আল্লাহই হচ্ছেন প্রকৃতি, কাল বা সময়

আমাদের প্রায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় থাকতে বা চলতে হয়। তখন হয়তো কেউ গালি বা কটুমন্তব্য করে পেলি। প্রকৃতপক্ষে তা হারাম কারণ সময়, কাল, আসমান-জমিনের নিয়ন্ত্রণকারী আল্লাহ, তার ইচ্ছেই সব হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
“অবিশ্বাসীরা বলে, শুধু দুনিয়ার জীবনই আমাদের জীবন। আমরা এখানে মরি ও বাঁচি। জামানা ব্যতিত অন্যকিছুই আমাদেরকে ধ্বংস করতে পারে না।” (সূরা জাশিয়া- ২৪)

● আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আদম সন্তান আমাকে পীড়া দেয়, কারণ সে সময়, জামানা বা যুগকে গালি দেয়। অথচ আমি হচ্ছি সময়, জামানা বা যুগ। আমি সময়ের রাত-দিনকে পরিবর্তন করি।” (সহীহ বুখারী, হাঃ- ৪৭২৬, সহীহ মুসলিম, হাঃ- ২২৪৬)।

● অন্য বর্ণনায় আছে- তোমরা সময়, জামানা বা যুগকে গালি দিও না। কারণ আল্লাহই হচ্ছেন সময়, জামানা বা যুগ। (সহীহ মুসলিম, হাঃ- ২২৪৬)

এর অর্থ এই নয় যে, জামানা আল্লাহর নামসমূহের একটি। বরং এখানে বলার অর্থ হল, জামানা স্বয়ং কোন জিনিসের মালিক নয়। না কোনো কিছু করতে পারে, না কোনো কিছু করতে পারবে? জামানার প্রকৃত সময় ও যুগ আল্লাহ ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তন করেন এবং এই দুটির নিজস্ব কোন কর্মক্ষমতা নেই। ফলে এই দুটিকে গালি দেওয়া প্রকারন্তরে এর পরিবর্তনকারী আল্লাহকে গালি দেওয়া যা অত্যন্ত গর্হিত ও কবীরা গুনাহের কাজ।

বাতাস ও আবহাওয়া

● আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে  বলতে শুনেছি- বাতাস আল্লাহর ইনসাফের অন্তর্ভুক্ত। এটা কখনো অনুগ্রহ নিয়ে আসে আবার কখনো শাস্তি নিয়ে আসে। বিধায় যখন তোমরা তা দেখবে বাতাসকে গালী দিবে না। আল্লাহর নিকট তোমরা বাতাসের কল্যাণ চাইবে এবং বাতাসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে। (আবূ দাউদ ২য় খণ্ড, ৬৯৫ পৃষ্ঠা)

● উবাই বিন কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা বাতাসকে গালী দিওনা। যখন তোমরা তাতে তোমাদের অপছন্দনীয় বিষয় দেখবে তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমরা এ বাতাস থেকে কল্যাণ কামনা করি, তাতে যে কল্যাণ রয়েছে এবং তাতে তুমি যে কল্যাণের নির্দেশ দিয়েছ তা কামনা করি এবং এ বাতাসের অকল্যাণ হতে এবং তাতে যে অকল্যাণ রয়েছে এবং তাতে তুমি যে অকল্যাণের নির্দেশ দিয়েছ তা হতেও আমরা তোমার নিকট আশ্রয় চাই। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন, ২য় খণ্ড ৫১ পৃষ্ঠ)।

তাই প্রকৃতির বিপদ-আপদ হতে আল্লাহর হতে ফানাহ চান। হয়তো আপনি হাটছেন গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপে, ঘমাক্ত ও তৃষ্ণার্ত শরীর নিয়ে। তখন ভাবুন, মরুর বুকে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত  রসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা এতটা কষ্ট করেছেন ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের আত্মত্যাগের কাহিনী আপনাকে ইসলামমুখী করবে। হয়তো আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন – হাশরের ময়দানে প্রচন্ড তাপের কথা যখন মুমিনদের জন্য আল্লাহর আরশের নিচের ছায়া ছাড়া কোন  ছায়া থাকবে না, এভাবে আল্লাহ ইসলামের পথে আহ্বান করছেন।

প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস বা ব্রজপাতে অন্তরে ভীতি জাগছে। একটু ভাবুন, এত শক্তিশালী বাতাস ও বজ্রপাত প্রতিনিয়ত আল্লাহর প্রশংসা করছে ও নির্দেশ মানছে অথচ দুর্বল আমরা কেন মিছে  আল্লাহর প্রশংসা ও নির্দেশ মানা হতে বিরত থাকছি। আল্লাহ বলেন, “বজ্র তাঁরই তাসবিহ ও হামদ জ্ঞাপন করে।” (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৩)। শীতের সকাল ফজরে ঠান্ডা পানিতে অযু করতে কষ্ট হচ্ছে – স্মরণ করুন ফুটপাতে অসহায় নারী, শিশু, মানুষগুলোর কিভাবে রাত কাটছে। হয়তো আল্লাহ ওদের সাহায্য করার আহ্বান জানাচ্ছে যাতে নেকী হাসিল করে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা পেতে পারি।

বন্যা-বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি, বাগান, ব্যবসা বা প্রিয় কিছু হারিয়েছেন!! ভাবুন ও ভরসা রাখুন – হয়তো আল্লাহ এর বিনিময়ে পাপমুক্ত করছে, চিরস্হায়ী জান্নাতে বাগানসমৃদ্ধ বাড়ি দিবেন। আল্লাহ বলেন, ‘(অন্যদিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের ইমানের কারণে তাদের প্রতিপালক তাদের এমন স্থানে পৌঁছাবেন, প্রাচুর্যময় উদ্যানরাজিতে তাদের তলদেশ দিয়ে নহর বহমান থাকবে। তাতে (প্রবেশকালে) তাদের ধ্বনি হবে এই, হে আল্লাহ, সকল দোষ-ত্রুটি থেকে আপনি পবিত্র।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৯-১০)।

বর্ষার অন্ধকার রাতে হয়তো হাটছেন গ্রামপথে, প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কতা সহিত নিতে হচ্ছে কারণ চারপাশে সাপ, বিচ্ছু ও বিষাক্ত প্রানী। একটু ভুল হলে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথ হতে ছিটকে পড়বেন গর্তে। ভাবুন – কবরের সাপগুলো কত ভয়ংকর!! হেদায়েতের আলো জ্বেলে তাকওয়াপূর্ণ প্রতিটি পদক্ষেপে ইসলামের পথে চললেই মুক্তি!! আর পুলসিরাতের কঠিন ধারালো পথ পাড়ি দেওয়া কি সহজ হবে?

আসমান ও জমিনের প্রতিটি বস্তু আল্লাহর প্রশংসা করে তাদের গালি দেওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “আপনি কি দেখেন না যে, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা এবং উড়ন্ত পক্ষীকুল তাদের পাখা বিস্তার করতঃ আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? প্রত্যেকেই তার যোগ্য এবাদত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি জানে। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।” (সুরা নুর-৪১)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *