আত্মত্যাগ ও আত্মহত্যা

প্রায় প্রতিদিনই আত্মহত্যার খবর আসে। অনেকের মতে আত্মহত্যার কারণ দুঃখ, ভালোবাসাহীনতা, দারিদ্র্যতা ও হতাশা। যদি দুঃখ, দারিদ্র্যতা, মায়াহীন বেড়ে উঠা আত্মহত্যার মূল কারন হতো তাহলে ফুটপাতের অসহায় শিশুরা ও ইয়েমেনের ক্ষুধার্তরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করত। অথচ আত্মহত্যার তালিকায় সমৃদ্ধ দেশের বা সমৃদ্ধ পরিবারের লোকের সংখ্যাই বেশি। আত্মহত্যার মূল কারণ হল দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া আর হতাশা। মুসলিমের কাছে দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র আর ফসল/সাফল্য হল আখেরাতে রবের সাক্ষাৎ লাভে। তাই দুনিয়ার সকল দুঃখ, কষ্ট, হাসিমুখে মেনে নেয়। পক্ষান্তরে যারা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেয় দুনিয়ার সামান্য দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্র্যতায় হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অথচ মুসলিম কখনও আল্লাহর রহমত হতে হতাশ হতে পারে না, হতাশ হয় শয়তান। ইবলিশ অর্থ চরম হতাশ তার নাম ছিল আযাযিল, সে হতাশ হয়ে যায় আল্লাহ তার বদলে আদম (আঃ) কে প্রাধান্য দেওয়ায়। সেভাবে তার সম্মানহানি হয়েছে ও অহংকার প্রর্দশন করে জাহান্নামের পথ বেছে নেয়। আজও অনেক মানুষ দুনিয়ার সামান্য সম্মানহানি হলে সে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে জাহান্নামের পথ বেছে নেয়। অথচ আদম (আঃ) জান্নাত ও জান্নাতের স্ত্রী হারিয়েও হতাশ না হয়ে ইস্তিগফার ও দোয়া করেছেন ফলে তিনি স্ত্রী ও সুসন্তানসহ জান্নাতে অজীবন থাকবেন। মানবচরিত্রে দুটো দিক বিদ্যমান। কেউ দুঃখ, দুর্দশা, কষ্ট, শোক, হারানোর বেদনায় আদম (আঃ) এর মত আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তিগফার করে আল্লাহর নিকট প্রিয় হয় আর কেউ ইবলিশের মত নিজের দোষ স্বীকার না করে বা পরীক্ষা না ভেবে (দুঃখ, কষ্ট, শোক, মৃত্যুভয়, সম্মানহানী, ক্ষুধা দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করবেন(সুরা বাকারাহ)) অন্যকে দায়ী করে হতাশ হয়ে যায়। আরবের সুর্দশন যুবক, সবচেয়ে দামী পোষাক, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন রাসুল (সাঃ) এর প্রিয় সাহাবী মুসাইব বিন উমায়ের (রাঃ)। যিনি ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর ব্যাপক নির্যাতন, তার প্রিয় মা ও আত্মীয়, সম্পদ সবকিছু ছাড়তে হয়। একদিন তিনি জীর্ন তালি দেয়া পোষাক পরে হাটছিলেন তা দেখে অনেক সাহাবী কেঁদে দিলেন। যার গায়ে থাকত বিশ্বের দামী পোষাক, যে ছিল সৌন্দর্য্যের উদাহরণ, তার কি অবস্থা! রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশে ইসলামের প্রথম দাঈ হয়ে মুসাইব বিন উমায়ের (রাঃ) মদীনায় যান। তার দাওয়াতের কল্যানে মদীনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ল আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য উত্তম আশ্রয় তৈরি হল। উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইসলামের পতাকা মুসাইব (রাঃ) এর হাতে তুলে দেন। যুদ্ধের মধ্যে কাফেররা রাসুলকে (সাঃ) হত্যার উদ্দেশ্য খুজতে থাকে, মুসাইব তা বুঝতে পারে তাই তিনি পতাকা উচু করে ধরেন ও উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকেন যেন কাফেরদের দৃষ্টি তার দিকে পড়ে ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিরাপদ থাকে। কাফেররা তার একহাত কেটে ফেললেন, মুসাইবের দুহাত কাটা, তিনি দুবাহুতে কালেমরা পতাকা তুলে ধরেন এবং শহীদ হন। পরবর্তীতে তার ও সাহাবীদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে আহত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জীবিত অবস্থায় ফিরেন। তার কাফনের জন্য কাপড় ছোট হয়, পরে ইখজির ঘাস দিয়ে তার পা ডেকে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার লাশের সামনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন – মক্কার সুর্দশন যুবক, সবচেয়ে দামী পোষাক পরা সাহাবী একটা কাফনের কাপড় পেল না। এই হলো মুসলিম যুবকদের আর্দশ, ইসলামের ১ম দাঈ, রাসুলের (সাঃ) প্রিয় সাহাবীর ইসলামের জন্য আত্মত্যাগের কাহিনী। অথচ বলিউড, হলিউড তারকারা দুনিয়ার সম্পদ, খ্যাতি সবপেয়েই আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়। আর মুসলিম যুবক, যুবতীরা আজ তাদের মত হতে চায়!? যারা আল্লাহর ইবাদাত করে তারা জানে প্রতিটি আত্মত্যাগের উত্তম প্রতিদান দেওয়া হবে অথবা তা গোনাহ ক্ষমা করার উছিলা, তাই সে অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে জীবনে যাই ঘটুক না কেন। অপরদিকে যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে দুনিয়ার ধন-সম্পদ, প্রবৃত্তি, দেব-দেবীর পূজা করে ও কোন সমস্যা হলে দ্বীনের পথে নয় বরং মনগড়া পথে সমাধান চায়, তা তাদের অন্তরে শান্তি আনতে পারে না। তারা যাদের রব মানছে (অনেকে দ্বীনের বদলে নিজের চিন্তাভাবনাকে সমাধানের একমাত্র উপায় ভাবে, এভাবে নিজের চিন্তাভাবনাকে রবে পরিণত করে) তার ন্যায়বিচার ও ক্ষমতার উপর সন্দেহ করে, অপরদিকে সিরিয়ার সে ছোট শিশুটা আল্লাহকে ন্যায়বিচারকভাবে তাই মৃত্যুর সময় সে বলেছিল, “আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো।” ইয়েমেনের সে মা যার তিনটি সন্তান হারিয়ে সুবহানাল্লাহ বলেন – আমি আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান পাবো, কাশ্মীরের ৭০ বছরের বৃদ্ধ তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বলেছিল- “আমার ছেলের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ! আমি শহীদের পিতা।” আল্লাহর উপর অগাধ বিশ্বাস তাদের প্রতিকূল পরিবেশে স্হির রাখে। অতীতে মুসলিমদের দ্বীনের জ্ঞান ছিল তাই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবেসে আল্লাহর পথে জীবন, সম্পদ কোরাবানী করত। আর বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও মানুষ হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *