একটা কথা সুস্পষ্ট বলি, প্রায় সকল কাফের বর্তমানে মুসলিমদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত। সুতরাং আমরা কারো পক্ষে নই।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পিছে অজুহাতগুলো দেখি-
১. অখন্ড রাশিয়াঃ যে কোন বড় দেশের সীমান্তে তাঁদের ঐতিহাসিক সীমান্ত থাকে। সেই হিসেবে রাশিয়া এখন অখন্ড রাশিয়া করার চেষ্টা করবে। রানী ক্যাথেরিন একসময় বলেছিল আমাদের সীমানা এত বড় যে আমরা সীমানা বড় করা ছাড়া এটা প্রতিরক্ষা করতে অক্ষম। স্টালিনও সীমানা অনেক বাড়িয়েছিল। পুতিনও একই দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে যে একসময় ক্রিমিয়া, বেলারুস, বলটিক এলাকা, কৃষ্ণ সাগরও ছিল। আমি তাদের মতই আমার ভূমি বিচরণ করছি, নিজ দেশের জন্য কাজ করছি। ইতিমধ্যেই ক্রিমিয়া ২০১৪ এ আয়ত্ত করে পেলেছি।
আর এখন ইউক্রেন সীমান্তে ২ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন আছে। পুতিন চাইছে তাদের সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় যে আধিপত্য ছিল তা ফিরে পেতে। পুতিন এটাও বলছে যে ১৯৯১ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের যে বিভাজন হয়েছিল তা ঐতিহাসিক ভূল আর এখন ইউক্রেনে রাশিয়া বিদ্রোহী প্রজেক্ট চলছে। তাই নিজ দেশকে বাচাতে ইউক্রেনে আক্রমণ আবশ্যক।
২. আত্মরক্ষাঃ রাশিয়ার দাবি তারা আত্মরক্ষার জন্য এমনটি করছে। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে এবং এমন সব কর্মকান্ড হচ্ছে যা রাশিয়ার জন্য বিপজ্জনক। তাই পুতিনের দাবি জাতিসংঘের ৫১ নং আর্টিকেল অনুযায়ী আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। পুতিন আরো বলে ইউক্রেনে নতুন নাসিৎ পার্টির জন্ম হতে যাচ্ছিল যেটা রাশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই পুতিন জাতিসংঘে বলেছে আমরা কোন ভূল কাজ করিনি, আন্তর্জাতিক আইনও লঙ্ঘন করিনি।
৩. আমরা সাহায্য করতে চাইঃ ইউক্রেনের জনগণ যারা রুশপন্থী চায় রাশিয়ার সাথে থাকতে কিম্তু তাদের সরকার চায় ন্যাটোতে যুক্ত হতে, হতে চায় পশ্চিমাপন্থী।
রাশিয়ার দাবি দীর্ঘদিন হতে ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থীর উপর নির্যাতন হচ্ছে। তাই পুতিন মিডিয়ায় বলেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী ডনবাস রাশিয়ার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। মানে সেখানের জনগণ রাশিয়াকে বলছে, আপনি আসুন, আমাদের বাচান, আমরা আপনাদের সাথে থাকতে চাই।
তাই আমরা ইউক্রেনের সকল সেনাদের নিরস্ত্রীকরণে যাচ্ছি, নতুন নাসিৎদের পতন করাতে যাচ্ছি। আমরা তো বলিনি আমরা আক্রমণ করতে যাচ্ছি।
তাই সে বলে এটা কিভাবে ভূল হতে পারে যে আমরা তাদের সাহায্য করতে যাচ্ছি, নতুন নাসিৎদের পতন করতে যাচ্ছি। এদিকে ন্যাটো ও পশ্চিমারা আমাদের খুব কাছে চলে এসেছে, এদিকে ইউক্রেন আমাদের ঐতিহাসিক পুরোনো ভূখন্ড।
৪. এটা আমাদের অভ্যান্তরীণ ব্যাপারঃ যেহেতু ইউক্রেন আমাদের ভূখন্ড ছিল, সেখানে রাশিয়ানরা রয়েছে এবং তারা বলছে আমাদের বাচাতে আসুন। তাহলে আন্তর্জাতিক মহলের নাক গলানোর কোন কারণ দেখছি না এখানে।
তাই পুতিন অনেক শক্তভাবে বলেছিল, আমি এক শক্তিশালী মিলিটারি অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেই আমাদের থামাতে চেষ্টা করবে, আমাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে তাদের এমন ফলাফল ভোগ করতে হবে যা তাদের ইতিহাসে আর ঘটেনি। মানে এটা তাদের অভ্যান্তরীণ বিষয়।
৫. পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংসঃ এটাই একটা প্রধান কারণ যে আন্তর্জাতিক মহল কিছু করছে না। হারভার্ড অর্থনীতিবিদ এবং ওবামার সাবেক উপদেষ্টা বলেছে, রাশিয়া গ্যাসের একটি বড় উৎস, তাছাড়া তাদের অর্থনৈতিকভাবে তেমন কোন গুরুত্বই নেই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের ৮০% গ্যাসই আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের তথ্যানুযায়ী, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৪১% প্রাকৃতিক গ্যাসের এবং ২৭% তেলের যোগান দেয় রাশিয়া। পুতিন ভালো করেই জানে সে যদি এগুলা বন্ধ করে দেয় তাদের দেশগুলোতে রাত নামবে।
বর্তমানে আমেরিকায়ও তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে, সব জায়গায় বেড়ে যাবে। তাদের পরেই গ্যাসের সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে ইউক্রেনে। রাশিয়া সেটাও তাদের দখলে নিতে চায়। তাই রাশিয়ার ওপর অবরোধ দিতেও আমেরিকা অনেক ভয়ে ছিল এবং বিষয়বস্তু পরিষ্কার করে দিচ্ছিল যাতে তাদের ওপর প্রভাব না পড়ে।
৬. শক্তিশালী বন্ধু থাকাঃ আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীনকে পৃথিবীর বর্তমান তিন পরাশক্তি ধরা হয়। চীন এবং রাশিয়ার বহুদিন ধরেই ভালো সম্পর্ক। অবরোধ আসার কালেই চীন রাশিয়ার সাথে ব্যাবসা আরো ভালো করে করার কথা বলে তাদের রাশিয়াকে সমর্থন করার বার্তা দেয়।
চীন বলতেছে এটাকে আক্রমণ বলা যাবে না বরং এটি একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথা। উল্টো চীন আমেরিকার উপর দোষ চাপিয়ে বলছে তোমাদের কি দরকার ছিল ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করে রাশিয়ার সীমানা ঘেষার চেষ্টা করা। এই যুদ্ধের আগে বহুবার চীনকে অবরোধ দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ইউক্রেনের গম, খাদ্য, সানফ্লাওয়ারসহ বহু খনিজের উপর ইউরোপ নির্ভর করত। এখন তাদের খাদ্যসহ অনেক জরুরী দ্রব্যের জন্য চীনের উপর নির্ভর করতে হবে।
৭. তথ্য-সংবাদ ও প্রচারণা যুদ্ধঃ আগের বিশ্বযুদ্ধের সময়ের মত এইবারও তারা প্রচারণা করছে তাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে, তাই তারা ভূল করছে না।
এতে মানুষকে নিজেদের পক্ষে বুঝানো না গেলেও সন্দেহে পেলা যায়।
রাশিয়া শুধু সংবাদ মাধ্যম নয়, ডিজিটাল মিডিয়ায়ও অনেক শক্তিশালী। তাদের সৈন্যরা ২০১৬ এ আমেরিকার নির্বাচনেও হস্তক্ষেপ করেছিল। দেখুন কত বড় আকারে তারা প্রচারণা চালায় যে আমরা আক্রমণ করছিনা শুধু অত্যাচারী সৈন্যদের নিরস্ত্রীকরণ করতে, আমরা চাই না কোন ক্ষতি হোক, ইত্যাদি।
৮. আন্তর্জাতিক মহলকে বোকা বানানোঃ হিটলারও যখন কিছু দেশের কিছু জায়গা দখল করা শুরু করে কেও কোন হস্তক্ষেপ করে না যতক্ষণ না এটা সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ন্যাটোও এখন সেটাই করছে, যুদ্ধে না গিয়ে সমঝোতার জন্য ডেকে। তাই অবরোধ দিচ্ছে। সব বিশ্বনেতারা বলছে, আমরা দেখছি!! আর রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরগুলো দখল করে নিচ্ছে। পরবর্তীতে দেখা যাবে কোন বড় কিছু করার আগে অলরেডি ইউক্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারও একইভাবে বিশ্বকে বোকা বানিয়েছিল, সে এটা কার্যকরও পেয়েছিল। এখন পুতিনও একই কৌশল অবলম্বন করছে।
আর এসব কারণে চীন-ভারত পরস্পর শত্রু হলেও রাশিয়ার বিপক্ষে যায়নি। কারণ উভয়ের মনোভাব একই।
একটু খেয়াল করুন কারা যেন অখন্ড ভারত চাইছে, সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন হচ্ছে বলে কাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে, সতর্ক হোন নাহলে বিপদ আসছে।
আমরা ভাবছি চীন,পাক মিত্ররা সাহায্য করবে বা মায়ানমার, চীনের সাথে কোয়াডে যোগ দেওয়ার ইস্যুকে (এখনও যোগ দেয়নি,যদি ঘোষণা দেয়) কেন্দ্র করে চীন, মায়ানমার কিছু করে তখন নির্বিকার হয়ে প্রথমে অন্য রাষ্ট্রগুলো আমাদের ধ্বংস হতে দেখবে, এরপর মিডিয়া প্রতিবাদ, প্রচার করে এই ইস্যুকে জনপ্রিয় করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সংঘাতে জড়াবে।
অথচ চাইলে প্রাথামিক অবস্থায় তারা সাহায্য বা প্রতিরোধ করতে পারতো।
হিটলারসহ জালেমরা আক্রমণ তখনই করত পাশ্ববর্তী দুর্বল দেশে যখন জনগণ দীর্ঘদিন হতে বেকারত্ব, অর্থনীতি, জুলুমের কারণে প্রতিবাদী হয়ে উঠে, তাদের ক্ষমতা হারানোর শংকা থাকে।
তখন তাদের নজর অন্যদিকে নিতে যে- আমরা ক্ষমতায় না থাকলে অমুক দেশ আমাদের জন্য হুমকি হতো ও এদেশ আমাদের ছিল তার সম্পদও আমাদের এগুলো ফিরিয়ে আনলে দেশসমৃদ্ধ হবে।
ফলে দেশের জনগণ বিরোধী দল, সরকারি দল ভুলে সেনাবাহিনী ও শাসকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবে।
সুতরাং যখনি ভারতবর্ষে বেকারত্ব, দুর্নীতির কারণে সরকার বিরোধিতার সম্মুখীন হবে তখন পাশ্ববর্তী দুর্বল দেশের উপর অঙ্গুলি তুলবে এবং সংখ্যালঘুদের রক্ষার নামে দৃষ্টি এসব ভূখন্ডে দিবে।