আকীদায় ভিন্নতা রেখে ঐক্য

বিদআত উম্মাহকে বিভক্ত করে আর সুন্নাহ মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ করবে। রাজতন্ত্র দ্বারা শুরু হওয়া বিদআতের কারনে মুসলিমরা আজ বহু দলে বিভক্ত আর একমাত্র খেলাফাহ মুসলিমদের ঐক্য ফেরাতে পারে।

খেলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ ফিরিয়ে আনতে হোসাইন (রা) স্বোচ্চার হোন ও শহীদ হোন। তিনি উম্মাহর বুকে চেপে আসা প্রথম বিদআত রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করেন, উম্মত যেন খেলাফায়ে রাশেদীনের মত স্বাভাবিক মত প্রকাশের অধিকার ফিরে পায় এবং খেলাফত আবার ফিরে আসে সেজন্য তিনি উদ্যোগী হোন।

সাফীনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবুওয়্যাতের ভিত্তিতে পরিচালিত খিলাফত ত্রিশ বছর অব্যাহত থাকবে। অতঃপর আল্লাহর যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা তাঁর রাজত্ব দান করবেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমাকে সাফীনাহ (রাঃ) বলেছেন, হিসেব করো, আবূ বকর (রাঃ) দুই বছর, ‘উমার (রাঃ) দশ বছর, ‘উসমান (রাঃ) বারো বছর ও আলী (রাঃ) এতো বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি সাফীনাহ (রাঃ) -কে বললাম, এরা ধারণা করে যে, ‘আলী (রাঃ) খলীফাহ ছিলেন না। তিনি বলেন, বনী যারকা অর্থাৎ মাওয়ানের বংশধরগণ মিথ্যা বলেছে। – সুনানে আবু দাউদ

অনেকে ক্ষমতা অর্জনের জন্য উম্মাহর ঐক্য চান- অথচ তারা একদিকে বিশুদ্ধ আকীদার বিরোধিতাকারী, মুমিনদের বিরোধিতা করছে অন্যদিকে কুফর, শিরক, বিদআতিদের সাথে ঐক্য চাইছে।

এরুপ ঐক্য কখনও সাহাবী, তাবেয়ী, ইমামগন করেননি।
উবাহ ইবনে সালুল হতে শুরু করে বনু উমাইয়ার মুনাফেক, বনু আব্বাসের ক্ষমতালোভী দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমের যতটা ক্ষতি হয়েছে ততটা কাফেরররাও করতে পারে নি। কাফেররা যখন আঘাত হানে মুসলিম ভূখন্ডে, তখন মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করে। কিন্তু মুনাফেকরা যখনি ক্ষমতা পাবে ইসলামে বিদআত, কুফর প্রবেশ করবে ও আহলে বায়াতের নির্যাতন হবে। বনু উমাইয়ার সময় জাবারিয়া, বনু আব্বাসের সময় কাদেরিয়া ও উসমানীদের সময় সুফিবাদ প্রসার পায়। তাদের অনেকে ক্ষমতার স্বার্থে ওদের পৃষ্ঠপোষন করেন।

বনু আব্বাসীরা আহলে বায়াতের ভালোবাসার নামে ক্ষমতা পেলেও পরে তাদের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করায় আহলে বায়াতদের হত্যা, বন্দী করেন এমনকি ইমাম মালেক, আবু হানিফার উপর নির্যাতন হয়। আজও অনেকে আহলে বায়াতের ভালোবাসার দাবি করে অথচ আহলে বায়াতের বিরুদ্ধে লড়ছে ও ভবিষ্যতেও লড়বে হয়তো।

কারবালা হতে শুরু করে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা) এর শাহাদাত ও কাবাগৃহে আগুন, আহলে বায়াত ইমাম যায়েদ রহ, ও ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ রহ (হাসান রা বংশধর) ও তাদের সমর্থনকারীদের হত্যা, জুলুম, নির্যাতন করা হয়েছে। ৩১৭ হিজরিতে কারামতিয়ারা হারাম শরিফে অতর্কিত আক্রমণ করে হাজরে আসওয়াদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে ফিরিয়ে এনে চুনা দিয়ে তার চারপাশ এঁটে দেওয়া হয়।

সাফাভী (শিয়া রাফেজী আকীদায়) ক্ষমতা আসলে ইরানে মুসলিমদের উপর জুলুম, হত্যা শুরু করে। অনুরূপ তারা আজারবাইজানও করে। কবর খুড়ে লাশকে বের করতো। তাদের শাসনামলে ও শাসকের নির্দেশে আযানে – আশহাদু আননা আলীয়ান ওয়ালিউল্লাহ (আলী রা আল্লাহর ওয়ালি) ও হুসাইন (রা:) মৃত্যুদিবস পালন ও শোকের বুক চাপড়ানোসহ উচ্চস্বরে বিলাপ চালু করে যা আজও বিদ্যমান। বহুজনকে জোরপূর্বক রাফেজী শিয়া ধর্মগ্রহণ করতে বলা হয়।

একদিকে বনু উমাইয়া, বনু আব্বাসী, সাফাভী, কারামাতিয়া দ্বারা ভূখন্ডগুলো বিজয় হয়েছিল ও তাদের অনেকে কাফেরদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিল। অপরদিকে তাদের মতবাদ ও জুলুমের বিরোধিতা করায় আহলে বায়াত, ইমামগন, মুসলিমদের হত্যা, বন্দী, নির্যাতন করা হয়। আজও মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে মুনাফেকদের ক্ষমতায় একদিকে মসজিদ-মাদ্রাসা হচ্ছে, দরবারী আলেমরা সুখে আছে আর অন্যদিকে প্রকৃত মুমিনরা জুলুম, নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

এমনকি সুফিয়ানী আসলেও আহলে বায়াত ও খলিফা মাহাদী (হাফি) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।

আবু বাকর ইবনু আবু শাইবাহ (রহঃ) ….. ’আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত পা নাড়ালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আজ রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় আপনি এমন আচরণ করেছেন, যা আগে আপনি কখনো করেননি। তিনি বললেনঃ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কুরায়শ বংশীয় জনৈক লোক বাইতুল্লাহ শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তার কারণে আমার উম্মাতের একদল লোক বাইতুল্লাহর উপর আক্রমণের ইচ্ছা করবে। তারা রওনা হয়ে গাছপালাশূন্য ময়দানে আসতেই তাদের ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। এ কথা শুনে আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! বিভিন্ন ধরনের মানুষই তো রাস্তা দিয়ে চলে। উত্তরে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাদের মাঝে কেউ তো স্বেচ্ছায় আগমনকারী, কেউ অপারগ, আবার কেউ পথিক মুসাফির। তারা সবাই এক সঙ্গেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে বিভিন্ন মিল্লাতের অনুসারী হিসেবে তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তাদের নিয়াতের ভিত্তিতে উখিত করবেন। (মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৯৮০, ইসলামিক সেন্টার ৭০৩৭)

(অবশ্যই উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ) সহ কিছু শাসক ছিল ব্যতিক্রম – ন্যায়বিচারক ও মুসলিমদের আদর্শ)

এছাড়া মুসলিম শরীফ, আল ফিতান, আবু দাউদ হাদীস অনুযায়ী – সুফিয়ানীর সৈন্যরা হবে বনু কাল্বের যারা বর্তমান সিরিয়ায় ক্ষমতাসীন।

আবু বকর (রা:) যাকাত অস্বীকারীদের সাথে ঐক্য ঘোষণা না করে বরং যুদ্ধ ঘোষণা করেন অথচ তখন মুসলিমরা রুম ও ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল। সেই সময়কাল মুসলিমদের জন্য অতি বিপদজনক ছিল তবুও সাহাবীরা সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

অনেকে উবাহ ইবনে সালুলের জানাজার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। উবাই ইবনে সালুলের জানাজার পূর্বে সরাসরি কোন নির্দেশ ছিলো না তাই রসুল (সা:) জানাজাহ পড়ান। কারন রসুল (স:) ছিলেন সবচেয়ে কল্যানকামী।

হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমি বলতে শুনেছি- আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেলে তার জানাজা আদায়ের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আবেদন করা হয়। তিনি সেখানে যেতে শুরু করলেন। তিনি জানাজার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে আমি ঘুরে গিয়ে তার বুক বারবার সামনে দাড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তাআলার দুশমন ইবনু উবাইর জানাজা কি আপনি আদায় করবেন, যে অমুক দিন এই কথা বলেছে, অমুক দিন এই কথা বলেছে? এভাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতে লাগলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসি দিতে থাকলেন।

(হজরত ওমর বলেন) এমনকি আমি যখন তাকে অনেক কিছু বললাম, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ওমর! আমার সামনে থেকে সরে যাও। আমাকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি (জানাজা আদায়ের) এখতিয়ার গ্রহণ করেছি। আমাকে বলা হয়েছে-

তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর, এমনকি তুমি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তা’আলা তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা আত-তওবা : আয়াত ৮০)

(নবিজি বলেন) আমি যদি জানতাম তাদের জন্য সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন, তাহলে আমি তাই করতাম।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজা আদায় করলেন এবং তার জানাজার সঙ্গে গেলেন। আল্লাহর শপথ! কিছুক্ষণ পরেই এ দুটি আয়াত অবতীর্ণ হয়-

আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা অবাধ্য (নেফাক) অবস্থায় মারা গিয়েছে।’ (সুরা তওবা : আয়াত ৮৪)

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কোনো মুনাফিকের জানাজা আদায় করেননি এবং এদের কবরের পাশেও দাঁড়াননি।’ (তিরমিজি ৩০৯৭- সংক্ষিপ্ত)

আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুলের নেফাক ছিল অন্তরে ও পরে তা কর্মে প্রকাশিত হয়। অপরদিকে যারা সরাসরি ইসলাম ও মুসলিমের সাথে শত্রুতা করতো, আকীদায় কুফর, শিরক ছিল তাদের ব্যাপারে ফাতওয়া আরও কঠোর। তাদের দাওয়াহ দেওয়া যেতে পারে আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রকৃত ইসলাম ও মুসলিমের দলে যোগ না দিবে তাদের বিশ্বাস করা যাবে না।

সাহাবী, আহলে বায়াত, তাবেয়ী, ইমামগন অনুরূপ নীতি অনুসরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *