● ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে আবুল কাশেম আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি, যদি সেগুলোর জবাব আপনি দিতে পারেন তবে আমরা আপনার অনুসরণ করব, আপনার সত্যতার সাক্ষ্য দিব এবং আপনার উপর ঈমান আনব।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যেমন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তার সন্তানদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন, তিনি বলেন,
“আমরা যা বলছি তাতে আল্লাহই কৰ্মবিধায়ক”
সূরা ইউসুফ: ৬৬
তখন তারা বলল, আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলামত কি বলুন। রাসূল (সা) বললেন, “তার চক্ষু ঘুমায় কিন্তু তার অন্তর ঘুমায় না”।
তারা বলল, কিভাবে একজন নারী মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয় আর কিভাবে পুরুষ সন্তানের জন্ম দেয়? রাসূল (সা) বললেন, দুই বীর্য মিলিত হওয়ার পরে যদি মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের চেয়ে বেশী প্রাধান্য বিস্তারকারী হয় তবে মেয়ে সন্তান হয়। আর যদি পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে তবে পুত্র সন্তান হয়।
তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা বলল, ইসরাঈল (ইয়াকুব) কোন বস্তুকে তার নিজের উপর হারাম করেছেন সেটা আমাদের জানান।
তিনি বললেন, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম বেদুইন এলাকায় বাস করতেন। তখন তার ‘ইরকুন নিসা’ নামক রোগ হয়। ফলে তিনি দেখলেন যে, উটের গোস্ত ও দুধ তার জন্য এ রোগের কারণ হয়েছে, তখন তিনি সেটা নিজের উপর নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
তারা বলল, আপনি সত্য বলেছেন। তারা বলল, আপনার কাছে কোন ফেরেশতা ওহী নিয়ে আসে তার সম্পর্কে আমাদের জানান। কেননা, প্রত্যেক নবীর কাছেই কোন না কোন ফেরেশতা তার রবের কাছ থেকে ওহী ও রিসালত নিয়ে আগমন করে থাকে। এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গীটি কে? এটি বাকী রয়েছে। যদি এটা বলেন তো আমরা আপনার অনুসরণ করব।
রাসূল (সা) বললেন, তিনি তো জিবরীল।
তারা বলল, এই তো সে যে যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে আসে। সে ফেরেশতাদের মধ্যে আমাদের শক্র। আপনি যদি বলতেন যে, তিনি মীকাইল, তবে আমরা আপনার অনুসরণ করতাম। কারণ তিনি বৃষ্টি ও রহমত নিয়ে আসে।
তখন আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেন। [মুসনাদে আহমাদ: ১/২৭৪, তিরমিযী: ৩১১]
যুগে যুগে ইহুদি জাতি পাপে লিপ্ত হলে জিবরাইল (আঃ) বিভিন্ন আযাব দিয়ে তাদের ধ্বংস করেন। আর বিভিন্ন বিষয়ে জিবরাইল (আঃ) জেহাদের আয়াত নিয়ে আসত আর তারা জেহাদকে অপছন্দ করতো।
আজও দেখবেন বহু যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর জেহাদের আয়াতগুলো অজুহাত বানিয়ে অনেকে হক্বপন্থী আলেমদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয় আর সত্য দ্বীন গ্রহণ হতে বিরত থাকে।
আল্লাহ বলেন,
“বলুন, ‘যে কেউ জিবরীলের শত্রু হবে, এজন্যে যে, তিনি আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে আপনার হৃদয়ে কুরআন নাযিল করেছেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবেরও সত্যায়ণকারী এবং যা মুমিনদের জন্য পথপ্রদর্শক ও শুভ সংবাদ।”
সুরা বাকারাহ: ৯৭
জিবরাইল (আঃ) নিজ হতে কিছু বলতেন না বরং আল্লাহর নির্দেশে ওহী নিয়ে আসতেন তাই জিবরাইল (আঃ) এর সাথে শত্রুতা মানে আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর সাথে শত্রুতা। তেমনি যদি কেউ কুরআনের সঠিক দ্বীন প্রচারের কারণে মুমিনদের সাথে শত্রুতা করে তাহলে সেও আল্লাহর সাথে শত্রুতা করলো।
আল্লাহ বলেন,
‘যে কেউ আল্লাহ্, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর রাসূলগণ এবং জিব্রীল ও মীকাঈলের শত্রু হবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের শত্রু।’
সুরা বাকারহ: ৯৮
আল্লাহর শত্রুদের মোকাবিলায় আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে আযাব। তার মানে এই নয় আল্লাহ তাদের সাথে সাথে ধ্বংস করবেন বরং তাদের কুফরীর কারণে হেদায়েতের পথ ভুলে কুফরি পথে চলতে থাকবে। ফলে একসময় কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে চিরস্থায়ী জাহান্নামে ঠিকানা হবে।
অপরদিকে মুমিনদের বন্ধু আল্লাহ যাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। আল্লাহ বর্ণনা করেন –
“জেনে রেখো! যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে। যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহাসফল্য। আর (হে নবী!) তাদের কথায় দুঃখ নিওনা। সমস্ত মর্যাদা আল্লাহর হাতে এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
সূরা ইউনুস: ৬৩-৬৫
এখন সিদ্ধান্ত আপনার! সত্য মেনে আল্লাহর বন্ধু হবেন না শত্রু!