যুগে যুগে ইসলামকে পুঁজি করে অনেকে ব্যবসা করে চলছে। সরলমনা আবেগী মানুষদের দ্বীন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় দ্বীন ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে।
দেশের বহু স্হানে আজও স্বামী- স্ত্রীর সুসম্পর্ক স্হাপন বিচ্ছেদ, সন্তান, ব্যবসায় উন্নতির নামে ধোকা চলছে।
এসব করতে অনেকক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে শয়তানী বিদ্যা, কুফরী তাবিজ। অথচ শয়তানী বিদ্যা দ্বারা সুস্পর্ক তো অসম্ভব বরং শয়তান চায় মানুষের মাঝে তালাক ও অশ্লীলতা বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ বলেন-
আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত। (সুরা বাকারাহ-১০২)
আজও ইসলামের নামে শয়তানী বিদ্যা চর্চা চলছে।
প্রকৃতপক্ষে স্বামী স্ত্রী সুস্পর্কের জন্য বিবাহপূর্বে দ্বীনদারিতা দেখে বিবাহ ও দোয়া করা উচিত।
ও সন্তান প্রার্থনা করতে হয় বিয়ের পূর্বে।
কুরআনে বর্ণিত রয়েছে-
“হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে।” (সুরা আল ফুরকান- ৭৪)।
এরপর স্বামী, স্ত্রী, ধনসম্পদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করতে পারেন। আর সবর করলে আল্লাহ প্রতিদান দিবেন।
আল্লাহ বলেন-
“জেনে রাখ! তোমাদের অর্থসম্পদ ও সন্তানসন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। আল্লাহর কাছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান আছে।” (সূরা আনফালঃ২৮)
ফেরাউনের স্ত্রী ছিল আছিয়া (আ:) যিনি জান্নাতী।
আবার লূত (আ:) ও নূহ (আ:) এর স্ত্রী ঈমান আনেননি, ফলে নবীর স্ত্রী হয়েও জাহান্নামী হবেন।
আল্লাহ বলেন-
আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের জন্যে নুহ-পত্নী ও লুত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নুহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামিদের সঙ্গে জাহান্নামে চলে যাও।’ (সূরা: তাহরিম : আয়াত ১০)
অপরিদকে স্বামী-স্ত্রী দুজন দ্বীনদার হলেও কখনও কখনও তিক্ততা ও সম্পর্কছেদ হতে পারে। যেমন – রসুলের (সা) পালকপুত্র যায়েদ বিন হারেসার (রা:) সাথে তার স্ত্রী যয়নবের (রা:) সাথে তালাক হয়ে যায়, পরে রসুলের (সা:) সাথে বিবাহ হয়।
রসুল(সা:), যায়েদ (রা:) ও যয়নবের (রা:) সাথে সুস্পর্ক স্হাপনের জন্য কোন গোপন তাদবীর ও তাবিজ দিয়েছিলেন কি!? তাহলে যে বিদ্যা বা আমল রসুল (সা:) করেননি- বর্তমানে যারা ইসলামের নামে তা ছড়াচ্ছে মূলত তা শয়তানী বিদ্যা বা ধোঁকা।
আর এগুলো যদি ইসলামী বিদ্যা হয়- তাহলে সবাইকে শেখানো ও জানানো উচিত। রসুল (সা:), সাহাবীরা (রা:) কোন কল্যানকর ইলম শুধু নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি অন্যদেরও জানিয়েছেন। আর দুনিয়ার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর কিছুটা মনোমালিন্য হবেই এটা জান্নাত নয় যে কখনও কোন তিক্ততা থাকবে না।
প্রিয় রসুল (সা:) ও তার স্ত্রীদের সাথে সামান্য মনোমালিন্য হতো। রসুল (সা:) তাদের শিক্ষা দেন- আখেরাতের সফলতাই জীবনের লক্ষ্যে পরিনত করতে। ফলে তারা দুনিয়ার দুঃখ কষ্টেও আল্লাহর জন্য সবর ও শুকরিয়া আদায় করতেন। যারা হয়েছেন উম্মুল মুমিনীন ও হবেন জান্নাতে রসুল (সা:) সঙ্গী।
