ে বাড়াবাড়ি

সাহাবী, বুজুর্গদের কারামত সত্যি, এমনকি খলিফা মাহাদী (হাফি:) ও ঈসার (আ:) সময়ও কারামত সংগঠিত হবে। তবে কারামতের নামে বাড়াবাড়ি ও মিথ্যাচার হতে সতর্ক থাকার জন্য দ্বীনের সঠিক ইলম প্রয়োজন।

এমনি একটা হল – অনেকে দাবি করে এমন সাহাবী, বুজুর্গ এমনকি লাশের হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়- এভাবে ভারত উপমহাদেশে বহু মাজার গড়ে উঠছে, পরে দ্বীন ইসলামের চর্চা বাদ দিয়ে এসব মাজারকে কেন্দ্র করে ব্যবসা গড়ে উঠছে।

আসলেই কি দুনিয়ায় জীবিত থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়?

উহুদ যুদ্ধের সময় রসুলের (সা:) সাহাবী সুঘ্রাণ পেয়েছেন অনেকে তা দলিল হিসেবে প্রচার করে। হাদীসটা দেখি-

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার চাচা আনাস ইব্‌নু নাযার (রাঃ) বদরের যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের সঙ্গে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম।

আল্লাহ্‌ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে শরীক হবার সুযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ দেখতে পাবেন যে, আমি কী করি।’ অতঃপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে আনাস ইব্‌নু নাযার (রাঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ! এঁরা অর্থাৎ তাঁর সাহাবীরা যা করেছেন, তার সন্বন্ধে আপনার নিকট ওযর পেশ করছি এবং এরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন, এবং সা‘দ ইব্‌নু মু‘আযের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, হে সা‘দ ইব্‌নু মু‘আয, (আমার কাম্য)। নাযারের রবের কসম, উহুদের দিক থেকে আমি জান্নাতের সুগন্ধ পাচ্ছি।

সা‘দ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা তাকে এমতাবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের যখম রয়েছে। আমরা তাকে নিহত অবস্থায় পেলাম।

মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে দিয়েছিল। তার বোন ব্যতীত কেউ তাকে চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমাদের ধারণা, কুরআনের এই আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মত মুনিনদের সম্মর্কে নাযিল হয়েছে। “মু’মিনদের মধ্যে হতে কিছু সংখ্যাক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে।” (আল-আহযাবঃ ২৩)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৮০৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

অনেক আলেমরা দুটো মতবাদ দেন- একটি হল আল্লাহ তাকে শাহাদাতে অনুপ্রাণিত করতে এমন সুগন্ধি দান করেন, তার নিকট জান্নাতের সুগন্ধি মনে হয়েছিল। দ্বিতীয় মত হল – তিনি শহীদ হবার পূর্বে সত্যি জান্নাতের সুঘ্রাণ পেয়েছেন। তার কাছে মনে হয়েছিল উহুদের দিক হতে আসছে। জান্নাতের সুগন্ধি বহুদূর হতে আসে। এই থেকে আলেমদের অভিমত- অনেক শহীদ মৃত্যুর পূর্বে জান্নাতের সুঘ্রাণ পেতে পারেন। এটা শহীদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত।

একটু লক্ষ্য করুন- আনাস ইবনে নাযারের (রা:) পাশে জীবিত অনেক সাহাবী থাকলেও তারা সুঘ্রাণ পাননি। কারণ এটা শুধু তার জন্য সীমাবদ্ধ ছিল, তিনি শহীদ হবেন। এই ঘটনাকে ভিত্তি করে যুগে যুগে অনেকে কবর হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফলস্বরূপ জান্নাত দেওয়া হবে।

সাঈদ ইবনু আমর আশআছী ও যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত রেখেছি যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি।

আল-কুরআনে এর সত্যায়ন রয়েছে “কেউ জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ।” (সূরা সাজদাঃ ১৭)। (সহীহ মুসলিম)

জান্নাতের নেয়ামত এমন- মানুষের কল্পনার বাহিরে। জান্নাতের কোন নেয়ামত ছিনিয়ে নেওয়া হয় না। জান্নাতে একবার প্রবেশ করলে তাকে জান্নাত হতে বের করা হবে না। তাই কারো জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার অর্থ হল তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। শহীদরা জান্নাতে রিযিক পান তা আমাদের কল্পনার বাহিরে। জান্নাতের সুঘ্রাণও তার রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে তার সে রিযিক অন্য জীবিত ব্যক্তি কিভাবে পাবে যার জান্নাত নিশ্চিত হয়নি বা শাহাদাতও বরন করেননি?

আল্লাহ বলেন,

আর আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।

সূরা আল বাকারা, ১৫৪

প্রত্যেক মৃত ব্যক্তি আলমে-বরযখে বা কবরে বিশেষ ধরণের এক প্রকার হায়াত বা জীবন প্রাপ্ত হয় এবং সে জীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবরের আযাব বা সওয়াব ভোগ করে থাকে। তবে সে জীবনের হাকীকত আমরা জানি না। যেসব লোক আল্লাহর রাস্তায় নিহত হন, তাদেরকে শহীদ বলা হয়। তাদের মৃত্যুকে অন্যান্যদের মৃত্যুর সমপর্যায়ভুক্ত মনে করতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা, মৃত্যুর পর প্রত্যেকেই বরযখের জীবন লাভ করে থাকে এবং সে জীবনের পুরস্কার অথবা শাস্তি ভোগ করতে থাকে। কিন্তু শহীদগণকে সে জীবনের অন্যান্য মৃতের তুলনায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়।

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শহীদগণের রূহ সবুজ পাখীতে প্রতিস্থাপন করা হয়, ফলে তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারে। তারপর তারা আরশের নীচে অবস্থিত কিছু ঝাড়বাতির মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন তাদের রব তাদের প্রতি এক দৃষ্টি দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি চাও? তারা বলে হে রব! আমরা কি চাইতে পারি? আমাদেরকে যা দিয়েছেন তা তো আপনি আপনার কোন সৃষ্টিকে দেন নি। তারপরও তাদের রব আবার তাদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে অনুরূপ প্রশ্ন করেন।

যখন তারা বুঝল যে, তারা কিছু চাইতেই হবে, তখন তারা বলে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ফেরৎ পাঠান, যাতে আমরা পুনরায় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি। শহীদগণের সাওয়াবের আধিক্য দেখেই তারা এ কথা বলবে- তখন তাদের মহান রব তাদের বলবেন, আমি এটা পূর্বে নির্ধারিত করে নিয়েছি যে, এখান থেকে আর ফেরার কোন সুযোগ নেই।” [মুসলিম: ১৮৮৭]

মানুষ আমল অনুযায়ী জান্নাতে তার মর্যাদা পাবে। কোন সাহাবী, বুজুর্গের কবর হতে সুঘ্রাণ সাধারণ মানুষ পাবে না। এই কথার অর্থ এই না যে – তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়। বরং হামযা (রা:) সহ অনেক সাহাবীরা হল নবী, রসুলদের পরবর্তী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তারা যে মর্যাদা বা রিযিক পাবেন তা সাধারণ মুসলিম পাবে না! তাই তারা বারযাখের জীবনে কোন সুঘ্রাণ পেয়ে থাকেন তা হবে সবচেয়ে উত্তম যা সাধারণ মুসলিম পাবে না! আর কোন জীবিত ব্যক্তি যদি জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার দাবি করে এটা এই জীবিত ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর নেয়ামত হবে তা নির্দিষ্ট কবরে গেলে পাওয়ার প্রয়োজন কি!? আল্লাহ চাইলে যেকোন স্থান হতে সুঘ্রাণ দিতে পারেন!

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি পরের বাপকে নিজের বাপ বলে দাবী করে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধি ৫০০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ ২/১৭ ১, ইবনে মাজাহ ২৬১১, সহীহুল জামে ৫৯৮৮নং)

আহমাদের এক বর্ণনায় আছে ৭০ বছরের দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে। (সঃ তারগীব ১৯৮৮নং)

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন সন্ধি অথবা চুক্তিবদ্ধ (যিম্মী) মানুষকে হত্যা করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতের সুবাসও পাবে না। অথচ তার সুবাস ৪০ বছরে অতিক্রম্য দূরবর্তী স্থান থেকেও পাওয়া যাবে।” (আহমাদ, বুখারী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে’ ৬৪৫৭নং)

আর জান্নাতের সুঘ্রাণ পেলে তার দুনিয়ার কোন নেয়ামত কি আর ভালো লাগবে, চিন্তা করুন!?

এবার আসি হামজা (রা:) এর কবর হতে সুঘ্রাণ আসে ঘটনা কতটুকু সত্যি একটু জেনে নিই!

ইমাম বুখারীর বর্ণনাটি অধিকতর প্রামাণ্য। তিনি বর্ণনা করেছেন, কুতায়বা- – – – জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ সূত্রে তিনি বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) উহুদের শহীদগণের মধ্যে দুজন দুজন করে, এক কাপড়ের মধ্যে একত্রিত করছিলেন আর বলছিলেন, দুজনের মধ্যে কুরআন চর্চায় কে অগ্রগামী ছিলেন? কোন একজন স্পষ্ট ইঙ্গিত করা হলে তিনি তাঁকেই কবরে সম্মুখে রাখছিলেন। তিনি বলছিলেন যে, আমি কিয়ামতের দিনে এদের পক্ষে সাক্ষ্য দেব। রক্তসহ তিনি ওদেরকে দাফন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের জানাযাও পড়া হয়নি। তাদেরকে গোসলও দেয়া হয়নি। এটি ইমাম বুখারীর একক বর্ণনা।

ইমাম আহমদ বলেছেন, মুহাম্মাদ ইবন জা’ফর জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) থেকে যে, তিনি উহুদের শহীদগণ সম্পর্কে স্পষ্ট বলেছেন, কিয়ামতের দিন তাদের প্রত্যেক ক্ষতস্থান থেকে অথবা তাদের রক্ত থেকে মেশকের ঘ্রাণ বের হতে থাকবে। তিনি শহীদদের জানাযার নামায পড়েননি। বর্ণিত আছে যে, পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর ওফাতের কিছু দিন পূর্বে তিনি ওই শহীদদের জন্যে নামায আদায় করেছিলেন, এ প্রসংগে ইমাম বুখারী (রা) বলেছেন, মুহাম্মাদ ইব্‌ন আবদুর রহীম উকবাই আমির (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আট বছর পর রাসূলুল্লাহ্ (সা) উহুদের শহীদদের জন্য নামায আদায় করেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন জীবিত ও মৃত লোকদের থেকে বিদায় গ্রহণকারীর ন্যায়। তারপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং বললেন, আমি তোমাদের আগে যাত্রা করব। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৪ খন্ড- পৃ ৮৪)

রসুল (সা:), সাহাবীরা কোনদিন বলেন নি- হামজার (রা) কবর হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে!! অথচ রসুল (সা:) হামজাকে (রা:) সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তার মানে কেয়ামতের দিন শহীদের ক্ষতস্থান বা রক্ত হতে মেশকের সুঘ্রাণ আসবে। এখানে মেশকের সুঘ্রাণ বলা হয়েছে জান্নাতের নয় তাও কেয়ামত দিবসে হয়তো মুসলিমরা দেখতে পারবে, তবে দুনিয়াতে নয়!?

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ্ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উহুদের শহীদদের দাফন করার দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর ওই কবরস্থানের পাশ দিয়ে খাল খনন শুরু করা হয়। তখন আমাদেরকে ওখানে ডাকা হয়। আমরা লাশগুলো বের করে আনি। ঘটনাক্রমে হযরত হামযা (রা)-এর পায়ে কোদালের আঘাত লাগে, তাতে তাঁর পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। ইবনে ইসহাক হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন যে, আমরা তাঁদেরকে কবর থেকে বের করে আনি এ অবস্থায় যে, যেন মাত্র গতকালই তাঁদেরকে দাফন করা হয়েছিল। ওয়াকিদী বলেন, হযরত মুআবিয়া (রা) যখন খাল খননের সিদ্ধান্ত নিলেন। তখন তিনি একজন ঘোষক পাঠিয়ে ঘোষণা প্রচার করলেন যে, উহুদ প্রান্তরে যাদের শহীদ আত্মীয়-স্বজন রয়েছে তারা যেন সেখানে হাযির থাকেন। জাবির (রা) বলেন, আমরা তাঁদের কবর খুলে ফেলি। আমি আমার পিতাকে পেলাম স্বাভাবিক অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। তারই কবরে পেলাম তার সাথী আমের ইবনে জামূহকে। তার হাত ছিল ক্ষতস্হানের উপর এবং তার ক্ষতস্থান হতে রক্ত বের হয়। তা, মৃত্যুর ছেচল্লিশ বছর পর হয়েছিল। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃ-৮৬)

এরপর গুজব রটে আমর ইবনে জামূহ-এর শরীর হতে মেশকের সুঘ্রাণ এসেছিল, জান্নাতের নয়। এটা গুজব ছিল, সহীহ কোন দলিল নেই। আর মেশকের সুঘ্রাণ বা জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার দাবি এসেছে কবর খুড়ার পর ভুলবশত এর পূর্বে নয় যখন তারা কবরে শায়িত ছিল। তার মানে প্রমানিত হয় যে শহীদের শরীর আল্লাহ অবিকৃত রাখেন- সাধারণ মানুষ তাদের শরীরটা দেখে কিন্তু বারযাখের জীবনে আল্লাহ কি নেয়ামত দিয়েছেন তা উপলব্ধি করতে পারে না তা সুঘ্রাণ হোক বা অন্যকিছু।

আর কারো শত্রুতাবশত বিরোধিতা আমাদের উদ্দেশ্য যেন না হয়- মানে রাখতে হবে দ্বীনের দলিল হল কুরআন, সুন্নাহ। কোন ব্যক্তি বা দল নয়।

অনেক কাজ হতে সুগন্ধি হয়, কস্তুরি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি সুগন্ধি যা হয় হরিন হতে। এজন্য এটা কি হরিন, গাছের ফজিলত না আল্লাহর নেয়ামত, রহমত মেনে তার ইবাদত করা উচিত। তেমনি কোন কবরের মাটি হতে সুগন্ধি বা বাশ হতে পানি আসে এগুলো আল্লাহর নেয়ামত, রহমত। এজন্য এমন ব্যক্তির কবর, মাজারের ফজিলতের নামে বিদআতী ইবাদত করবেন না, আল্লাহর নিকট শোকরিয়া জানানো উচিত!?

আর যদি কারো কবর হতে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়ার যায়- তবে তার সবচেয়ে বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা কি আমাদের শ্রেষ্ঠ রসুল হযরত মোহাম্মদ (সা:) রওজা মোবারক হতে নয় কি? পৃথিবীতে থাকতে যার ঘামের সুঘ্রাণ ছিল মেশকের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এবংকি সাহাবীরা রসুলের (সা) ঘাম সংগ্রহন করতেন।

হযরত উম্মে সুলাইমান (রাঃ) বলেন, হুযুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসল্লাম দ্বিপ্রহরে আমাদের ঘরে তশরীফ এনে বিশ্রাম নিতেন । বিশ্রামকালে তাঁর দেহ মোবারক থেকে ঘাম মুবারক নির্গত হয়ে বিছানা ভিজে যেত। আর আমি সে ঘাম মুবারক একত্রিত করতাম, একদা নবীজী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-

হে উম্মে সুলাইমান তুমি কি করছো ? আমি বললাম-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার পবিত্র ঘাম মুবারক হতে আমাদের চেহারা বরকত হাসিল করবে। আমাদের কাছে যত সুগন্ধি রয়েছে তন্মধ্যে অধিক সুগন্ধি হচ্ছে আঁপনার ঘাম মুবারক। একথা শুনে নবীজী জবাব দিলেন, হে উম্মে সুলাইমান তুমি সত্যিই বলেছ।

মুসলিম শরীফ: ২য় খন্ড,২৫৭ পৃঃ * মাসাবীহুস সুন্নাহ ৪র্থ খন্ড,৪৮ পৃঃ *(গ.) মিশকাত শরীফ: ২১৭

কখনো কি সাহাবী, তাবেয়ীরা এরকম দাবি করেছেন? তাই কবর থেকে সুঘ্রাণ পাওয়ার কথা না জানিয়ে বরং সেই রসূলের (সা) জীবনী জানান পৃথিবীতে থাকতেই যার ঘামের গন্ধও ছিল মেশকের চেয়ে সুঘ্রাণযুক্ত, এবং জান্নাতেও যিনি হবেন শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *