ইসলাম, বিজ্ঞান ও আমরা

এলাকায় ওয়াজ চলছিল, আলেম সাহেব বললেন, আল্লাহর ১৮ হাজার মাখলুকাতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। হঠাৎ ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র বলে উঠল এটা কিভাবে হয়, জীববিজ্ঞান মতে সৃষ্টি অনেক বেশি হবে। ছেলেটাকে চিনতাম, ইসলামের জ্ঞান হয়তো কম কিন্তু ইসলাম ও মুসলিমকে ভালোবাসে।

বললাম- আল্লাহর কত মাখলুকাত (সৃষ্টি) আছে তা শুধু আল্লাহই জানেন, হুযুর যা বলছে কুরআন, হাদীসের কথা নয় বরং ইবনে খালদুনের মতবাদ। কিভাবে আলেম সমাজে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে অনেকে তা যাচাই করেনি।

বিভিন্ন প্রাক্কলন অনুযায়ী পৃথিবীতে বর্তমানে জীব প্রজাতির সংখ্যা ২০ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। এদের মধ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতির জীব সম্পর্কে তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৫০০ কোটির বেশি প্রজাতির জীবের আবির্ভাব হয়েছে।

এটা ধারণা মাত্র, সঠিক হিসাব কখনও আধুনিক  জীববিজ্ঞান করতে পারবে না, ওরা তাই বিশ্বাস করে যা দৃশ্যমান ও প্রমানিত। আল্লাহ বলেন-

“তিনি গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী, মহান, সর্বোচ্চ। তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে বা যে তা প্রকাশ করে, রাতে যে আত্মগোপন করে এবং দিনে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সবাই আল্লাহর নিকট সমান।”

সুরা রাদ ৯-১০

জীন, ফেরেশতা কিভাবে হিসাব করবে ওরা? তাই ইসলাম দ্বারা বিজ্ঞানের সত্য-মিথ্যা প্রমান করা সম্ভব হলেও বিজ্ঞান কখনো ওহীর বা ইসলামের জ্ঞানকে শতভাগ পরিপূর্ণ ব্যাখা করতে পারবে মা। ছেলেটা বুঝল ও মানলো।

আমাদের দেশে এই সমস্যাগুলো প্রকট। একদল লোক না বুঝেই বিজ্ঞানের গবেষণা হতে নিজেকে দূরে রেখেছে, আর একদল আলেম নিজেকে আধুনিক প্রমান করতে গিয়ে কোন অবিষ্কার, ঘটনা ঘটলে তা যাচাই বাচাই না করে প্রমান করতে ব্যস্ত কুরআনে এটা আছে। কেউ প্রচার করে চন্দ্র অভিযানে গিয়ে চাদের মাঝে ফাটল দেখেছে যা জোড়া লাগানোর প্রমান। অথচ এটা ভাবে না, যে আল্লাহ চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করতে পারেন তিনি নিখুতভাবে জোড়া লাগাতেও সক্ষম! আবার কেউ বলছে চন্দ্র অভিযানে আযান শুনে অমুক মুসলিম হয়েছে, অথচ চাঁদে বিশেষ পোশাক পরে থাকতে হয়, যার ফলে শব্দ শোনা সম্ভব নয়।

কেউ বলছে কৃত্রিম মেঘ, বৃষ্টি তৈরি হচ্ছে এটাই দাজ্জালের অস্ত্র। আসলে কৃত্রিম মেঘ, বৃষ্টি কি ওরা বুঝেনি। আল্লাহ যেভাবে বৃষ্টি দান করেন মানুষ সেভাবে মেঘ, বৃষ্টি তৈরি করতে কখনোই সক্ষম নয়।

আল্লাহ বলেন-

“তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ ওদের পরিমাণ অনুসারে প্রবাহিত হয়। সুতরাং স্রোত-প্রবাহ ভাসমান ফেনাকে বয়ে নিয়ে যায়। অনুরূপ (ফেনার মত) আবর্জনা নির্গত হয়, যখন অলংকার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণ উদ্দেশ্যে কিছু (পদার্থ)কে অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়। এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে থাকেন; সুতরাং যা ফেনা (বা আবর্জনা) তা উপেক্ষিত ও নিশ্চিহ্ন হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা ভূমিতে থেকে যায়।এভাবেই আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন।”

সুরা রাদ

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হলো প্রকৃতির ওপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব খাটিয়ে সংঘটিত জোর করে বৃষ্টি নামানো! এ জন্যে প্রথমে মেঘ সৃষ্টি করতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই মেঘকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয় এবং সবশেষে বৃষ্টি ঝরানো হয়। তবে সচরাচর আকাশে ভাসমান মেঘকে পানির ফোঁটায় পরিণত করেই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়।

ক্লাউড সিডিংয়ে সাধারণ রাসায়নিক যেমন সিলভার আয়োডাইড, পটাশিয়াম আয়োডাইড অথবা শুষ্ক বরফ বা কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তরল প্রোপেন গ্যাসও ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাস সিলভার আয়োডাইডের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় বরফের স্ফটিক তৈরি করতে পারে। তবে অনেক সস্তা ও বেশ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় এ কাজে এখন সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাবার লবণের ব্যবহার বাড়ছে। ক্লাউড সিডিংয়ের সময় মেঘের ভেতরের তাপমাত্রা -২০ থেকে -৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে তখন তুষারপাত বেড়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

ক্লাউড সিডিংয়ের উপাদানগুলো উপযুক্ত স্থানে উড়োজাহাজে করে অথবা বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মেঘের ভেতর দিয়ে যখন উড়োজাহাজটি যায় তখন সিলভার আয়োডাইড ছড়িয়ে দেয়া হয়। এ রাসায়নিকের ক্ষুদ্র স্ফটিকদানাগুলোই মেঘের সিড হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এসব দানায় ভাসমান জলীয়বাষ্পে পানি কণাগুলো জড়ো হয়ে বড় ফোঁটায় পরিণত হয়। একসময় ওজন বেড়ে গিয়ে মহাকর্ষের টানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। এরজন্য আল্লাহর দেওয়া মেঘকে যার মধ্যে জলীয় অংশ আছে অনুমান বা গবেষণা করে ওরা বিভিন্ন বৃষ্টিপাত ঘটায় যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয় করে।

অপরদিকে দাজ্জালের সময় নিমিষে বৃষ্টি হবে। ঐযুগে এরকম টেকনোলজি থাকবে কিনা সন্দেহ। আর বৃষ্টি আল্লাহতাআলা দিবেন মানুষের পরীক্ষার জন্য আর দাজ্জাল দাবি করবে তার নির্দেশে হচ্ছে! আবার কেউ ডাইনোসরের মত প্রানী, এলিয়ানের মতো জীব কুরআনে আছে প্রমান করতে অদ্ভুত ব্যাখা দাড় করায়। অথচ আল্লাহ বলেন –

“আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায়।”

সুরা নাবা

অর্থাৎ, পুরুষ ও স্ত্রী, নর ও নারী। অথবা أزواج -এর অর্থ হল নানা ধরন ও রঙ। অর্থাৎ, তিনি বিচিত্র ধরনের আকার-আকৃতি ও রঙে-বর্ণে সৃষ্টি করেছেন। সুশ্রী-কুশ্রী, লম্বা-বেঁটে, গৌরবর্ণ-কৃষ্ণবর্ণ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈচিত্রে সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াতের ব্যাখায় আলেমরা বলেন- মানুষ যেরকম এক আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) হতে সৃষ্টি হয়ে পরবর্তী প্রজন্ম বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে হয়েছে, তেমনি প্রত্যেক প্রানীর এরকম জোড় সৃষ্টি হয়েছে প্রথমে এরপর বংশবৃদ্ধি। তাই মোরগ, মুরগী আগে হয়েছে পরে ডিম হতে বাচ্চা!

অন্যদিকে

আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ বর্ণনা করেন…… আবূ হোরাইরা(রা) থেকে বর্ণিত নবী (সা) থেকে, তিনি (সা) বলেন” আল্লাহ তায়ালা আদমকে (আ) সৃষ্টি করেছেন এই অবস্থায় যে তার উচ্চতা ছিল ষাট হাত………… অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তি যে জান্নাতে প্রবেশ করবে আদমের আকৃতিতেই হবে। অতঃপর সৃষ্টি এভাবেই খাটো হচ্ছে এখন পর্যন্ত। (বুখারী)

এখন আধুনিক জীববিজ্ঞানের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে অনেকে ব্যাখা করেন এটা আসমানে থাকার সময় উচ্চতা ছিল। অথচ শ্রীলঙ্কায় একটা পায়ের ছাপ পাওয়া যায় যার দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি আর ইব্রাহিম (আ:) এর কবর দেখালে বুঝা যায় তিনি বর্তমান মানুষের চেয়ে অনেক বড় ছিলেন।
তাহলে আদমের (আ:) সময় কুরবানী করছিলেন – তখন কুরবানির পশুগুলো নিশ্চয়ই বড় ছিল। চিন্তা করুন, আদি যুগে মানুষ সাপ, বাঘ, হিংস্র প্রানীর ভয় করতো তারা যদি বর্তমানের সাইজের হতো আর মানুষগুলো বড় হতো ভয় পাওয়া অযৌক্তিক হতো।

অরেকটি হাদীসে রয়েছে – ঈসা (আ:) যখন আসবেন-
আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধ-বিগ্রহ তার সাজসরঞ্জাম রেখে দিবে। কুরাইশদের রাজত্বের অবসান হবে। পৃথিবী রূপার পাত্রের ন্যায় স্বচ্ছ হয়ে যাবে। তাতে এমন সব ফলমূল উৎপন্ন হবে যেমনটি আদম (আ)-এর যুগে উৎপাদিত হতো। এমনকি কয়েকজন লোক একটি আংগুরের থোকার মধ্যে হতে একত্র খেতে পারবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। অনেক লোক একটি ডালিমের জন্য একত্র হবে এবং তা সকলকে পরিতৃপ্ত করবে। তাদের বলদ গরু হবে এই এই (উচ্চ) মূল্যের এবং ঘোড়া স্বল্প মূল্যে বিক্রয় হবে। লোকজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঘোড়া সস্তা হবে কেন? তিনি বলেনঃ কারণ যুদ্ধের জন্য কখনো কেউ অশ্বারোহী হবে না। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, গরু অতি মূল্যবান হবে কেন? তিনি বলেনঃ সারা পৃথিবীতে কৃষিকাজ সম্প্রসারিত হবে। (ইবনু মাজাহ- ৪০৭৭,  সংক্ষিপ্ত)।

সাগরের সকল মাছকে হালাল করা হয়েছে এবার এটা ব্যাখা না বুঝে আলেমরা নিজের মত ফাতওয়া দেয়। আল্লাহ বলেন:

“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য ভক্ষণ বৈধ করা হয়েছে ; তোমাদের ও মুসাফিরদের জন্য ,,,,,”

সূরা মায়েদা ০৫:৯৬

সমুদ্রের প্রানী বলতে বুঝায় যে প্রানী পানি ছাড়া বাচতে পারে না, তার মানে সাপ, কুমির উভয়চর প্রানী এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আবার কিছু মাছের শরীরে বিদ্যুৎ, বিষাক্ত অংশ আছে তা ফেলে সতর্কতার সহিত খাওয়া যাবে। যেমন- গরু, মহিষ, ছাগল হালাল কিন্তু জবাইকৃত প্রবাহিত রক্ত খাওয়া হালাল নয়।

আসলে কুরআনে বহু আয়াত আছে যেখানে  বিজ্ঞানের সূত্র রয়েছে, কিন্তু কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য এরচেয়ে অনেক উর্ধ্বে। এটা হল মানবজাতির সকল সমস্যার  সমাধান, মানুষের জন্য হেদায়েতস্বরুপ। মানুষকে দুনিয়া, জাহান্নাম হতে মুক্তি দিতে আসছে যা স্বাভাবিক মানবিক বিদ্যা দ্বারা সম্ভব নয়। আর পুরো পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষের গবেষণার জন্য নির্দশন রেখেছেন, আল্লাহ প্রদত্ত মানবিক বিদ্যা দ্বারা গবেষণা করে অনেককিছু মানুষ অবিষ্কার করতে পারে। আর কোন কাফেরও কিন্তু কুরআনের সূত্রগুলো গবেষণা করে দুনিয়াতে কোনকিছু অবিষ্কার করতে পারবে কিন্তু আখেরাতে সে আমলশূন্য। কুরআন হল সংক্ষিপ্ত বর্ননা কিন্তু যার অর্থ ব্যাপাক। কোন মুসলিম বিশ্বাস করবে আল্লাহ যা হালাল করেছে তা নিরাপদ ও কল্যানকর, অপরদিকে হারাম হল ক্ষতিকর।

কুরআনে রয়েছে –

‘তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোশত।’

সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭৩

মুসলিমরা তা বিশ্বাস করে বিরত থেকে উপকৃত হবে, অপরদিকে অবিশ্বাসীরা দীর্ঘবছর ধরে গবেষণা করে বুঝে এটা ক্ষতিকর বা উপকারী। গবেষণার পূর্বে ক্ষতিকর খাদ্যগ্রহন করে সেই হয়তো বিপদে পড়ে যাবে! শুধুমাত্র একটা প্রানী নিয়ে গবেষণা করলে হয়তো সারাজীবন চলে যাবে। কুরআনে সংক্ষিপ্তভাবে, সহজে বুঝানো হয়েছে যা হতে মানুষ উপকৃত হবে।

ইরাম জাতির বড় বড় দালান করার বিদ্যা ছিল, সাবা জাতি ছিল কৃষিতে সমৃদ্ধ। তারা এসব বিদ্যা শিখে দুনিয়ার সমৃদ্ধির জন্য ব্যয় করেছে। অপরিদকে নবী, রসুলগন ক্ষুধা, অভাবে কষ্ট করেছেন। মদীনার সাহাবীরা কৃষিকাজে সময় ব্যয় করেছেন তাই এক্ষেত্রে তাদের বিদ্যা রসূল (সা), আবু বকর, উমরের (রা) চেয়ে বেশি ছিল। পারস্যের পরিখা খনন সালমান ফারসী (রা) হতে রসুল (সা:) শিখেছিলেন। তাই যে বিদ্যায় কুফর, শিরক নেই এমন টেকনোলজি শেখা হালাল ও জরুরি।

আল্লাহ প্রদত্ত কিতাবের জ্ঞানে মানবজাতির সমাধান রয়েছে যা অন্যবিদ্যায় সম্ভব নয়। মুসা (আ:) বনী ইসরায়েল জাতির দাসত্ব, কষ্ট দেখে মর্মাহত হতেন কিন্তু সমাধানের পথ জানতেন না – যখন আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান আসলো পেয়ে গেলেন মুক্তির পথ। তাই যে তিনি ফেরাউনদের ভয়ে পালিয়েছিলেন, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ফেরাউনদের সরাসরি দাওয়াত দিলেন। রসুল (সা:) দীর্ঘদিন জাহেলী সমাজব্যবস্হা হতে মুক্তির চিন্তা করতেন – যখন কুরআন নাযিল হল তার উপর আমল করে পেলেন সমাধান, যা কোন মানবিক বিদ্যা হতে সক্ষম নয়।

আমাদের উচিত হল বিজ্ঞানের প্রমানিত সত্যগুলো নিয়ে গবেষণা করে কুরআন দ্বারা ব্যাখা করা কিন্তু বিজ্ঞানের অনেক ধারণা মিথ্যা যা কুরআনের সাথে মেলাতে গিয়ে আলেমরা উল্টো ফেতনায় পড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *