ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ধোঁকা!

ইসলামের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, আবেগ অপরিসীম। আমাদের অনেকের স্বপ্ন ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক। গণতান্ত্রিক অনেক দলের প্রচারনাও তাই। যদিও তারা আজও নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। বরং তাদের উচিত সাধারণ মানুষ যেন সহজে দ্বীন বুঝতে পারে – ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের আকীদাগুলো সুস্পষ্ট করা। কিন্তু যারা আকীদাকে আড়াল রেখে ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায় – ক্ষমতা পেলে তারা অনেকে জালেম হয়ে উঠে। মুসলিমের উপর উল্টো জুলুম করে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। বিশ্বের বহুদেশে এই উদাহরণ রয়েছে।

রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যখনই তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তখনই তাদের বিজাতীয় শত্রুকে (আল্লাহ) তাদের উপর বিজয় করে দিবেন, ফলে তারা মালিকানাধীন অনেককিছু দখল করে নিবে। যতক্ষণ শাসক আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন করবে না, আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় কার্যকরী করবে না, ততক্ষন আল্লাহ অভ্যন্তরীন সংঘাত লাগিয়ে রাখবেন।” (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫ম খন্ড পৃ-৩৬৩)।

ভারতবর্ষ বিভাজন হয়েছিলো ভূখন্ডকে প্রধান্য দিয়ে নয় বরং ধর্মের ভিত্তিতে। তাই ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশের স্থান হয় পাকিস্তানের ভাগে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ বহু নেতা ও আলেমরা ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখায় তাই ৪৭ এর বিভাজনে বাংলার বহু আলেমও পাকিস্তানের পক্ষ নেয়। আর পাকিস্তান নামকরণ করা হয় মদীনা তাইয়্যেবা নাম অনুসরনে মানে পবিত্র স্থান।

রাজধানী ইসলামাবাদ রাখা হয় যার অর্থ ইসলামের স্থান। পাকিস্তান রাষ্ট্রের স্লোগান ছিল কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। কিন্তু সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জিন্নাহসহ পাক সরকার জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ঘোষণা করে। কুরআনের আইনের বদলে মানবরচিত সংবিধান স্থান দেয় রাষ্ট্রে। যদি পাকিস্তান ইসলামী রাষ্ট্র হতো, তাহলে সংবিধান হতো আল কুরআন। পাক-বাংলার সবার সমঅধিকার হতো, সবাই তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পেত, সবার পতাকা হতো কা-লেমরা পতাকা।

পাক-বাংলার সবচেয়ে দ্বীনী জ্ঞানসম্পন্ন, তাকওয়াপূর্ণ মুসলিমরা মজলিসে শুরা অনুযায়ী শাসন ক্ষমতা পেত। উভয়ের মুদ্রা হতো একই স্বর্ন ও রৌপ্যমুদ্রা, সবাই নিজ নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকার রাখতো।

যেহেতু কুরআনের সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য চলত তাই দুদেশের দাপ্তরিক ভাষা হতো আরবি কিন্তু তা না করে মানবরচিত সংবিধান চালু করে তারা দাপ্তরিক ভাষা উর্দু ঘোষণা করে এরপর ৫২ এর আন্দোলন ও ৭১ এর যুদ্ধ তাদের আল্লাহ ও রসুলের প্রতি অঙ্গীকার ভঙ্গ ও কুরআন ব্যতীত শাসনকার্য চালানোর ফল। ফলে কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের নিকট কিছু ভূমি হারায়, চীনকে কাশ্মীরের কিছু অংশ দেয় ভারতের বিপক্ষে চীনকে বন্ধু হিসেবে ক্ষমতাসীনদের আর বাংলাদেশ হতে তারা অপমানজনকভাবে বিতাড়িত হয়। যদি কুরআন দ্বারা শাসন করত হয়তো যুদ্ধই হতো না। আর আন্দোলন হওয়া উচিত ছিল ৫২ তে নয়, ৪৮ এ যখন সংবিধান হতে কুরআনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

অন্যদিকে যারা পাক রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা ভোগ করেছিল তাদের আকীদা ছিল ইসলামের বিপরীত। তাদের মন্ত্রণালয়ে অনেকেই ইসলামী শাসনের বিরোধী, পশ্চিমাদের সমর্থন পেতে ওদের পদ/ক্ষমতা দেওয়া হয়। এই নীতি আজও পাক রাষ্ট্রকে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে রেখেছে। পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষায় বহুক্ষেত্রে মুমিনদের ক্ষতি করেছে তারা।

মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিল শিয়া ইশনে আশারী। প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে তিনি কখনও ক্ষমতা পেতেন না। কারন মুসলিমদের নেতা হতে হবে উত্তম আকীদা ও আদর্শের অনুসারী। অনেকেই প্রমান দেন তিনি ফ্রী ম্যাসনারির সদস্য ছিল।

পাকিস্তানের দ্বিতীয় গর্ভনর – খাজা নাজিমুদ্দিন, প্রথম প্রধানমন্ত্রীও শিয়া ইশনে আশারী ছিলেন। প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাফরুল্লাহ ছিলেন কাদেয়ানী, পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ছিলেন সনাতনী। তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমাদের সমর্থন অর্জন করতে যে তারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করছে। অথচ জাতিকে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল।

প্রথম অর্থমন্ত্রী ভিকটর টার্নার (খ্রিস্টান)। অথচ ইসলামী রাষ্ট্র চাইলে ইসলামী অর্থনীতি জানে এমন লোককে নির্বাচন করতো। ফলে লোন, সুদভিত্তিক অর্থনীতির কারনে আজ লোনে জর্জরিত। বর্তমানে আমাদের দেশের অনেকে সেই পথে হাটছে। ইসলামী রাষ্ট্রের আইনমন্ত্রী এমন ব্যক্তি যার ইসলামের ইলম নেই, না সে দ্বীন গ্রহন করেছে, তাহলে কিভাবে ইসলামী আইন তৈরি করবে?

প্রথম সেনাপ্রধান স্যার ফ্রাঙ্ক মিসার্ভি (খ্রিস্টান)। এছাড়া ইয়াহইয়া খান, জেনারেল মুহাম্মদ মুসা শিয়া ইশনে আশারী। এছাড়া ওদের সেনাবাহিনীর অনেকে ছিল শিয়া ইশনে আশারী, কাফের। তাদের নির্দেশ ও পরিচালনায় বাংলার সাধারণ মানুষের উপর জুলুম ও নির্যাতন হয়েছিল।

অথচ রসুল (সা), খেলাফায়ে রাশেদীনের বাহিনীতে কখনও কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত করেননি। ঈমান না পর্যন্ত তাদেরকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করা যায় না। যারা আল্লাহর জন্য ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে – যার বিনিময়ে সে জান্নাত আশা করবে – সে অবশ্যই আগে আকীদা পরিশুদ্ধ করবে। কারণ সে জানে – আকীদা বিশুদ্ধ ব্যতীত সকল আমলই বৃথা। আর রসুল (সা:), সাহাবী (রা:) রাষ্ট্রে রুম, পারস্যের লোকেরা সমর্থন দেননি বরং লড়াই করতে হয়েছে।

খলিফা মাহাদী হাফি ক্ষেত্রেও তাই হবে। তার ও ঈসার (আ:) বাহিনীতে কেন বিধর্মী থাকবে না? শুধু তাদের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে। তাই যারা বহিঃবিশ্বের ক্ষমতাসীনদের মন জয় করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ক্ষমতায় যেতে যান, মনে রাখবেন – প্রকৃত ইসলাম চাইলে ওরাই আপনাদের বিপক্ষে দাড়াবে।

কুরআনের সর্তকীকরণ –

আর ইয়াহুদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন। বলুন নিশ্চয় আল্লাহর হেদায়াতই প্রকৃত হেদায়াত। আর যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান আসার পরও, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার কোন অভিভাবক থাকবে না এবং থাকবে না কোন সাহায্যকারীও। (সুরা বাকারাহ-১২০)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *