জন্মের পরে প্রথম যে মধুর ধ্বনি আমাদের কানে প্রবেশ করে সেটা হল আল্লাহু আকবর। এরপর বহুবার আযানে, তাকবীরে, ওয়াজে, স্লোগানে এই ধ্বনি আমরা উচ্চারিত করি। কিন্তু এর মর্ম আমরা কতটা বুঝি? আল্লাহু আকবর মানে হল আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সকল নিয়ম/বিধান বাদ দিয়ে সর্বশক্তিমান এক আল্লাহর বিধান মেনে নেওয়া ও তার কাছে আত্মসমর্পণ করা। দুনিয়ার সকল কিছুর চেয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভয় পাওয়া ও একমাত্র তার ক্ষমতার উপর আস্হা রাখা। অথচ বেশিরভাগ মুসলিমই একজন র্যাব, সেনাবাহিনী ও তাদের শাস্তিকে যতটা ভয় করে ততটা আল্লাহ ও তার জাহান্নামকে ভয় করে না। এখন আল্লাহু আকবর উচ্চারিত হয় স্লোগানের মত, তাই অনেকে মুখে আল্লাহু আকবর (সর্বশক্তিমান) বলে কিন্তু আবার বলে- সার্বভৌম ক্ষমতা জনগনের। যে সংসদে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় সে সংসদে কুরআনের আইন বাদ দিয়ে মানবরচিত আইন চালু করা হয়। বাংলাদেশে অশ্লীল চলচ্চিত্রের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লেখা হয়, অনেক রাজনীতির পোস্টারে আল্লাহ সর্বশক্তিমান, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লেখা থাকে অথচ সেখানে থাকে বেপর্দা নারীর ছবি। আল্লাহু আকবর (আল্লাহ সর্বশক্তিমান) এটা কেবল মুখে উচ্চারিত ধ্বনি নয়, এটা মুমিনের আকীদা বা বিশ্বাস। তাই মুমিন সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে বিধানদাতা মানে, কেবল তার ক্ষমতার উপর আস্হা রাখে ও আল্লাহকে সবচেয়ে ভয় পায়। অনেকে ওয়াজে, সালাতে, মসজিদে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান, বিধানদাতা, কুরআনকে সংবিধান, রাসুল (সা:) কে আদর্শ ও জাতির পিতা ইব্রাহীমকে (আ) মানলেও রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে তাদের বিধানদাতা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের রায়, বিধান হয় মানবরচিত সংবিধান, আদর্শ ও জাতির পিতা অন্য কেউ হয়ে যায়। আল্লাহ কি পৃথিবীতে দুটো দ্বীন পাঠিয়েছেন যাতে মসজিদ, ব্যক্তিজীবনে বিধান হবে আল্লাহর ও রাষ্ট্রীয়ক্ষেত্রে বিধান হবে মানুষের। আল্লাহ বলেন- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর! শয়তানের পদাংক অনুসরন করো না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সুরা বাকারাহ-২০৮)। আল্লাহ তাআলা বলেন- “আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেওয়ার ক্ষমতা নেই।” (সুরা ইউসুফ)। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন- “তারা কি জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে? আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধান দানকারী কে আছে?” (সুরা মায়েদা-৫০)। আর আল্লাহর বিধান ব্যতীত সকল বিধানই জাহেলিয়াত। আল্লাহ কি রাসুলকে (সা:) পাঠিয়েছেন শুধু ব্যক্তিজীবনে ইসলাম প্রয়োগের জন্য, রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার জন্য নয়? তাহলে বদর, আহযাব, মুতা, ইয়ারমুকের যুদ্ধ ও মক্কা বিজয় কেন হয়েছিল? মক্কায় যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হত তাহলে মক্কায় এক আল্লাহর ইবাদাত নয় বরং জাহেলিয়াতের মূর্তিপূজা চলত আর মানুষ বর্ণ, দাসত্ব, নারী নির্যাতন হতে মুক্ত হতে পারত না। আজও রাষ্ট্রে ইসলাম নাই বলে বিভিন্ন চেতনা ও শহীদ মিনার, মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে মূর্তিপূজা ও শিরক চলছে, সমাজের ক্ষমতাসীনদের জন্য আইন নিরব আবার দুর্বল, অসহায়, নিরীহকে এই আইন দ্বারা নির্যাতন করা হয়, আর অনেক দেশে মুসলিম ও মসজিদের উপর আঘাত চলছে। কারণ মুসলিমদের ইসলামী কোন রাষ্ট্র ও আবুবকর (রাঃ), উমর (রাঃ), উসমান (রাঃ), আলীর (রাঃ) মত কোন রাষ্ট্রপ্রধান নেই।আসলে আজও আমরা আমাদের আকীদা/বিশ্বাস কি তা বুঝিনি তাই রাজনীতি, ওয়াজের এমনকি ফুটপাতের হকাররা আল্লাহর নাম ও ইসলামকে পুজি করে ব্যবসা করে চলছে।