আমাদের পরিচয় মুসলিম, পরস্পর ভাই ভাই। নবীদের পরিচয় ছিল মুসলিম। সাহাবী, তাবেয়ী সবার পরিচয় ছিল মুসলিম। এমনকি ভবিষ্যতে আমরা মুসলিম পরিচয়ে মালহামা ও দাজ্জালের বিরুদ্ধে জেহাদ করবো ইনশাআল্লাহ। একটা সময় গাছ, পাথর – হে মুসলিম, আল্লাহর বান্দা বলে সম্বোধন করবে। (মুসলিম শরীফ)
তাই আমাদের আহ্বান হলো – দল, মত সব ভুলে পরিপূর্ণ কুরআন, সুন্নাহর পথে ফিরে আসা। বিদআত উম্মাহকে বিভক্ত করে আর সুন্নাহ উম্মাহর ঐক্য ফেরায়। আমরা যখন কুফর, শির্ক স্পষ্ট করি – যেন মানুষ দ্বীন বুঝে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। তখন আমাদের ইসলামের শত্রু, উগ্রবাদী বলার মানুষের অভাব হয়নি।
আজ দেখুন- তারাই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, সমাবেশ করছে। আলেমদের নেতৃত্ব, ফাতওয়ার ফেতনায় মুসল্লীরা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এর অন্যতম কারন – নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বীনের মাপকাঠিতে পরিনত করা। আর অনেকে সত্য বুঝতে পারে তবুও গ্রহণ করে না সমালোচনা, বিরোধিতার ভয়ে। অথচ সত্য গ্রহন করে জীবন দিলে শ্রেষ্ঠ শহীদ হতে পারতো।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সেই পত্রখানি আনার নির্দেশ দিলেন, যা তিনি দিহ্ইয়াতুল কালবী (রাঃ)-কে দিয়ে বসরার শাসকের মাধ্যমে হিরাক্লিয়াসের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। তিনি তা পড়লেন। তাতে (লেখা) ছিলঃ
বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম (পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে)। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি। – শান্তি (বর্ষিত হোক) তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে।
তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, শান্তিতে থাকবেন। আল্লাহ্ আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সকল প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে।
‘‘হে আহলে কিতাব! এসো সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন। তা হল, আমরা যেন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত না করি , কোন কিছুকেই যেন তাঁর শরীক সাব্যস্ত না করি এবং আমাদের কেউ যেন কাউকে পালনকর্তারূপে গ্রহণ না করে আল্লাহকে ত্যাগ করে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমরা বল, ‘‘তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা তো মুসলিম।’’ (সূরাহ্ আলে-‘ইমরান ৩/৬৪)
আবূ সুফইয়ান বলেন, ‘হিরাক্লিয়াস যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং পত্র পাঠও শেষ করলেন, তখন সেখানে হট্টগোল শুরু হয়ে গেল, চীৎকার ও হৈ-হল্লা চরমে পৌঁছল এবং আমাদেরকে বের করে দেয়া হলো।
পরবর্তীতে হিরাক্লিয়াস হিমসের প্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ডাকলেন এবং প্রাসাদের সকল দরজা বন্ধ করার আদেশ দিলে দরজা বন্ধ করা হলো। অতঃপর তিনি সম্মুখে এসে বললেন, হে রোমের অধিবাসী! তোমরা কি মঙ্গল, হিদায়াত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর বায়’আত গ্রহণ কর।’
এ কথা শুনে তারা বন্য গাধার ন্যায় দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু তারা তা বন্ধ দেখতে পেল। হিরাক্লিয়াস যখন তাদের অনীহা লক্ষ্য করলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন বললেন, ‘ওদের আমার নিকট ফিরিয়ে আন।’ তিনি বললেন, ‘আমি একটু পূর্বে যে কথা বলেছি, তা দিয়ে তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপর কতটুকু অটল, কেবল তার পরীক্ষা করছিলাম। এখন তা দেখে নিলাম।’ একথা শুনে তারা তাঁকে সিজদা করল এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হলো। এটাই ছিল হিরাক্লিয়াসের সর্বশেষ অবস্থা। (বুখারী- সংক্ষিপ্ত)
হিরাক্লিয়াস জাতির বিরোধিতার ভয়ে, নেতৃত্ব হারানোর ভয়ে ঈমান আনেনি। অথচ আসহাবে উখদুদের বালক, অধিবাসী ও মুসা (আ) এর যুগের জাদুকররা জীবন দিয়ে ইসলাম প্রচার করেছেন।
কুরআনে এসেছে-
অতঃপর জাদুকররা সিজদাবনত হলো এবং বলল, আমরা হারুন ও মুসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ৬৯-৭০)
সূরা বুরুজের ৪ নং আয়াত হতে ৮ নং আয়াত পর্যন্ত আসহাবুল উখদুদের ঘটনা আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
অভিশপ্ত হয়েছিল কুণ্ডের অধিপতিরা। যে কুণ্ডে ছিল ইন্ধনপূর্ণ আগুন। যখন তারা এর পাশে উপবিষ্ট ছিল এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্ৰত্যক্ষ করছিল। আর তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা ঈমান এনেছিল পরাক্রমশালী ও প্রশংসার যোগ্য আল্লাহর উপর। (সুরা আল বুরুজ)
বর্তমানে আমাদের পরীক্ষা অনুরূপ – হয় মুসার (আ:) যুগের জাদুকর, আসহাবে উখদুদের মত ঈমান রাখলে জীবনের উপর আঘাত আসবে। শ্রেষ্ঠ শহীদ হবে। অথবা মানুষ, সমাজের বিরোধিতা, আঘাতের ভয়ে ঈমানহারা মৃত্যু।
ঈমান না আনায় রুমের রাজা, সামাজ্য, হিরাক্লিয়াসের সম্মান রক্ষা পায়নি বরং পতন ঘটেছিল। মুসলিমরা রুম, পারস্য বিজয় করেছিল। আজও যারা জেনেশুনে হক্ব প্রত্যাখান করে তারাও দুনিয়ায় আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা পাবে না, প্রকৃত মুসলিমরা বিজয়ী হবেই ইনশাআল্লাহ।