মানবকল্যাণে সড়ক, স্হাপনা, সেতু, দালান নির্মাণ ইসলাম কখনও বারন করে না বরং উৎসাহ দেয়। আল্লাহ জ্বিনদের সোলোমান (আঃ) এর অনুগত করে দেন যেন তিনি তাদের কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উপকারী কার্যক্রম করতে পারেন।
কারুকার্য শিল্পে দক্ষতা
আল্লাহ বলেন-
“আর সকল শয়তানকে তার অধীন করে দিলাম, যারা ছিল প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী’। ‘এবং অন্য আরও অনেককে অধীন করে দিলাম, যারা আবদ্ধ থাকত শৃংখলে’”
সূরা ছোয়াদঃ ৩৮/৩৭-৩৮
আরও উল্লেখ রয়েছে –
“তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাষ্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লীর উপরে স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত…”
সূরা সাবাঃ ৩৪/১৩
সুলায়মান (আঃ) এর নিকট অনেক বিজ্ঞ মানুষ থাকা স্বত্বেও তিনি জ্বিন দ্বারা দূর্গ, অট্টালিকা নির্মাণ করতো এবং ওরা ডুবুরির কাজ করত।
আল্লাহ বলেন-
“তাকে বলা হ’ল, প্রাসাদে প্রবেশ করুন। অতঃপর যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল, তখন ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। ফলে সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলক্বীস বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করলাম”।
সুরা নামল
এছাড়াও সেলোমান (আঃ) প্রাণীদের কথা বুঝাসহ বহু রহমত দেওয়া হয়েছিল এতে কি তিনি অহংকার করেছেন না কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিনয়ের সাথে!?
কুরআনে বর্নিত –
“সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসল এবং বলল, হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছ এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো।”
নামলঃ ১৯
অপরদিকে অনেক জাতির বৈশিষ্ট্য ছিল শিরকের সাথে সাথে নির্মাণাধীন স্হাপনা নিয়ে অহংকার করত। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেন এবং জমিনে উদাহরণ হিসেবে রাখেন।
১. সাবা জাতিঃ অতি উন্নত ফসল সমৃদ্ধ জাতি ছিল। দক্ষিণ আরবের সম্মৃদ্ধ জনগোষ্ঠি ‘সাবা’। পবিত্র কুরআনে ‘সাবা’ নামক সুরায় এদের অবাধ্যতা, পতন ও পরিণতির খোঁজ মেলে।
মহান আল্লাহ্ বলেন,
‘সাবা অধিবাসীদের জন্য তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন’ দু’টি উদ্যান একটি ডানে, অন্যটি বাম দিকে… তারপর তারা অবাধ্যতা করে, ফলে আমি তাদের ওপর প্রেরণ করি প্রবল বন্যা। আর তাদের উদ্যানদ্বয়কে পরিবর্তন করে দেই এমন দু’উদ্যানে, যাতে উদগত হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং সামান্য কুলবৃক্ষ’
সূরা সাবাঃ ১৫,১৬
২. ইরাম জাতিঃ
“আপনি দেখেননি আপনার রব কি (আচরণ) করেছিলেন আদ বংশের ইরাম গোত্রের প্রতি—
সুরা ফাজ্বর
যারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের?—এবং সামূদ জাতির সাথে? যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল?”
