অদ্ভুত এক ফেতনা আমাদের চারপাশে। অনেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আহ্বান করে, কেউ জেহাদকে ভুল ব্যাখা করে বা এড়িয়ে যায়। আর কেউ সারাদিন জেহাদী ওয়াজ, ভিডিও দেখে শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখে সময় কাটায়। অথচ আকীদাগুলো আজও বিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়নি।
ইসলামের সমৃদ্ধির জন্য দাওয়াত, হিজরত ও জেহাদ অপরিহার্য। কিন্তু আজ এগুলোর সম্বনয়ের অভাব। কেউ দাওয়াত দিতে গিয়ে জেহাদের ফজিলত এড়িয়ে যায়, আবার কেউ একদিন শহীদ হবে আশা করছে অথচ আকীদার ব্যাপারে প্রকৃত বিদ্যা ও সচেতনতা কম।
অনেকে জেহাদী দাওয়াত যতটা প্রচার করে ততটা আকীদার দাওয়াত দেয় না। অথচ জেহাদ হবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য। শিরক, কুফর স্পষ্ট না জানলে কিভাবে বুঝবেন কার সাথে জেহাদ করবেন? কেউ হয়তো আপনার প্রচারনায় প্রকৃত দ্বীন ইসলাম গ্রহন করবে আবার কেউ হয়তো ইসলাম, আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা শত্রুতা ঘোষণা করবে, তার বিরুদ্ধে জেহাদ করতে হবে।
এমন অনেকে আছে ময়দানের শহীদ হওয়ার নিয়ত রাখেন – আর অপেক্ষা করছেন একদিন গাজওয়ায়ে হিন্দ হবে বা খলিফা মাহাদী (আ) আসবে তার দলে যোগ দিবে। অথচ জালেম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য বলা ও হক্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পষ্ট দ্বীন জানিয়ে শহীদ হবার কথা ভুলে যায়। কিন্তু আপনি সুস্পষ্ট আকীদা ও আহলে বায়াতের ফজিলত না বুঝলে মাহাদীর (আ) দলে কিভাবে যোগ দিবেন!?
আমি আলেমের মুখে একটা হাদীস শুনি- যে এক সাহাবী কালেমা পড়ে ঈমান আনে কোন আমল না করে শুধুমাত্র জেহাদ করে শহীদ হয়ে জান্নাতী হয়েছে। এসব ওয়াজ শুনে জেহাদের জসবা আসে কিন্তু কিছুদিন পরে আবার ভাটা পড়ে!!
হাদীসের প্রেক্ষাপট বুঝেন – এটা মদীনায় যখন মুসলিমদের রাষ্ট্র হয়েছিল ও মুসলিমদের একটা সংঘবদ্ধ দল হয়েছিল, রসুলের (সা:) সুদীর্ঘ দাওয়াতের বদৌলতে সবার কাছে দ্বীন সুস্পষ্ট হয়েছিল। যাদের আকীদা এরকম পরিপূর্ণ তাওহীদে ভরা, জেহাদ করুন শহীদ হোন। কিন্তু আবার ভাবুন – এই সাহাবীর মর্যাদা কখনও আবু বকর (রা), উমর (রা), মুসাইব বিন উমায়ের (রা), আম্মার (রা), খুবাইব (রা), দাছানা (রা:) এর সমমর্যাদার হবে না, যারা দ্বীন ইসলাম মানা ও দাওয়াতের জন্য সুদীর্ঘ কষ্ট সহ্য করেন ও শহীদ হোন।
খুবায়েবের সাথী যায়েদ বিন দাছেনাকে হত্যার পূর্বে আবু সুফিয়ান তাকে বললেন, তুমি কি এটাতে খুশী হবে যে, তোমার স্থলে আমরা মুহাম্মাদকে হত্যা করি এবং তুমি তোমার পরিবার সহ বেঁচে থাক? তিনি বলেন,لاَ وَاللهِ الْعَظِيمِ مَا أُحِبُّ أَنْ يَفْدِيَنِي بِشَوْكَةٍ يُشَاكَهَا فِي قَدَمِهِ ‘কখনোই না। মহান আল্লাহর কসম! আমি চাই না যে, আমার স্থলে তাঁর পায়ে একটি কাঁটারও আঘাত লাগুক’। একথা শুনে বিস্মিত আবু সুফিয়ান বললেন,مَا رَأَيْتُ مِنَ النَّاسِ أَحَدًا يُحِبُّ أَحَدًا كَحُبِّ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ مُحَمَّدًا ‘মুহাম্মাদের সাথীরা মুহাম্মাদকে যেরূপ ভালোবাসে সেরূপ কাউকে আমি দেখিনি’।
আজ কতজনেই রসুলের (সা:) চরিত্র ও সুন্নাতকে উপহাস করছে আমরা প্রতিরোধ করার কতটা চেষ্টা করি!! এর জন্য যদি শহীদ হই তা কি উত্তম শহীদ নয়!? আসহাবে উখদুদের বালকের ঘটনা দেখুন – দ্বীন ইসলামকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে জীবন দিয়েছিল, বহুলোক দ্বীন রক্ষায় জীবন দেন তারা কি শহীদ নয়!?
আবার দাজ্জালের যুগে অনেক মুসলিম যখন মক্কা, মদীনায় আশ্রয় নিবে – তখন এক যুবক দাজ্জালের অনুসারীদের নিকট সুস্পষ্ট তুলে ধরবে সেই ধোকাবাজ রব নয়, যদিও দাজ্জালের অনুসারীদের মধ্যে হয়তো কেউই ঈমান আনবে না তবুও তিনি হবেন ঐ যুগের শ্রেষ্ঠ শহীদ।
তাই দ্বীন ইসলাম সুস্পষ্টভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরুন সেজন্য যদি জুলুম, নির্যাতন আসে হক্বের পথে অটল থেকে শহীদ হোন। বহু নবী এমন আছে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি কিন্তু দ্বীন ইসলামের জন্য শাহাদাত বরন করেন তাদের মর্যাদা কি অন্য কেউ পাবে!? আসলে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদাতের জন্য। আর দুনিয়া হল আমাদের জান্নাতের পথে আমলের স্হান। আর সেই আমলের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো- হয়তো আপনার জীবনে তা নাও দেখতে পারেন কিন্তু আপনার আমল অনুযায়ী জান্নাতে স্হান পাবেন।
শাসন ক্ষমতা দেবার মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশি দিবেন। সোলাইমান (আ:) সারাবিশ্ব শাসন করেছেন যা রসুল (সা:) পারেনি। কিন্তু রসুলের (সা:) মর্যাদা সোলাইমান (আ:) পাবেন না! সোলেমান (আঃ) এর মৃত্যুর কিছু পরেই তার রেখে যাওয়া দ্বীন হারিয়ে যায় অথচ রসুলের (সা:) রেখে যাওয়া আদর্শের উপর ভিত্তি করে মুসলিমরা ইনশাআল্লাহ বিশ্ব শাসন করবে!! সবচেয়ে বেশি মানুষ জান্নাতী হবে যার সমস্ত নেকী রসুল (সা:) পাবেন। কারন এই পথের সূচনা তিনি করেছেন। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে সবসময়।
অপরদিকে যারা জেহাদকে এড়িয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন আপনারা কি আজও ইসলাম বুঝেছেন!? রসুলের (সা:) জীবনী মেনে চলছেন!? মদীনায় যখন ইসলামী রাষ্ট্র হয়, তখন একের পর এক জেহাদ শুরু হয়। বদর, উহুদ, এমনকি খন্দকে বিশ্ব কাফের জোট এক হয়েছিল মুসলিমদের নিঃশেষ করে দিতে। এমনকি মক্কা বিজয়ের পরও জেহাদ শেষ নয় বরং ছড়িয়েছে রুম, পারস্য সাম্রাজ্যবাদীদের বিপক্ষে!!
আজও বিশ্বের কোন প্রান্তে প্রকৃত খেলাফত প্রতিষ্ঠা হলে জেহাদ বৃদ্ধি পাবে শেষ নয়। শেষ জমানার হাদীস দেখুন- খেলাফত প্রতিষ্ঠার পর মুনাফেক বনু কাল্ব, পশ্চাত্য দিকের শত্রুের সাথে, রুমের সাথে মালহামা ও শেষ পর্যন্ত দাজ্জালের সাথে জেহাদ করতে হবে। তাই আজও যদি জাতিকে প্রকৃত ইসলাম ও জেহাদ না শেখান- ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর মুজাহিদের অভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা হারাতে হবে।
কাফেরদের চাপে পড়ে নিজদেশের প্রশাসন ও জনগন মুসলিম নেতাদের ওদের হাতে তুলে দিবে উগ্রবাদী অভিহিত করে শান্তির অজুহাতে।
আর নাহয় এমন একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে অনেক ইসলামী আইন থাকবে কিন্তু আর কাফের ও নিজ জনগনের বিরুদ্ধে যায় এমন আইন বাদ দেওয়া হবে!! যেমন- শিয়া, কাদেয়ানীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেওয়া যাবে না। অথচ এরা ইসলাম ও সাহাবীদের অপবাদ, গালি দিয়ে যাবে আর রাষ্ট্রক্ষমতা থাকা শাসকবৃন্দ চুপ থাকবে!!
বিশ্বের যেকোন প্রান্তে মুসলিম নির্যাতন হলেও কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিরব থাকবে বরং এসব জুলুমবাজ কাফেরদের সাথে ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যাবে। সুদের ব্যাংক, হারাম বন্ধ করা যাবে না!! তখন এরকম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে- মুসলিমরা পরস্পর সংঘাতে জড়াবে।