ঈদের সালাতের সালাম ফিরিয়ে যদি দেখেন আপনার পাশের মুসল্লী সেই যে ইসলাম মানা ও প্রচারের কারণে আপনার উপর জলুম করছে, অপবাদ দিচ্ছে। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে দিলে মুসলিম থাকে না বা ইসলাম হতে বের হয়ে যায় এই কথা বলার কারণে আপনাকে উগ্রবাদী বলেছে, গালি দিয়েছে সে মসজিদে আজ আপনার আগেই এসেছে!!
আহ ইসলাম!! মুমিন, মুনাফেক একই কাতারে, পাশাপাশি অথচ একজন তাগুতের বিরুদ্ধে আর আরেকজন তাগুতের এজেন্ট।
অথচ শিরকমুক্ত তাগুত বর্জন ছাড়া কোন ইবাদতই কবুল হবে না। ঈদের সালাত যেমন গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয় ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরজ।
আল্লাহপাক বলেন-
“দ্বীনের মধ্যে কোন জবরদস্তী নেই। নিশ্চয় সঠিক পথ ভুল পথ হতে পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করে, তাহলে সে এমন মজবুত হাতল ধরল যা কখনো ভাঙ্গবে না এবং আল্লাহতায়ালা হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সুরা বাকারাহ- ২৫৬)।
সুরা নাহলে বর্নিত-
“নিশ্চয় আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি, তারা যেন শুধু আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাগুতকে বর্জন করে।” (আয়াত-৩৬)।
ইসলামিক ভাষায় তাগুত বলতে বুঝায় আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত বা অনুগত্য করা হয় এবং যে এটা পছন্দ করে সেও তাগুত
একটু সামনে দেখেন আপনার সেই পরম আত্মীয় যে আপনাকে প্রাপ্য অধিকার দেওয়া হতে বিরত রেখেছে। এরপর একটু পিছনে তাকালেন, দেখলেন একসময়ের পরম বন্ধুরা (যাদের কাছে আপনি সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন)।
ইসলামে ফিরার কারণে যাদের উপহাস শুনতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গ ছাড়তে হয়েছে।
এরপর মসজিদ হতে বের হয়ে দেখলেন ঈমাম সাহেব হ তাগুতের প্রতিনিধি/ ইসলামের সমালোচনা করে ও হারাম আয় দ্বারা মোটাসোটা পশু দিয়ে কুরবানির জবাই সূচনা করলো অন্যরা ভিডিও করছে, কেউ ফেইসবুকে দিচ্ছে প্রশংসা পাচ্ছে। অন্যদিকে হালাল টাকায় কেনা মুমিনের ছোট ছাগলটা অবহেলা ও উপহাসের শিকার হয়!!
অথচ আল্লাহ মহাপবিএ হারাম দ্বারা ইবাদত তিনি কবুল করেন না।
কুরবানির মাংস বন্টনের সময় দেখলেন – যে লোক নিজ স্বজনের জমি, ব্যবসা দখল করে নিয়েছে, সেই গরিবকে মাংস বিলানোর নামে নিজেকে দানশীল প্রমানে ব্যস্ত!!
আল্লাহর নৈকট্য প্রত্যাশা করা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া নামাজ আর চুরি ও আত্মসাতের সম্পদের সদকা কবুল হয় না।’ (মুসলিম)
আর যারা অন্যদের সম্পদ, জমির অধিকার, মোহরানা আদায় করে না তাদের উচিত আদায় করা। সুরা নিসায় আল্লাহ সতর্ক করেছেন। এর পরিণাম খুবই মারাত্মক। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির কিয়দংশ জবরদখল করবে, কিয়ামত দিবসে এজন্য তাকে সপ্ত যমীন পর্যন্ত পূঁতে দেওয়া হবে”। (সহীহ বুখারী)
রিয়াযুক্ত ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না, বরং রিয়াকারীকে শাস্তিও দেওয়া হবে।
জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শোনানোর জন্য এবং মানুষের নিকট প্রসিদ্ধি লাভ করার জন্য কোনো আমল করে— আল্লাহ তাআলা তার অবস্থা মানুষকে শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে, আল্লাহ তাআলা তাকে রিয়াকারীর শাস্তি দেবেন। (বুখারি, মুসলিম)
অনেক সময় দেখা যায়- গরিবের দল অপমান, ধাক্কাধাক্কি করে কিছু মাংস পেলেও মধ্যবিত্ত কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছে গরিবের কাছ হতে মাংসগুলো কিনবে বলে!! চোখলজ্জায় কারো কাছে চাইতে পারে না।
কিন্তু সন্তানগুলোকে একবেলা ভালো খাবার দিতে মন চায়। কুরবানির পশু দেওয়ার আনন্দে ধনী আত্মীয়রাই তাকে শরীক করেনি সামর্থ্য, বা সম্পর্কের তিক্ততার কারনে। অথচ স্বজন, প্রতিবেশীদের হক্ব রয়েছে আর ঈদের উসিলায় মিটে যাক তিক্ততা।
পেটে ক্ষুধা নিয়ে মানুষ ঘুরছে চারপাশে আর একদল ব্যস্ত গরুর ওজন কত হয়েছে, প্রতি কেজি মাংস কত টাকা পড়লো আর নিজ ফ্রীজে জায়গা হবে কি! এই সমীকরনে ব্যস্ত।
অথচ- হজরত সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে লোক কুরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানির গোশতের কিছু থেকে যায়।
পরবর্তী বছর সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন-‘তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ। কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোমরা তাতে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি, মুসলিম)।
তাই যখন অভাব অনটন চারপাশে বিদ্যমান তখন বেশি পরিমান দান করাই উত্তম।
আল্লাহ সকলকে শিরক, রিয়া, বিদআতমুক্ত কুরবানি করার তৌফিক দিন। গরীবের অধিকার আদায় করে ধনীদের সম্পদ পবিত্র হওয়ার তৌফিক দিন। আমাদের জন্য দোয়া করুন – যেন ইসলামের পথে নিবেদিত হতে পারি।