অথচ আমাদের দেশে ইসলামী তাদবীরের নামে যে কাজ করা হয় তা মূলত জাদু।
জাদুকর চেনার উপায়
১. রোগীকে তার নাম ও মায়েরর নাম জিজ্ঞাসা করা; যদিও নাম জানা, না জানার সঙ্গে চিকিৎসার কোন সম্পর্ক নেই। এর কারণ আল্লাহ পিতৃপরিচয়ে ডাকতে নির্দেশ করে কিন্তু শয়তান বিপরীত দিকে আহ্বান করে।
কুরআনে বর্নিত –
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।” সূরা আহযাব-৫
২. রোগীর শরীরের সাথে লেগে থাকে এমন কোন জিনিস তলব করা। যেমন: গেঞ্জি, জামা ইত্যাদি। হয়তো জ্বিনজাতি ঘ্রান শুনে বুঝতে পারে কার উপর প্রভাব বিস্তার করতে হবে।
৩. কখনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পশু-পাখী তলব করা। যেমন: কালো বা লাল রঙের মুরগী বা খাশী ইত্যাদি, যা জিনের জন্য জবাই করে। আবার কখনো সে পশুর রক্ত দ্বারা রোগীর শরীর রঞ্জিত করে।
৪. জাদু মন্ত্র লেখা বা পড়া যা বুঝা যায় না এবং যার কোন অর্থও নেই। অনেক সময় ওরা কুরআনের কিছু সুরা উচ্চস্বরে পড়ে আর নিচুস্বরে কুফরী বাক্য পড়ে। অথচ – এটা যদি ইসলামী বিদ্যা কুরআনের আয়াত দ্বারা করা হয় তাহলে গোপনীয়তার কি প্রয়োজন! এই বিদ্যা মুসলিমদের শিখানো উচিত ছিল। ইসলাম মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। তা প্রচার ও প্রসার হতে এসেছে গোপন থাকতে নয়।
৫. রোগীকে চতুর্ভুজ দাগ কাটা কাগজের ভিতরে বিভিন্ন অক্ষর ও নম্বর লিখা পেপার দেওয়া।
৬. রোগীকে নির্দিষ্ট সময় ধরে মানুষ থেকে দূরে অন্ধকার ঘরে একাকী থাকতে বলা। একাকী থাকলে ভয়ের সৃষ্টি হয় ফলে জ্বিন শয়তান তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৭. রোগীকে নির্দিষ্ট সময় ধরে পানি স্পর্শ করতে বারণ করা। আল্লাহ পবিত্রতা পছন্দ করে আর শয়তান অপবিত্র থাকতে পছন্দ করে। তাই কিছু জ্বিন টয়লেট, নালায় থাকে।
৮. রোগীকে কিছু দিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখতে নির্দেশ করা।
৯. রোগীকে নির্দিষ্ট কোন পেপার দিয়ে তা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া গ্রহণ করতে বলা।
১০. রোগীর কথা বলার বা শুনার পূর্বে তার কিছু বৈশিষ্ট্য বলা, যা কেউ জানে না অথবা তার নাম, শহর ও রোগের কথা বলা। এগুলো ক্বারিন জ্বিন দ্বারা করা হয়।
১১. অনেক সময় ওরা জাদুর জন্য এতিম ইদুর, বৃদ্ধ মাছ ইত্যাদি চায়। আসলে এগুলো এজন্য কারণ মানুষ কিভাবে বুঝবে ইদুরটা এতিম, মাছটা দীর্ঘজীবি। ফলে ওরা খোনার, তান্ত্রিকের পরামর্শ চাইবে – সে অধিক টাকার বিনিময়ে যেকোন ইদুর এনে বলবে এটা এতিম ইদুর। মরক্কোয় ব্ল্যাক ম্যাজিকের জন্য প্রকাশ্যে এসব পশু আজও বেচাকেনা হয়।
১২. অনেক সময় ওরা সাহায্যপ্রার্থীকে মৃত ব্যক্তির কবর খুড়ে কাফন নিয়ে আসতে বলে।
আর ওরা সবচেয়ে বড় ধোকা দেয় নিঃসন্তানকে সন্তান দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে। অথচ কুরআন সুস্পষ্ট জানায় ইব্রাহিম (আঃ) ও জাকারিয়া (আঃ) দীর্ঘদিন সন্তানহীন ছিলেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাদের সন্তান দেন। যেখানে নবীরা নিজ সন্তান হওয়ার গ্যারান্টি পাননি সেখানে তারা কিভাবে সন্তানের গ্যারান্টি দেয়। এটা আল্লাহর ইখতিয়ার তিনি কাকে কখন সন্তান দিবেন।।