মুসলিমদের জন্য সব সময় আহলে বায়াতের ফজিলত জানা ও তাদের প্রতি মহাব্বত রাখা জরুরী। কিন্তু অনেকে ফেতনা ছড়াবে এই অজুহাতে এসব আলোচনা এড়িয়ে যান। অথচ রসুল (সা:) আহলে বায়াতের ফজিলত বর্ননা করেছেন যেন ফেতনার সময় সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) একদিন মদিনা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থলে ‘খুম’ নামক একটি জলাশয়ের কাছে খোতবা দান করেন। উক্ত খোতবায় তিনি আল্লাহর প্রশংসার পর লোকদেরকে নসিহত করে বলেন-
হে লোকসকল! আমি একজন মানুষ। খুব শিগগিরি আমার প্রভুর নিযুক্ত ব্যক্তি (তথা মৃত্যুর ফেরেশতা) আমার কাছে আসবে এবং আমিও তাঁর আহ্বানে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি অতি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি; যার একটি হল আল্লাহর কিতাব; যাতে রয়েছে নূর এবং হেদায়েত। আল্লাহর কিতাবকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অত:পর বলেন: আর অপরটি হলো আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের বিষয়ে তোমাদেরকে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি (অর্থাৎ মহান আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে অনুসরণ কর) এই বাক্যটিকে তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। (সহীহ মুসলিম ৬০০৭ – ই:ফা:, সুনানে দারেমী, ২য় খণ্ড)
রসূল (সা.) তার উম্মতকে শেষ ওসিয়তস্বরূপ বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে আমি দুটি খুব ভারী জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দুটি আঁকড়ে থাকলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব। আরেকটি আমার আহলে বাইত (আ.)।’ (মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নম্বর ৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ১১১১৯)
এই হাদীসের ব্যাখা এই নয় – কেউ আহলে বায়াত দাবি করলেই তাকে অনুসরণ করা প্রয়োজন যদিও তাদের কার্যকলাপ কুরআন, সুন্নাহ বিরোধী। বরং আহলে বায়াত কুরআন, সুন্নাহ, হক্বের পথে চলবে তাই কুরআন, সুন্নাহ জানা থাকলে প্রকৃত আহলে বায়াত চেনা সহজ হবে।
আমরা জানি খলিফা মাহাদী (হাফি) আহলে বায়াত হতে আসবে এবং তার প্রস্তুতকারী দল (তাওহীদের পতাকাবাহী) আগে হতে কার্যক্রম করবে।
আমাদের অধিকাংশ মুসলিমদের আহলে বায়াতের আলোচনা কারবালা পর্যন্ত এসে থেমে যায়, এরপর তাদের অনেক সংগ্রাম আছে ও থাকবে তা যেন ভুলে যায়।
আহলে বায়াত অর্থাৎ যায়দ ইব্ন আলী ইবনু হুসায়ন ইব্ন আলী ইব্ন আবূ তালিব-এর শাহাদাত সংঘটিত হয়। তার কারণ, তিনি একদল কুফা বাসীর বায়আত গ্রহণ করে বছরের শুরুতে তাদেরকে রওয়ানা হওয়ার ও তার প্রস্তুতি গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। ফলে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে।
ঐতিহাসিকরা বলেন- ঈমাম আবু হানিফা (রহ:), হুসাইন (রাঃ) এর বংশধর যায়েদ (রহ:) এর পক্ষে জেহাদ করার জন্য মুসলিমদের আহ্বান করেছেন। (অনেকের মতে আবু হানিফা (রহ:), ঈমাম যায়েদ (রহঃ) এর নিকট বায়াআত নিয়েছিলেন। সেজন্য তার উপর শাসকরা নির্যাতন করে।
প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন মুজাহিদ আলেম।)
যায়েদ (রহ:) কুফাবাসীর নিজের দিকে আহবান করেন। ফলে ইউসুফ ইব্ন উমর তার অনুসন্ধানে লোক প্রেরণ করেন। বিষয়টি টের পেয়ে শীআহ্বরা যায়দ ইব্ন আলীর নিকট গিয়ে সমবেত হলো এবং বললঃ মহান আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। আবু বাকর (রা), উমর (রা)-এর ব্যাপারে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেন: মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি আমার পরিবারের কাউকে তাদের থেকে নিঃসম্পর্ক হতে শুনিনি। আর আমিও তাদের সম্পর্কে ভাল ছাড়া বলছি না। তারা বলে: তাহলে আপনি নবী পরিবারের রক্ত প্রত্যাশা করছেন কেন? তিনি বলেন: তার কারণ, এ বিষয়টি (ক্ষমতার) আমরা অধিকতর হকদার।
অথচ, মানুষ সে ক্ষেত্রে আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে এবং আমাদেরকে তা হতে সরিয়ে রেখেছে। তবে আমাদের মতে তারা কুফরে উপনীত হয়নি। ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তারা ন্যায়বিচার করেছে এবং কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করেছে।
তারা বলে: তাহলে আপনি এদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন কেন? তিনি বললেন: এরা তো ওদের মত নয়। এরা জনগণের উপর এবং নিজেদের উপর যুলুম করেছে।
আর আমি মহান আল্লাহর কিতাব, মহান আল্লাহর নবীর সুন্নাহ্ জীবিতকরণ ও বিদ্আত নির্মূলকরণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কাজেই তোমরা যদি আমার কথা মান্য কর, তবে তা তোমাদের জন্যও মঙ্গল হবে, আমার জন্যও। আর যদি অস্বীকার কর, তাহলে আমি তোমাদের কোন যিম্মাদার নই। কিন্তু তারা তার বায়আত ভঙ্গ করে তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। এ কারণেই সেদিন হতে তাদেরকে রাফেযী (ত্যাগকারী) নাম দেওয়া হয়।
বর্তমানে ইরানে সবচেয়ে বেশি রাফেজীরা রয়েছে। পক্ষান্তরে, যারা যায়দ ইবন আলীর অনুসরণ করেছে, তারা আখ্যায়িত হয় যায়দিয়াহ্ নামে। তাদের মতাদর্শের একটি সত্য আছে। তা হলো, আবুবকর (রা) ও উমর (রা) উভয়কে সত্যপন্থী বলে বিশ্বাস করা। আবার একটি ভ্রান্তিও আছে। তা হলো, আবু বকর (রা) ও উমর (রা)-এর উপর আলী (রা)-কে প্রাধান্য দেওয়া। অথচ, আলী (রা) তাদের চেয়ে উপরে নন।
তারপর যায়দ ইব্ন আলীকে (রহ:) নির্মমভাবে শহীদ করা হয় এবং তার কবর খুড়ে লাশকে বের করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখা হয় বনু উমাইয়াদের রাজতন্ত্র সময়কালীন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া – ৯ খন্ড -৫২০ পৃ)
কয়েকবছর আগে শামে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ:) এর কবর অনুরূপভাবে খুড়ে ফেলা হয়।
এখন প্রশ্ন হল – এগুলোর মিল কোথায়!?
যাইদিয়ারা বর্তমানে তিন ভাগে বিভক্ত – অন্য শিয়ারা ওদের ও নুসাইরিয়াদের (সিরিয়ার) মুসলিম মানে না। তবে আকীদার দিক দিয়ে যাইদিয়া সুন্নীদের সাথে মিল বেশি, ওরা অন্য শিয়াদের মত খলিফা মাহাদী (হাফি:) আত্মপ্রকাশ হয়েছে বা পাহাড়ে লুকিয়ে আছে বিশ্বাসী নয়।
ফিকাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তারা ঈমাম আবু হানিফা (রহ:) ও পরে শাফী (রহ:) কে মানে। যায়েদ (রহ) এর শাহাদাতের পর তারা ইয়েমেন অবস্থান নেয়, বিদ্রোহ করেও ক্ষমতা থাকে দীর্ঘদিন। বর্তমানে হুতি বিদ্রোহীরা যায়েদীদের একটা শাখা।
