কাদেসিয়ার যুদ্ধের পূর্বে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হবার পর পারস্য সেনাপতি রুস্তম মুসলিম সেনাপতি সা’দ (রা)-এর নিকট এ মর্মে সংবাদ পাঠাল যে, তিনি যেন একজন বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী লোক তার নিকট পাঠান, সে তার সাথে একান্ত আলাপে মিলিত হবে। কিছু বিষয় জানতে চাইবে।
মুসলমানদের পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হলো মুগীরা ইবন শু’বা (রা)-কে। মুগীরা (রা) রুস্তমের নিকট এসে পৌঁছলেন। রুস্তম বলতে লাগল, ‘আপনারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা আপনাদের সাথে তো সদাচরণই করি। আপনাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করে থাকি। আপনারা বরং নিজ দেশে ফিরে যান।
ব্যবসায় বাণিজ্য উপলক্ষে আপনারা আমাদের দেশে আসতে চাইলে আমরা বাধা দিব না।’ উত্তরে হযরত মুগীরা (রা) বললেন, আমাদের কামনা তো দুনিয়ার স্বার্থ নয়। আমাদের চাওয়া-পাওয়া হলো আখিরাত ও পরকালীন কল্যাণ। মহান আল্লাহ্ আমাদের নিকট একজন রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাঁকে বলেছেন, আমি এই লোকগুলোকে কর্তৃত্বশীল ও ক্ষমতাশালী করে দিলাম ওই সব লোকের বিরুদ্ধে যারা আমার দ্বীন মানে না। এদের দ্বারা আমি ওদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিব। এরা যতদিন আমার সত্যের স্বীকৃতিতে অবিচল থাকবে ততদিন আমি এদেরকে বিজয়ী করে যাব।
এটি সত্য দ্বীন। যে ব্যক্তি এই দ্বীন প্রত্যাখ্যান করবে সে লাঞ্ছিত হবে। যে ব্যক্তি এই দ্বীন শক্তভাবে ধরে রাখবে সে সম্মানিত ও বিজয়ী হবে।
রুস্তম বলল, ওই দ্বীনের পরিচয় দিন। মুগীরা (রা) বললেন, ‘ওই দ্বীনের মূল স্তম্ভ হলো সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আর তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা এনেছেন, তা সত্য বলে স্বীকার করা।
রুস্তম বলল, বাহ্ কত চমৎকার কথা এটি! আর কিছু আছে? মুগীরা (রা) বললেন, আছে। আর তা হলো মানুষকে মানুষের গোলামি থেকে বের করে আল্লাহর গোলামিতে নিয়ে যাওয়া। রুস্তম বলল, ‘বেশ, ভাল তো। আরো কিছু? মুগীরা (রা) বললেন, ‘সকল মানুষ হযরত আদম (আ)-এর সন্তান। সুতরাং তারা সহোদর ভাই। সে বলল, ‘বেশ, ভালই তো’।
এরপর রুস্তম বলল, ‘আচ্ছা বলুন তো আমরা যদি আপনাদের দ্বীনে প্রবেশ করি, আপনাদের দ্বীন গ্রহণ করি তাহলে কি আপনারা আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাবেন? হযরত মুগীরা (রা) বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহর কসম তাই করব এবং এরপর ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অন্য কোন প্রয়োজন ছাড়া আপনাদের দেশের কাছেও আসব না।’ রুস্তম বলল, ‘এটি ওতো চমৎকার কথা। হযরত মুগীরা (রা) ফিরে এলেন।
রুস্তম তার দলের শীর্ষস্থানীয় লোকদেরকে ডেকে ইসলামে প্রবেশ করা এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা সম্পর্কে পরামর্শ করল। তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল এবং ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাল। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা ওদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করলেন । (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ৭ খন্ড, পৃ-৭৭)
দ্বীন ইসলাম এসেছে – মানুষকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে যেন মানুষ মানুষের গোলামী হতে এক আল্লাহর গোলামী করতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায় দাওয়াত, সবর, হিজরত, জেহাদের মাধ্যমে। আজও ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে একই পদ্ধতিতে।
রুম, ও কিসরা সাম্রাজ্যের রাজারা যে ধর্ম মানতো বা যেসব নিয়ম-কানুন, আইন নির্ধারণ করতো জাতিকে তা মানতে বাধ্য করতো। মানুষকে করের গোলামে পরিনত করেছিল। তাদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়, তারা গ্রহণ না করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের রাজত্বে জনগনের অনেকে অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়ে দ্বীন ইসলাম গ্রহন করতে পারছিল না।
যখন মুসলিমরা জালেম শাসকদের ক্ষমতা শেষ করে দিল, মানুষকে অধিকার দিল- তোমরা ইচ্ছে করলে ইসলাম গ্রহন করে আমাদের ভাই হয়ে যাও অথবা জিজিয়া দিয়ে নিজ ধর্ম পালন কর। কুরআনে বর্নিত –
দ্বীন মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভুল পথ থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে। তাই যে তাগুত (মিথ্যা প্রভুদের) অস্বীকার করবে, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আনবে, সে অবশ্যই এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা ভাঙ্গার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন।
আল-বাক্বারাহ: ২৫৬
আজও বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন- উত্তর কোরিয়াসহ কিছু দেশে শাসক রবের মত তাদের বিধান মানতে জাতিকে বাধ্য করছে, পুরোজাতিকে গোলামে পরিণত করেছে। মৌখিক লোক দেখানো প্রতিবাদ করা ছাড়া সবাই নিরব। আজ যদি উমর (রা:) ক্ষমতায় থাকতেন তিনি ওদের বিরুদ্ধে বাহিনী পাঠাতেন যেন মানুষের গোলামী হতে জাতি বের হয়ে এক আল্লাহর দ্বীনের চর্চা করতে পারে। ইনশাআল্লাহ মাহাদী (হাফি:), ঈসা (আ:) এর সময় তাই হবে।
বেশিরভাগই দেশে ইসলামকে মসজিদ ও ব্যক্তিগত ইবাদাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো আইন তৈরি করে মানুষের উপর লোন, কর, শিরক চাপিয়ে দিচ্ছে।
তাদের দাওয়াত দিলে কারাবন্দী, নির্যাতন, গুমের সম্মুখীন হতে হয় তখন প্রয়োজন হয় হিজরত ও জেহাদ। তাই যারা জেহাদকে আধুনিক ব্যাখা করেন বা কেউ একে উগ্রবাদ বলেন আগে ইসলামের ইতিহাস জানুন।
কি আশ্চর্য কেউ সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র, স্বাধীন ভূখন্ড (যেখানে নিজ খুশিমতো বিধান রচনা করবে) বহু মত আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার, সংগ্রাম, লড়াই ও জীবন দিচ্ছে তাদের কয়জন উগ্রবাদী বলে!? অথচ কেউ ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রচার করলেই উগ্রবাদ ট্যাগ লাগায়। তার মানে কি বলতে তারা চায়- এসব আদর্শ বর্তমানে ইসলামের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও যুগোপযোগী? নাউজুবিল্লাহ! ওদের অন্তরে আসলে ঈমান প্রবেশ করেনি।