‘আদ ও সামুদ জাতিদ্বয়ের বংশলতিকা উপরের দিকে ইরামে গিয়ে এক হয়ে যায়। তাই আয়াতে বর্ণিত ইরাম শব্দটি ‘আদ ও সামূদ উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য। এখানে ইরাম শব্দ ব্যবহার করে আদ-গোত্রের পূর্ববর্তী বংশধর তথা প্রথম ‘আদকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তারা দ্বিতীয় আদের তুলনায় আদের পূর্বপুরুষ ইরামের নিকটতম বিধায় তাদেরকে عاد إرام ‘আদে-ইরাম’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সূরা আন-নাজমে (وَأَنَّهُ أَهْلَكَ عَادًا الْأُولَىٰ) শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
এখানে তাদের বিশেষণে বলা হয়েছে ذَاتِ الْعِمَاد মূলত عِمَاد শব্দের অর্থ স্তম্ভ। তারা অত্যন্ত দীর্ঘকায় জাতি ছিল বিধায় তাদের (ذَاتِ الْعِمَادِ) বলা হয়েছে। অপর কারো কারো মতে তারা যেহেতু অট্টালিকায় বাস করত সেহেতু তাদেরকে (ذَاتِ الْعِمَادِ) বলা হয়েছে। কারণ অট্টালিকা নির্মাণ করতে স্তম্ভ নির্মানের প্রয়োজন হয়।
তারা সর্বপ্রথম এ জাতীয় অট্টালিকা নির্মাণ করে। দুনিয়ায় তারাই সর্বপ্রথম উঁচু উঁচু স্তম্ভের ওপর ইমারত নির্মাণ করার কাজ শুরু করে।
কুরআন মজীদের অন্য জায়গায় তাদের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে: হূদ আলাইহিস সালাম তাদেরকে বললেন,
“তোমাদের এ কেমন অবস্থা, প্রত্যেক উচু জায়গায় অনৰ্থক একটি স্মৃতিগৃহ তৈরি করছে এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করছে, যেন তোমরা চিরকাল এখানে থাকবে।”
সূরা আশ শু’আরাঃ ১২৮–১২৯
অন্য আয়াতে আছে, (وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ) “আর তারা পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করত নিরাপদ বাসের জন্য।”
তারা শিরকে লিপ্ত ছিল ও অহংকারসুলভ স্হাপনা নির্মাণ করত আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেন।
৩. সামুদ জাতিঃ এরা স্বালেহ (আঃ)-এর জাতি ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পাথর খোদাই কাজের বিশেষ দক্ষতা ও ক্ষমতা দান করেছিলেন। এমনকি তারা পাহাড়কে কেটে নিজেদের বাসস্থান নির্মাণ করত। যেমন কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
‘‘তোমরা তো নৈপুণ্যের সাথে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করছ।’’
সূরা শুআরাঃ ১৪৯
এখন কেউ ভাবে যদি – শুধু স্হাপনা, সড়ক, ফসল উৎপাদনই জাতির সমৃদ্ধির প্রমাণ, তাহলে আদ, সামুদ সমৃদ্ধির প্রমাণ। তাহলে তো আদ, সামুদ, ইরাম, রুম, পারস্য বা বর্তমানের রুশ, ইউরোপ, মার্কিন জাতি সফল।
পক্ষান্তরে যুগে যুগে নবী, রসুল, সাহাবীদের তাওহীদে অটল থাকার জন্য হিজরত করতে হয়েছে গৃহ, বাগান, স্বজন সবকিছু ছেড়ে।
আল্লাহ বলেন –
“এবং যারা ঈমান আনে, যা (পবিত্র কুরআন) তোমার (হে মুহাম্মাদ) প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাজিল করা হয়েছে তার উপর (যেমন : তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল)। আর আখিরাতের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।”
সুরা বাকারাহঃ ৫-৬
যে ব্যক্তি, রাষ্ট্র তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত তারাই সফল। আর পূর্ববর্তী জাতির মত শিরকের পাশাপাশি যতই উন্নত স্থাপনা করা হোক তা নিয়ে অহংকার করা হলে ধ্বংস অনিবার্য।
যত না আমরা সড়ক, স্হাপনা নির্মাণ করতে পেরেছি তারচেয়ে বেশি সংস্কৃতি, প্রগতির নামে শিরক ছড়িয়েছে পূর্ববর্তী জাতির মত।
কোনকিছুতে সফলতা এলে – সোলেমান (আঃ) এর মত আল্লাহর শোকরিয়া আদায় ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
আদ, সামুদ, সাবা, ইরামের মত অহংকারী না হয়ে।
চারপাশে তাকিয়ে দেখুন – জাতি শিরকসহ বিভিন্ন বিপদে নিমজ্জিত আর আমরা মিথ্যা অহংকারে লিপ্ত।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’
সুরা লোকমানঃ আয়াত ১৮
হাদিসে কুদসিতে এসেছে অহংকার আল্লাহ তাআলার চাদর। এ চাদর ধরে যারা টানাটানি করে আল্লাহ তাআলা তা সহ্য করেন না। অহংকারকারীকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে নিক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই মানুষের উচিত অহংকারের মতো বড় পাপ না করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘বড়ত্ব আমার চাদর এবং মহানত্ব আমার ইযার (লুঙ্গি)। কেউ যদি এ দুইটির কোনো একটির ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (মুসলিম, মিশকাত)।
যেহেতু অহংকার জান্নাতের অন্তরায় জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই মুমিন মুসলমানের অহংকারমুক্ত থাকা জরুরী। হাদিসে এসেছে- ‘যার অন্তরে এক যাররা (অণু) পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম ১৬৬, ১৬৯, মিশকাত)