ঈদ যেমন আমাদের উৎসবের দিন তেমনি ঈদ আমাদের ইবাদত। কিন্তু আজ অধিকাংশ মুসলিমরা ঈদকে উৎসব পালন করছে ইবাদত হিসেবে নয়।
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে। আর এটি আমাদের ঈদ। [সহীহ বুখারী, মুসলিম]
● আনাস ইবনে মালিক (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন (মদীনায়) আসলেন তখন তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেনঃ এ দুটো দিনের তাৎপর্য কি? তারা বললঃ জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে এদের পরিবর্তে উত্তম কিছু দিয়েছেন, ইয়াওমুদ্দুহা (ঈদুল আযহা) ও ইয়াওমুল ফিতর (ঈদুল ফিতর)। [সুনান আবু দাউদ]
একদিকে মুসলিম জাতি ঈদ নামক ইসলামী উৎসব পালন করছে আবার জাহেলী যুগের মত বিভিন্ন (পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাস্ট নাইট) আনন্দ দিবস পালন করছে।
রমাদ্বানের প্রথম দিনগুলোতে অনেকে ইবাদতে কাটালেও শেষদিনগুলো বিশেষ করে শবে কদ্বরগুলোতেও ঈদের কেনাকাটার অজুহাতে শপিংমলসহ বিভিন্ন মার্কেটে নারী, পুরুষের দিন কাটে। অথচ শবে কদরেরর রজনীগুলোর মূল্য অপূরনীয়!! রমাদ্বানের দিনগুলোতে যে পুরুষরা দাড়ি রাখত ও নারীরা হিজাবসহ অনেক সুন্নাহ পালন করতো। ঈদের দিনগুলোতে দেখা যায় ছেলেগুলো ক্লিন শেভড, মেয়েরা আনন্দ উৎসবের নামে বেপর্দা ঘুরছে। আর আনন্দ উদযাপনের নামে খাদ্যের অপচয় ও বিলীসিতা চলে!! অথচ হাজারো মানুষ চরম কষ্টে দিনযাপন করছে!!
চিন্তা করুন, আজকের ঈদ উদযাপনের সাথে সাহাবীদের জীবনীর কোন মিল আছে কিনা!? না অন্যান্য জাহেলিয়াতের মেলা, উৎসবের মত ঈদ পালিত হচ্ছে?
অথচ রসুলের (সাঃ) যুগে মহিলা সাহাবীরা সালাত পড়তো, সদকা করে নেকী হাসিল করতো আর আমাদের মায়েদের দিন কাটে রান্নাঘরে।
● আত্বা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বরের দিন দাঁড়ালেন, অতঃপর সলাত আদায় করলেন।
তিনি খুত্বাহ্ দেয়ার আগে প্রথমে সলাত আদায় করেছেন, পরে জনতার উদ্দেশে খুত্বাহ্ দিয়েছেন।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বাহ্ শেষ করে মহিলাদের কাছে এসে উপদেশ দিলেন।
এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালের হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বিলাল তাঁর কাপড় প্রসারিত করে রেখেছিলেন।
মহিলারা এতে দান বস্তু ফেলছিল। আমি (ইবনু জুরায়জ) ‘আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা কি ঈদুল ফিত্বরের যাকাত (সদাক্বায়ে ফিতর)? ‘আত্বা বললেন, না বরং তা সাধারণ সদাক্বাই ছিল।
মহিলারা তাদের মূল্যবান আংটি (দানপাত্রে) ফেলছিল এবং সম্ভব সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছিল।
আমি ‘আত্বা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বর্তমানে কি ইমামের জন্য খুত্বাহ্ সমাপ্ত করার পর মহিলাদের কাছে এসে তাদেরকে উপদেশ শুনানোর বিধি সম্মত? ‘আত্বা বললেন, হ্যাঁ। আমার জীবনের রবের শপথ! এটা ইমামদের ওপর অবশ্য কর্তব্য। তাদের এ কাজ না করার কি কারণ থাকতে পারে? (ই.ফা. ১৯১৭, ই.সে. ১৯২৪)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৩২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
আবার ঈদের আনন্দ আয়োজন ও ঈদের অনুষ্ঠানের নামে চলছে কুফরী, অশ্লীল বিনোদন নাটক, সিনেমা। মিডিয়াসহ টিভিতে এসব অনুষ্ঠানগুলোকে এই নামে অভিহিত করা হয়। নাউজুবিল্লাহ!! ঈদ আমাদের ইবাদত ও হালাল উৎসবের দিন। তাকে নিয়ে ব্যবসার জন্য কুফরী, অশ্লীল, হারাম জিনিসের সাইনবোর্ড লাগানো হচ্ছে!! কোন হারাম অনুষ্ঠানকে কিভাবে ঈদের মত পবিত্র দিনের অনুষ্ঠান হিসেবে প্রচার করা যেতে পারে!!
ইসলাম হালাল বিনোদনে উৎসহ দেয় যেন মন প্রফুল্ল, পবিত্র থাকে। আর শয়তান ইসলামের নাম দিয়ে অশ্লীলতার পথে আহ্বান করে।
● আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, আমার কাছে দু’টি বালিকা জাহিলিয়্যাত যুগে সংঘটিত বু’আস যুদ্ধের গান গাইছে। তিনি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন। তিনি (এ দৃশ্য দেখে) আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে শাইত্বনের বাদ্য চলছে? (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে ফিরে বললেন, হে আবূ বাক্র! এদের ছেড়ে দাও। এরপর তিনি যখন অন্যমনস্ক হলেন, আমি বালিকাদ্বয়কে আস্তে খোঁচা দিলাম। তারা বের হয়ে চলে গেল। এটা ঈদের ঘটনা। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা ঢাল-বল্লম দ্বারা রণকৌশল ও খেল-তামাশা করছিল। তখন হয়ত আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করেছি না হয় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন তুমি কি তা দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম- জি হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গণ্ডদেশ তাঁর গণ্ডদেশের উপর সংলগ্ন হলো। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী আরফিদাহ্! তোমরা তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও। অনেকক্ষণ পর আমি যখন একটু বিরক্তবোধ করলাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হয়েছে তো? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ! তিনি বললেন, তাহলে এবার যাও। (ই.ফা. ১৯৩৫, ই.সে. ১৯৪২)
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৫০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
আসলে আমরা সিয়াম ও ঈদের আনন্দই বুঝি নি!! ঈদের সালাত শেষে যেমন স্ত্রী সহবাস, পানাহারের অনুমতি মিলে, প্রিয়জনের সাক্ষাতে মনে আনন্দ জাগে!! তেমনি মুমিনের প্রতিটি দিনই কাটে আল্লাহর জন্য সংযম করে। একদিন জান্নাতে তার হালাল মদ, হুরদের সাথে বিনোদনের অনুমতি মিলবে এবং তার চেয়ে বড় আনন্দ মুমিনের সবচেয়ে প্রিয়জন আল্লাহর সাক্ষাৎ মিলবে। কারণ- সিয়াম আল্লাহর জন্য, এর পুরস্কার আল্লাহই দিবেন