বর্তমানে ইরান, সিরিয়া (নুসাইরিয়া) ও ইয়েমেনর (যাইদিয়া) শিয়াদের ঐক্য আসলে যতটা ধর্মীয় তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারনে।
রসুল (সাঃ) বলেছেন শামের ফেতনার সূচনা হবে শিশুর খেলাকে কেন্দ্র করে (আল ফিতান)
তিউনিসিয়ার বিপ্লবের পর অনুরূপ আন্দোলন মিশর, ইয়েমেনসহ বহু দেশের মানুষকে সাহসী করে ফলে মিশরের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। টিভিতে এই বিপ্লব দেখছিল মুয়াবিয়া সাইনেস নামক ১৪ বছর বয়সী এক সিরিয়ান তরুন যে দারার এক স্কুলের ছাত্র ছিল।
এই দেখে সে দেওয়ালে বাশারের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগায়। কিছু তরুনকে গ্রেফতার করা হয়। আস্তে আস্তে হত্যাকান্ড, পুলিশের গুলিবর্ষণে উত্তাল হয় সিরিয়ার দারা শহর, ক্রমান্বয়ে তা পুরোদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাশার ও তার প্রশাসন নির্দেশ দেয় গুলি চালাতে কিন্তু সেনাবাহিনীর কিছুলোক বিদ্রোহ করে এবং আস্তে আস্তে বাশার ও তার বাহিনীর নির্যাতন ও তাদের আকীদা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
যখন শামে জেহাদ শুরু হয় তখন পশ্চিমারা নিজ স্বার্থে বিদ্রোহীদের সাহায্য করে আর ইরান, রাশিয়া বাশারের পক্ষ নেয়। কিন্তু মুজাহিদরা যখন বিজয় অর্জন করে আকসা মুক্ত করার আশ্বাস দেয় তখন ইসরায়েল ওদের বিরোধিতা করে। আর ইসরায়েলকে বাচাতে পশ্চিমাসহ বহু আরবদেশ বিদ্রোহীদের উপর হামলা চালায়।
অথচ বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট আকীদার অধিকারী বাশার ও তার সহচরদের বিরুদ্ধে কিছুই করলো না। আমাদের সমস্যা হল – অনেক আলেম ও ইউটিউবার এই বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দিয়েছে।
ইরানের বিরোধিতা করলে মানুষভাবে সৌদীপন্হী আবার সৌদীর বিরুদ্ধে বললে পীরপূজারী। আসলে আমাদের মুসলিম মূল পরিচয় ইসলামপন্হী সবসময় হক্বের পক্ষে অবস্থান হবে।
শেষ জমানার হাদীস অনুযায়ী – মাহাদীর (হাফি:) বিরুদ্ধে ১ম সেনা পাঠাবে শামের ক্ষমতাসীন যিনি কোরাইশি (সুফিয়ানী হিসেবে পরিচিত হবেন) ও যার সেনাদের মধ্যে অধিকাংশ বনু কাল্বের লোক থাকবে। মদীনার বায়দাহ নামক স্হানে তারা ভূমিধ্বসের শিকার হবে। মাহাদী (হাফি) ও মুসলিমরা কাল্ববের যুদ্ধে বিজয়ী হবেন ও গনিমত অর্জন করবেন। (মুসলিম – কেয়ামতের আলামত, আবুদাউদ, আল ফিতান)।
বনু কাল্ব যুগ যুগ হতে সিরিয়ায় অবস্থান করছে, বাশার আল আসাদ ও তার সেনারা বনু কাল্ববের, তারা নুসাইরিয়া শিয়া হিসেবে খ্যাত।
আল ফিতানের হাদীস অনুযায়ী – অধিকাংশ আলেমের দাবি সুফিয়ানী, ইয়াজিদের ছেলে খালিদের বংশ হতে আসবেন। ইয়াজিদের মাতার নাম ছিল মায়সূন বিনতে বাহদাল বিন দুজালা আল কালবী। অর্থাৎ তার মাতা বনু কাল্বের ছিল।বনু কাল্ব তার মামার বংশ। অতীতেও বনু কাল্ব মক্কা মদীনাহ আক্রমণে ভূমিকা রেখেছিল।
সুফিয়ানীর ক্ষেত্রে অনুরূপ হাদীস পাওয়া যায়।
মাহাদী (হাফি) মক্কা হতে আসবে তাই বর্তমান মক্কার জালেম প্রশাসনকে সমর্থন করতে হবে এটা যেমন ভুল ধারণা তেমনি বনু উমাইয়া হতে সুফিয়ানী আসবে তাই সকল উমাইয়ারা আমাদের শত্রু ভাবা যাবে না।
যতক্ষণ পর্যন্ত বন্ধুত্ব ও শত্রুতা সুস্পষ্ট হবে না আমরা সতর্কতা বজায় রাখা উচিত। কাউকে অতিরঞ্জিত করে বীর আবার মিডিয়ার প্রতারণাশ মুজাহিদদের উগ্রবাদী ভাবা হতে বিরত থাকি।
ইনশাআল্লাহ সত্য মিথ্যা সুস্পষ্ট হবে যদি গবেষণা করেন।