বিশ্বের অনেক প্রাচুর্য্যশীল দেশে বাংলাদেশ এম্বাসীর সামনে দাঁড়ালে এই দৃশ্যগুলো দেখা যায় – প্রায় ২-৩ জন বৃদ্ধলোক (বয়স ৬০-৭৫) থাকে যারা ভীষন অসুস্থ, অচলপ্রায়। দেশে ফেরার আকুতি, দীর্ঘদিন প্রবাসজীবনে কাগজপত্র পাননি, একান্ত বাধ্য হয়ে দেশে ফেরতে হবে তাই কিছু কাগজ প্রয়োজন। প্রবাসে থাকার খরচ অনেক বেশি। দীর্ঘদিন যা উপার্জন করেছেন দেশে স্বজনদের পাঠিয়ে দিয়েছেন আল্লাহই জানে দেশে গিয়ে সেই স্বজনদের কাছে কতটা মূল্য পাবে, না অবহেলা সম্বল হবে!! অথবা কোন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা – দীর্ঘদিন কর্মজীবন শেষে বাধ্যর্ক্য যাকে কর্ম হতে বহিস্কৃত করেছে – দীর্ঘদিন কর্মজীবনের পুরস্কারস্বরূপ অল্পকিছু পেনশনের টাকা তার সম্বল। উভয় পরিস্থিতি তাদের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিচ্ছে – অসুস্থ বিছানায় শুয়ে তিলে তিলে মৃত্যু। দুনিয়ার লাভ, ক্ষতি হিসাব করতে গিয়ে পরকালের সম্বল তেমন জমাতে পারেনি।
এসব দেখি আর ভয় লাগে আমাদের ভবিষ্যৎ যেন এমন না হয় তাই প্রতি সালাতে এই দোয়া পড়ি তাশাহুদের পর-হিসনুল মুসলিম
দোআ: [২৪.৬] কৃপণতা, কাপুরুষতা, বার্ধক্য এবং ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোআ
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَعَذَابِ الْقَبْرِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই কাপুরুষতা থেকে, আপনার আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে, আর আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল বুখলি, ওয়া ‘আউযু বিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল্ ‘উমুরি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন্ ফিতনাতিদ দুনইয়া ও আযা-বিল ক্বাবরি
বুখারি, (ফাতহুল বারীসহ) ৬/৩৫, নং ২৮২২ ও নং ৬৩৯০।
বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি রসুল (সা:) এই দোয়া করতেন। অথচ কৌশর, যৌবনে বর্তমানের চাকচিক্যে আমরা ভবিষ্যতের বাধর্ক্য ভুলে যাই। আহ কেমন জীবন! সাহাবীরা (রা:) মৃত্যু চাইতেন জেহাদের ময়দানে। তাদের অনেকের কবর হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ময়দানের আশেপাশে। আর আমরা কবরের জায়গা ঠিক করতে ব্যস্ত- যেন অতিবৃদ্ধ হয়ে যখন মৃত্যুবরন করবো তখন যেন সন্তান, স্বজনদের নিকট কবর হয়। অথচ এই সন্তানদের ঠিকমত দ্বীন শিখায়নি। না দোয়া করতে জানে ঠিকমত, ওদের পাশে কবর দিলে পরকালে কোন উপকারে আসবে। আল্লাহর কাছে প্রিয় হল যৌবনের ইবাদত – যার মধ্যে উত্তম হল শাহাদাত। যৌবনে যতটা বিবাহের কথা ভাবে বর্তমান যুবকরা তার চেয়ে বহুগুন শাহাদাতের কথা ভাবতো অতীতের মুজাহিদরা।
রাস্তার পাশে দাড়ালে ভিক্ষুকের মুখে সর্বদা আল্লাহ আল্লাহ ধ্বনি শুনি হয়তো তা লোক দেখানো। কিন্তু অবাক লাগে – সে দুনিয়ার ছোট জিনিসের জন্য যতবার আল্লাহকে ডাকছে অথচ জান্নাতের এত নেয়ামত আশা করা আমরা খুব অল্পই আল্লাহকে ডাকি। আমাদের অশ্রুগুলো ছিল কত দামী! মানুষের দৃষ্টির আড়ালে নিরবে তাহাজ্জুদে নিবৃত্তে আল্লাহর রহমত, হেদায়েত, ক্ষমাপ্রার্থনায় ঝরতো। সেই ডাকে আল্লাহ সাড়া দিতেন নিত্য! এখন সামান্য দুঃখে আমাদের চোখে জল আসে, মানুষের কাছে দুঃখ, কষ্ট প্রকাশ করি আহাজারি করি।
বাজারগুলো ঘুরলে কষ্ট ও হাসি আসে- ভেজাল বিরোধী অভিযান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের নামে তামাশা চলে। কিছু ব্যবসায়ীর জরিমানা চলে অথচ পাশেই সিগারেটের দোকান ও দামী হোটেল লাইসেন্সকৃত (বৈধ) মদ বিক্রি হয় এগুলোতে মনে হয় কোন ভেজাল নেই। আর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারন সুদ, সিন্ডিকেট এগুলো যেন বৈধ। কারন হালাল হারামের (বৈধ, অবৈধ) কল্যান ও অকল্যান হিসাব করা হয় মানরচিত আইনে কুরআন দ্বারা নয়। তবু একদল লোক স্বপ্ন দেখায় ক্ষমতা পেলে ইসলামী আইন কায়েম করবে জনগণের মতামতের উপর নির্ভর করে। অথচ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী আল্লাহর আইনকে নির্দ্বিধায় মানতে হবে আর মুসলিম হল আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণকারী। কেউ যদি তা যাচাই বাচাই করে গ্রহনযোগ্য হলে মানবে এরকম আশা রাখে সে যেন নিজেকে আল্লাহর চেয়ে জ্ঞানী দাবী করলো।