ঐক্য ও তাকিয়া

বর্তমানে বহু আলেম শিয়া, সুন্নী সবাইকে ঐক্য করতে চান অথচ ঐক্য হয় আকীদার ভিত্তিতে সেটাই যেন ভুলে যান।

শিয়াদের বহু আকীদাই বিভ্রান্ত

ইমামের নিষ্পাপ হওয়ার আকিদা পোষণ করা; যা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খতমে নবুওয়তের আকিদার পরিপন্থী।

১. ‘কুরআন বিকৃত ও পরিবর্তিত অবস্থায় মওজুদ রয়েছে এবং তাতে বেশি ও কম করা হয়েছে’ — এমন আকিদা বিশ্বাস পোষণ করা। (নাউযুবিল্লাহ); আর এটা তাদের নোংরা ও নিকৃষ্ট আকিদাসমূহের অন্যতম, যা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়া আবশ্যক করে তোলে।

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আলী, হাসান ও হোসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অসম্মান করার আকিদা।

৩. মুমিন জননী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।

৪. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা, বিশেষ করে নারীদের নেত্রী ফাতিমা যোহরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না-দের অসম্মান করার আকিদা।

৫. আব্বাস, ইবনু আব্বাস ও ‘আকিল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।

৬. খোলাফায়ে রাশেদীন, মুহাজির ও আনসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম-দের অপমান করার আকিদা।

৭. আহলে বাইত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম তথা নবী পরিবার-পরিজনের মধ্যকার ইমামদের অপমান করার আকিদা।

৮. তাকিয়া’ (التقية) –এর আকিদা।

৯. মুত‘আ বিয়ের (সাময়িক বিয়ে) আকিদা
(উসুলুল কাফী)

তবে উম্মতের জন্য বিপদজনক হলো তাদের তাকিয়া।
শিয়াদের নিকট তাকীয়া (التقية)-র অর্থ হল: নির্ভেজাল মিথ্যা, অথবা সুস্পষ্ট মুনাফেকি (কপটতা); যেমনিভাবে তাদের বর্ণনাসমূহ থেকে তা পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে মনে শত্রুতা রেখে তারা বাহিরে বন্ধুত্বের অভিনয় করে।

তাকীয়া (التقية) ও তার ফযিলতের ব্যাপারে শিয়াদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ থেকে তাদের আকিদা ও বিশ্বাস নিয়ে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ থেকে অংশবিশেষ উপস্থাপন করা হল।

আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:

“ইবনু ‘উমাইর আল-আ‘জামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে আবূ আবদিল্লাহ আ. বলেন: হে আবূ ওমর! নিশ্চয় দীনের দশ ভাগের নয় ভাগ ‘তাকীয়া’ (التقية)-র মধ্যে; যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ধর্ম নেই। আর মদ ও মোজার উপর মাসেহ ব্যতীত সকল বস্তুর মধ্যে ‘তাকীয়া’ আছে।”

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ জাফর আ. বলেন: ‘তাকীয়া’ আমার এবং আমার বাপ-দাদাদের ধর্ম। যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে ভয় কর এবং তাকে ‘তাকীয়া’ দ্বারা ঢেকে রাখ। কারণ, যার ‘তাকীয়া’ নেই, তার ঈমান নেই।”

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ. থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ) (ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না)-প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ভাল (ٱلۡحَسَنَةُ) হচ্ছে ‘তাকীয়া’ (التقية) বা গোপন করা এবং মন্দ (ٱلسَّيِّئَةُ) হচ্ছে প্রচার করা। আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ ﴾ (মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা)- প্রসঙ্গে তিনি বলেন: উৎকৃষ্ট হল ‘তাকীয়া’ (التقية)।”

আল-কুলাইনী বর্ণনা করেন:

“আবূ জাফর আ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: প্রত্যেক প্রয়োজনের সময়েই ‘তাকীয়া’ রয়েছে; তার (প্রয়োজন) কখন হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই তা সম্পর্কে অধিক অবগত, যখন তার উপর সে প্রয়োজন এসে পড়ে।”।

তারা প্রয়োজনে শত্রুতা লুকিয়ে সাহাবীদের (আলী রাঃ) গালি দিতে পারে

আল-কুলাইনী আরও বর্ণনা করেন:

“আবূ আবদিল্লাহ আ.-কে বলা হল: জনগণ আলী আ.-কে দেখেছে যে, তিনি কুফার মিম্বরে বসে বলেছিলেন: হে জনগণ! তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দাও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, তখন তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না।

অতঃপর তিনি বললেন, মানুষ আলী আ.-এর ব্যাপারে খুব বেশি মিথ্যা বলে; তারপর তিনি বললেন: তিনি (আলী আ.) তো শুধু বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদেরকে অচিরেই আমাকে গালি দেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে, সুতরাং তোমরা আমাকে গালি দিও; অতঃপর আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাতে তোমাদেরকে আহ্বান করা হবে, অথচ নিশ্চিতভাবে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তিনি বলেননি: তোমরা আমার সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটাবে না।”।

দলিল-
উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২
উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৪
উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮৩
উসুলুল কাফী (أصول الكافي), পৃ. ৪৮২)

এসব নীতি জানার পরেও যারা ঐক্যের আহ্বান করে তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অশ্লীল কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে; আর যদি তাতে সে অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করে; আর সে যদি তাতেও অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে; আর তা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতা”। — (মুসলিম, ঈমান, বাব নং- ২২, হাদিস নং- ১৮৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন
তোমরা যখন তাদেরকে দেখবে, যারা আমার সাহাবীদেরকে গালি দেয়, তখন তোমরা বলবে: তোমাদের নিকৃষ্টদের উপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)”। — (তিরমিযী, মানাকিব, হাদিস নং ৩৮৬৬)

ইবনু ‘আসাকির বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

“যখন বিদ‘আত প্রকাশ পাবে এবং এই উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যার নিকট জ্ঞান আছে, সে যেন তা প্রকাশ করে; কারণ, সেই দিন ইলম তথা জ্ঞান গোপনকারী হবে ঐ ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করে।” — (ইবনু ‘আসাকির মু‘আয রা. থেকে); আল্লামা সুয়ুতী র. ‘জামে সগীর’-এ অনুরূপ বর্ণনা করেছেন

আরও বর্নিত আছে- “যখন উম্মতের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দেবে, তখন যে ব্যক্তি হাদিস গোপন করবে, তবে সে যেন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা গোপন করল।” — (ইবন মাজাহ, ইফতিতাহুল কিতাব ফিল ঈমান…, বাব নং- ২৪, হাদিস নং- ২৬৩)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *