অবরোধ ও মুক্তি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, জার্মানি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং এর রাজধানী বার্লিনের অবস্থা ছিল ভয়াবহ। প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বার্লিনবাসী তখনও যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরে বাস করছিল, কিন্তু খাবারের অভাব ছিল এবং সমস্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আশ্রয় পাওয়া কঠিন ছিল। সেই সময়ে অর্থনীতির বেশিরভাগই ছিল কালোবাজারি পণ্য।

পুনর্নির্মাণ শুরু করার জন্য, মিত্ররা জার্মানিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন এবং রাশিয়ার মধ্যে বিভক্ত করে। বার্লিনকেও অকুপেশন জোনে বিভক্ত করা হয়েছিল; সোভিয়েতরা পূর্ব অংশ নিয়ন্ত্রন করত আর পশ্চিম নিয়ন্ত্রণ করত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স।

রাশিয়া বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দখলদারিত্বের নীতি সমন্বয় করার জন্য যুদ্ধের পরে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের সাথে নিয়মিত বৈঠক করেছিল, কিন্তু ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে এটি বন্ধ হয়ে যায় যখন এটি জানতে পারে যে অন্য তিনটি দেশ গোপনে তাদের অঞ্চলের বাইরে একটি নতুন জার্মান রাষ্ট্র তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।

১৯৪৮ সালের জুন মাসে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য তাদের অঞ্চলে একটি নতুন মুদ্রা, ডয়েচমার্ক প্রবর্তন করে, যার মধ্যে পশ্চিম বার্লিন অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা সোভিয়েতদের কাছ থেকে এটিকে আটকে রেখেছিল কারণ তারা রাশিয়ার কাছ থেকে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে এবং কালো বাজারকে প্রশমিত করতে চেয়েছিল এবং সেইসাথে মার্শাল প্ল্যানের অধীনে সাহায্য আনতে চেয়েছিল, যা ইউরোপকে পুনর্গঠনের একটি মার্কিন কৌশল।

২৪ জুন, ১৯৪৮-এ, সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের মিত্র-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সমস্ত রাস্তা, রেল এবং জলপথ অবরোধ করে, খাদ্য, কয়লা এবং অন্যান্য সরবরাহের অত্যাবশ্যক প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। সোভিয়েত সৈন্য সংখ্যা মিত্রবাহিনীর সংখ্যাকে ব্যাধিগ্রস্থ করেছিল, যেগুলি যুদ্ধের পরে নেমে এসেছিল, তাই মিত্ররা সামরিকভাবে এটি সম্পর্কে খুব কমই করতে পারতো।

কিন্তু সোভিয়েতরা মিত্রবাহিনীর আকাশসীমা অবরুদ্ধ করতে পারেনি, তাই মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের বাহিনী মিত্র সেক্টরে সরবরাহ দিতে আকাশ ব্যবহার করে। ২৬ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন ভিটলস শুরু করে, যাতে পরে যুক্তরাজ্যও যোগ দেয়। এটি ছিল সবচেয়ে বড় আকাশপথে পুনঃসাপ্লাই মিশন। মিত্ররা তাদের নিজেদের (সোভিয়েত) পাল্টা অবরোধ আরোপ করে, পূর্ব জার্মানি এবং পূর্ব বার্লিনের সাথে বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করে।

এয়ারলিফ্ট প্রথমে একটি কঠিন কাজ ছিল। ২ মিলিয়নেরও বেশি বার্লিনবাসী এই সহায়তার উপর নির্ভর করছিলেন, যার মধ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানী এবং ওষুধ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এক পর্যায়ে, প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে টেম্পেলহফ বিমানবন্দরে বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর বিমান অবতরণ করছিল।

ইস্টার সানডে, এপ্রিল ১৭, ১৯৪৯-এ, প্লেনের অবিরাম মিছিল ১৩,০০০ টন পণ্যসম্ভার সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছিল, যার মধ্যে ৬০০টি কয়লার সমতুল্য রেলরোড গাড়ি ছিল – সবই একদিনে! এয়ারলিফ্টটি ১০ ​​মাস ধরে চলছিল।

এই অবরোধের কারণে সোভিয়েতের বদনাম ছড়িয়ে যায়। তার উপরে, একটি মিত্র পাল্টা অবরোধ সোভিয়েত সেক্টরে তীব্র ঘাটতি সৃষ্টি করছিল, যার ফলে একটি বিদ্রোহের আশঙ্কা ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ১১ মে, ১৯৪৯ তারিখে অবরোধ তুলে নেয়; যাইহোক, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এয়ারলিফট শেষ হয়নি।

পুরো এয়ারলিফ্টের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য পশ্চিম বার্লিনে ২৭৮,০০০ এরও বেশি এয়ারড্রপের মাধ্যমে ২.৩ মিলিয়ন টনেরও বেশি খাদ্য, জ্বালানি করেছে। আমেরিকান এয়ারক্রুরা ১৮৯,০০০ টিরও বেশি ফ্লাইট করেছে, মোট প্রায় ৬০০,০০০ ফ্লাইং ঘন্টা এবং ৯২ মিলিয়ন মাইল অতিক্রম করেছে।

অথচ কিছু বছর আগেও জার্মানীর হিটলারের সাথে লড়ছিল তারা। পরে দ্বন্দ্ব ভুলে সাহায্যে এগিয়ে আসে। এবার আসুন, ইরাক, সিরিয়ায় আবরোধ চলেছিল। ইয়েমেনের শত শত শিশু না খেয়ে মরছে। অনেক মুসলিম দেশের বিমানগুলো বোম ফেলতে পারে অথচ খাদ্য ফেলতে পারে না।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি অধিক পরিমাণ খেত, পরে সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং কম খাওয়া শুরু করল। বিষয়টি রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আলোচিত হলে, তিনি বলেন, মুমিন এক আঁতে খায় আর কাফের সাত আঁতে খায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) এর অপর বর্ণনায় রয়েছে, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট। আর তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৫৩৯২)।

আমরা আজ কত খাদ্য অপচয় করছি অথচ আমাদের ভাইয়েরা না খেয়ে মরছে। কাফেররা আজ আমাদের উপর অধিপত্য এজন্যই করছে কারণ তারা ঈমান না এনেও ইসলামের নিয়মের অনুসরণ করছে আর আমরা ঈমান এনেছি মুখে আর রসুলের (সাঃ) সুন্নাহ ভুলে গেছি। হাদীসেও ওদের গুনগলোর কথা বলা হয়েছে –

মুসতাওরিদ আল কুরাশী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর নিকট বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, রোমীয়দের সংখ্যা যখন সবচেয়ে বেশী হবে তখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কথা শুনা মাত্র ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তাকে বললেন, কি বলছ, চিন্তা-ভাবনা করে বলো। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা শুনেছি আমি তাই বর্ণনা করছি। তারপর ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) বললেন, তুমি যদি বলো, তবে সত্যই বলছ। কেননা তাদের মধ্যে চারটি গুণ আছে। প্রথমতঃ ফিত্‌নার সময় তারা সবচেয়ে বেশী ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে থাকে। দ্বিতীয়তঃ মুসীবাতের পর দ্রুত তাদের মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। তৃতীয়তঃ যুদ্ধ থেকে পলায়নের পর সর্বপ্রথম তারা আক্রমণ করতে সক্ষম হয় এবং, চতুর্থতঃ মিস্‌কীন, ইয়াতীম ও দুর্বলের জন্য তারা সবচেয়ে বেশী শুভাকাঙ্ক্ষী। অতঃপর পঞ্চমতঃ সুন্দর গুণটি হলো এই যে, তারা শাসকবর্গের অত্যাচারকে অধিক প্রতিহত করে। (ই.ফা. ৭০১৫, ই.সে. ৭০৭২)।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১৭১

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

এই সেই জাতি যারা ১২ হাজার সৈন্য হয়ে ৮০ টা পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হবে-

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না রোমীয় (সিরিয়ার অন্তর্গত) সেনাবাহিনী আ‘মাক অথবা দাবিক নহরের কাছে অবতীর্ণ হবে। তখন তাদের মুকাবিলায় মাদীনাহ্‌ হতে এ দুনিয়ার সর্বোত্তম মানুষেরর এক দল সৈন্য বের হবে। তারপর উভয় দল সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান হবার পর রোমীয়গণ বলবে, তোমরা ঐ সমস্ত লোকেদের থেকে পৃথক হয়ে যাও, যারা আমাদের লোকেদেরকে বন্দী করেছে। আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করব। তখন মুসলিমগণ বলবে, আল্লাহর শপথ! আমরা আমাদের ভাইদের থেকে কক্ষনো সম্পর্কচ্ছেদ করব না। পরিশেষে তাদের পরস্পর যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধে মুসলিমদের এক তৃতীয়াংশ সৈন্য পলায়নপর হবে। আল্লাহ তা‘আলা কক্ষনো তাদের তাওবাহ্‌ গ্রহণ করবেন না। সৈন্যদের এক তৃতীয়াংশ নিহত হবে এবং তারা হবে আল্লাহর কাছে শহীদানের মাঝে সর্বোত্তম শাহীদ। আর সৈন্যদের অপর তৃতীয়াংশ বিজয়ী হবে। জীবনে আর কক্ষনো তারা ফিত্‌নায় আক্রান্ত হবে না। তারাই কুস্তুনতিনিয়া বিজয় করবে। তারা নিজেদের তালোয়ার যাইতুন বৃক্ষে লটকিয়ে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ ভাগ করতে থাকবে। এমতাবস্থায় তদের মধ্যে শাইতান উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকবে, দাজ্জাল তোমাদের পেছনে তোমাদের পরিবার-পরিজনের মধ্যে চলে এসেছে। এ কথা শুনে মুসলিমরা সেখান থেকে বের হবে। অথচ এ ছিল মিথ্যা সংবাদ। তারা যখন সিরিয়া পৌঁছবে তখন দাজ্জালের আগমন ঘটবে। যখন মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে এবং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান হতে শুরু করা মাত্র সলাতের সময় হবে। অতঃপর ‘ঈসা (‘আঃ) অবতরণ করবেন এবং সলাতে তাদের ইমামাত করবেন। আল্লাহর শত্রু তাকে দেখামাত্রই বিচলিত হয়ে যাবে যেমন লবণ পাণিতে মিশে যায়। যদি ‘ঈসা (‘আঃ) তাকে এমনিই ছেড়ে দেন তবে সেও নিজে নিজেই বিগলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা ‘ঈসা (‘আঃ)-এর হাতে তাকে হত্যা করবেন এবং তার রক্ত ‘ঈসা (‘আঃ)-এর বর্শাতে তিনি তাদেরকে দেখিয়ে দিবেন। (ই.ফা. ৭০১৪, ই.সে. ৭০৭১)।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১৭০

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

তাহলে ওরা ইউক্রেন কেন সাহায্য করলো না!? ব্যাপারটা হল ওরা মানসিক লড়াই করছে। ওরা ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না আপাতত কারণ তাহলে সবাই তখন ভাববে এটা ন্যাটো আর সোভিয়েতের লড়াই। আর এদিকে বিভিন্ন অবরোধ ও মিডিয়ায় প্রচারণা করে রাশিয়ার জনগনকে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বাধ্য করবে। অলরেডি মুদ্রা পতনের পর রাশিয়ার জনগণ আন্দোলন শুরু করছে।

এবার আসি, কাফেরদের নিয়ে চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের ভাবি। ইরাক, সিরিয়ায়, ইয়েমেনর অবস্থা তো দেখেছেন হয়তো এরচেয়ে খারাপ হবে মিশরের অবরোধ, তখনও মুসলিম সমৃদ্ধ দেশগুলো নিজেদের সাহায্য করবে না।

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইরাক তার রৌপ্য মুদ্রা এবং কাফীয দিতে বারণ করবে। সিরিয়াও তার মুদ এবং স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানাবে। অনুরূপভাবে মিসরও তাদের আরদাব এবং স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানাবে। পরিশেষে তোমরা পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন করবে। এ কথার প্রতি আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ)-এর রক্ত-গোশ্‌ত সাক্ষ্য দিচ্ছে। (ই.ফা. ৭০১৩, ই.সে. ৭০৭০)।

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭১৬৯

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আল্লাহ বলেন-

মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।(সুরা হুজুরাত, আয়াত ১০)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *