অভাব ও বিপদ বড় রহমত

আমাদের সবার জীবনে বিপদ, শোক, প্রিয় হারানোর বেদনা ও অভাব আসে এবং থাকবে কারণ এগুলোই দুনিয়ার জীবনে পরীক্ষা যার মাধ্যমে আল্লাহ তার কৃতজ্ঞ বান্দাকে যাচাই করে নেন। মুমিনের জীবনে অভাব বা বিপদ আল্লাহর রহমত যা আল্লাহর নিকটবর্তী করে আর কাফের, মুনাফেক হতাশ হয়ে আল্লাহর পথ হতে দূরে সরে যায়। রসুল, নবী ও সাহাবীদের জীবনে এর বহু উদাহরণ রয়েছে।

১. আলী (রাঃ)- আলী (রাঃ) যখন ছোট তখন তার পিতা আবু তালিব ভীষন অভাবে পড়ে। ফলে রসুল (সাঃ) আলীকে (রাঃ) তার ও খাদেজার (রাঃ) নিকট এনে লালন পালন করেন। আর এই রহমতে আলী (রাঃ) হয়ে উঠেন সবার আগে ঈমান আনয়নকারী সবচেয়ে কমবয়সী সাহাবী। সারাজীবন রসুলের (সাঃ) সান্নিধ্যে কাটান এবং তার কন্যা ফাতেমাকে (রাঃ) বিয়ে করে আহলে বায়াতের অন্তর্ভুক্ত হন। আজ পর্যন্ত দূরুদে তাদের জন্য দোয়া করা হয়। অভাবের নেয়ামত তাদের জান্নাতের সমৃদ্ধি দিয়েছে।

২. যায়েদ ইবনে হারেসা (রাঃ)- যায়েদ (রাঃ) ছোটবেলায় হারিয়ে যান পরে দাস হিসেবে বিক্রিত হন। রসুল (সাঃ) এর সাথে খাদেজার (রাঃ) বিয়ের পর রসুল (সাঃ) যায়েদের (রাঃ) এর মালিকানা পান। পরে যায়েদের (রাঃ) চাচা, বাবা তাকে খুজে পান। রসুল (সাঃ)এর কাছে তাকে ফেরত চান কিন্তু ছোটশিশু যায়েদ (রাঃ) রসুলের (সাঃ) ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না। রসুল (সাঃ) খুশি হয়ে তাকে নিজ পুত্র (পালক) ঘোষণা করেন। মুহাম্মদ (সাঃ) রসুল হওয়ার পর তিনিও ঈমান আনেন। আজীবন দুঃখ, কষ্টে রসুলের (সাঃ) সাথী হন ও উত্তম শহীদ হন। তিনি সরাসরি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তের অন্যতম।

৩. সালমান ফারসী (রাঃ)- ইরানে জন্মগ্রহণকারী ধনাঢ্য বাপের সন্তান সালমান ফারসী (রাঃ)। সত্য দ্বীনের খোজে বের হন, দীর্ঘদিন খ্রিস্টানদের বিভিন্ন পোপের নিকট কাটান। পরে মৃত্যুর পূর্বে পোপ জানান খ্রিস্টধর্মে আর সত্য আলেম নেই তবে একজন রসুল আসার সময় হয়েছে যিনি মদীনায় আসবেন।ফলে তিনি মদীনার উদ্দেশ্য রওনায় বের হন। সিরিয়ার বনু কাল্বের লোকগুলো বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেন। ঘটনাচক্রে তিনি মদীনায় আসেন। এরপর রসুল (সাঃ) মদীনায় আসেন তিনি সাক্ষাৎ করেন ও ঈমান আনেন। সত্যের সন্ধানে তার প্রচেষ্টা রসুলকে (সাঃ) বিস্মিত করে। তিনি তাকে মুক্ত করার জন্য তার ইহুদি মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন। মালিক দুটো শর্ত দেন- ১. ৪০টা স্বর্নমুদ্রা ২. কিছু দিনের মধ্যে ৩০০ খেজুর গাছ লাগানো ও তাতে ফল ধরতে হবে। ফলে রসুলের (সাঃ) নির্দেশে সালমান ফারসী (রাঃ) গর্ত খনন করেন তাকে সাহায্য করেন। আলী (রাঃ) আর রসুল (সাঃ) নিজ হাতে বীজবপন করেন আর সেখানে খেজুর গাছ জন্মায় ও বিশ্বের বরকতময় ফল আজওয়া খেজুর জন্মায় যা বিষ ও জাদুর ক্ষতি হতে মানুষকে রক্ষা করে।” (বুখারী -৫৪৪৫)। আজও মানুষ আজওয়া খেজুর দ্বারা উপকৃত হয় ও মুমিনরা তা দেখলে সালমান ফারসীর (রাঃ) কথা মনে পড়ে। আর তিনি ছিলেন অন্যতম হাদীস বর্ননাকারী যার দ্বারা উম্মত অজীবন লাভবান হচ্ছে। তাই বিপদ, অভাব মুমিনের জন্য রহমতস্বরূপ। হতাশ হওয়া উচিত নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মহাপরিকল্পনা রয়েছে। (মুসলিম শরীফ- ৬২৬৭)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *