একনিষ্ঠ সুন্নাহর অনুসরণ (শুধু কোরআন মেনে হাদিস অস্বীকার করা জাহেলিয়াত)

চারপাশে ফেতনার ছড়াছড়ি। ইসলামের নামে বহু মতবাদ, বহু বিভক্তি বিদ্যমান। একদল লোক আছে যারা কুরআন মানে দাবি করে অথচ রসুলুল্লাহর (সাঃ) সুন্নাহ ও হাদীসকে অস্বীকার করে চলছে।

অথচ আল্লাহ বলেন-

“আল্লাহ আপনার উপর কিতাব (আল-কুরআন) ও হিকমাহ নাযিল করেছেন।”

সূরা নিসা:১১৩

অধিকাংশ আলেম হিকমাহর তাফসির করেছেন সুন্নাহ বলে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন:

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর।”

সূরা নিসা: ৫৯

আর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়ায় তাঁর সুন্নাহ শরীয়তের দলিল হওয়া ও সে অনুযায়ী আমল করা অত্যাবশ্যকীয়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম, যেখানে সে চিরদিন অবস্থান করবে।”

সূরা জীন: ২৩

রাসূলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য শাস্তির বিধান সাব্যস্ত থাকায় প্রমাণিত হলো যে, সুন্নাহ অবশ্যই আল-কুরআনের মতই হুজ্জত (দলিল)। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

“রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও।”

সূরা হাশর: ৭

আবার এমন অনেক মহান ব্যক্তি দাবিদার রয়েছে তারা ইবাদতের কিছুক্ষেত্রে ইসলাম ও রসুলের (সাঃ) আর্দশ মানে। বাকী বিষয়ে রসুলের (সাঃ) আদর্শ বাদ দিয়ে নিজের পছন্দনীয় ব্যক্তিকে আদর্শ হিসেবে মেনে নেয়। তার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় প্রচার, প্রচেষ্টা চালায়। রসুলুল্লাহর (সাঃ) আদর্শের চেয়ে উত্তম আদর্শ কি হতে পারে!?

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

“অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।”

সূরা আল-আহযাব: ২১

রাসূলের অনুকরণ ও অনুসরণ বলতে বুঝায় দালালাতুল কুরআন কুরআনের সুন্নাহ মুতাবেক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব কাজ করেছেন ও তিনি নিজে যা সুন্নত করেছেন সে সব কাজ করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম’আর খুতবায়ে ঘোষণা করেছেন,
“অতঃপর উত্তম হাদীস (কথা) হলো আল্লাহর কিতাব, আর উত্তম হিদায়েত হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েত।”(মুসলিম -৮৬৭)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন:
“তোমরা আমার সুন্নত ও আমার পরে হিদায়েতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের অনুসরণ করো, এগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরো।” (আবুদাউদ -৪৬০৭)

আবার বর্তমানে অনেক আলেম কুরআন, হাদীসের অনেক বক্তব্য, তথ্য, কেয়ামতের আলামত রসুল (সাঃ), সাহাবীদের মেতাবেক অনুধাবন না করে নিজের মনমতো ব্যাখা করে চলছে। তাদের যুক্তিতে মিললে না হাদীস মানবে নাহলে হাদীসের অর্থ পরিবর্তন করে নিজেদের মনমতো ব্যাখার প্রচেষ্টা চালায়।

অথচ – মুসলিম হল আল্লাহর কিতাব ও রসুলের (সাঃ) সুন্নাহর নিকট একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী।

ইসরা ও মিরাজকে কেন্দ্র করে মক্কায় প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। একদিন কিছু লোক আবু বকর -এর কাছে এসে বলে—‘আচ্ছা, তোমার বন্ধু (রসুল(সাঃ)) কি বলছে শুনেছ কি?’

তিনি বললেন—‘কী বলেছে?’

এবার তারা সুযোগ পেয়ে হাসি চাপতে চাপতে বলল——সে নাকি এক রাতে বাইতুল মুকাদ্দাস গিয়েছে এবং আকাশেও পরিভ্রমণ করে এসেছে!’

আবু বকর জানতে চান, ‘সত্যই কি তিনি এমন কথা বলেছেন?’ তাঁর কণ্ঠে বিশেষ কিছু ছিল। এটা বুঝতে পেরে তারা বলল—‘অবশ্যই বলেছে।’

এবার আবু বকর বিন্দু পরিমাণ দ্বিধা না করেই বললেন—‘যদি তিনি এ কথা বলে থাকেন, তবে অবশ্যই সত্য বলেছেন।’

সেদিন থেকেই বরং তার আগে থেকেই তাঁর নাম সিদ্দিক, সত্যবাদী। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘ওই ব্যক্তি যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং তাঁকে সত্যায়ন করেছে।’ (সূরা জুমার : ৩৩)

আবু বকর (রাঃ)ছিলেন সত্যবাদী তিনি বিনা যুক্তিতে রসুলের (সাঃ) কথাকে সত্য হিসেবে মেনে নেন।

বর্তমানেও আবুবকরের (রাঃ) মত একনিষ্ঠ ঈমানই মুক্তির পথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *