চারপাশে পরিস্থিতি দেখলে বুঝা যায় – আমাদের মূল্যবোধ, চিন্তা-চেতনা ও পাপ-পূণ্যের সংজ্ঞা যেন বদলে গেছে!! আল্লাহর কিতাব ও ফায়সালার বদলে সবক্ষেত্রে নিজ চিন্তা-ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে চলছি।
একটা নিষ্পাপ ছোট মেয়ে নিকৃষ্ট পুরুষদের কাছে ধর্ষিত হলে তার সমালোচনা করা লোকের অভাব হয় না, তার পাশে কেউ দাড়ায় না বিয়ে তো প্রশ্নই আসে না।
অথচ সে লোকগুলো বহু প্রেম করা সুন্দরী, ধনীর দুলালীকে বিয়ে করতে আপত্তি করে না!! আবার তারা জেনার প্রসারকারী নায়িকা, গায়িকাদের আইডল মানে ও ভক্ত।
আল্লাহ বলেন –
“যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা তা জানো না। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত এবং আল্লাহ দয়ালু, মেহেরবান না হতেন, তবে কত কিছুই হয়ে যেত।”
সুরা নূরঃ ১৯-২০
একজন ৫০ বছরের মুসলিম পুরুষ ১৮-২০ বছরের মেয়েকে বিয়ে করলে ইসলামী নিয়মে কত সমালোচনা ও ছি ছি ছি ধ্বনি। অথচ আজ যদি সবসময় জেনাকারী নায়ক সালমান, শাহরুখরা এদেশের তরুনীদের বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে অধিকাংশ তরুনীই খুশিতে রাজী হবে। তখন এ সকল তারকাদের বয়স তেমন সমালোচনা হবে না।
একজন রিকশাওয়ালা ৫ টাকা বাড়তি চাইলে তাকে শাসানো ও মারার লোকের অভাব হয় না অথচ সুদের ব্যবসায়ী দামী গাড়িতে চড়ে স্যার উপাধি পায়।
অথচ আল্লাহ বলেন-
“আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং যাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।”
সুরা বাকারাহঃ ২৭৬-২৭৯
চুরি, দালালী করে আয়কৃত টাকা মসজিদে দান ও হজ্ব করে জালেমরা হয় সভাপতি। আবার যারা রাষ্ট্রে ইসলাম বিরোধী আইনের পৃষ্ঠপোষক তারাও মসজিদ, মাদ্রাসার দায়িত্ব পায়। মসজিদে সম্মানের সহিত তাদের দানের প্রশংসাবাণী শুনানো হয়, মসজিদে দেরিতে আসলেও সামনের কাতারে ফ্যান, এসির পাশে তাদের স্হান থাকে। অথচ দিনমজুর করা লোকগুলোর দান ও তাদের ঘাম তেমন মূল্যায়ন পায় না।
ঠিক কুফরের পথ ছেড়ে দ্বীনদার হওয়া লোকটাকে সন্দেহের চোখে দেখে অনেকে। সারা রাত বিয়ের অনুষ্ঠানে গান শোনা লোকগুলোকে কেউ ভয় করে না অথচ গভীর রাতে কোন যুবক ইসলামী বই পড়ে তখন আতংকিত হয় অভিভাবক।
কি লাভ বলুন- দ্বীনের শিক্ষা হতে দূরে রেখে আপনার সন্তানরা এখন আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে কিন্তু শাহাদাতের মর্যাদা পায় না। মিথ্যা বলতে আল্লাহ ও তার জাহান্নামকে তেমন ভয় না পেলেও, জালেমের বিরুদ্ধে সত্যি বলতে বান্দাকে ও দুনিয়ার অপমান-শাস্তিকে অধিক ভয় করে!!
আত্মীয়-অভিভাবকরা ভয় দেখাবে – প্রকৃত ইসলাম মানলে বিপদ-আপদ আসবে, কারাবাস, গুম, খুন হতে হবে। অথচ ওরাই ওদের ছেলেদের সামান্য দুনিয়ার সম্পদের আশায় সাগর, পাহাড়ের মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপ, আমেরিকা পাঠায়। আর এসব দেশের কাগজ, ভিসা, গ্রীনকার্ড পেলে সফলতা ভাবে। অথচ জান্নাতের জন্য কষ্ট করতে চায় না!!
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে (আরোহী অবস্থায়) ছিলাম। তিনি বললেন, হে বালক! আমি তোমাকে কিছু কালেমা শিখিয়ে দেই– (তুমি) আল্লাহ তাআলার বিধানের হেফাজত করবে। তাহলে তিনিও তোমার হেফাজত করবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির বিষয়ে সর্বদা খেয়াল রাখবে। তাহলে তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) তোমার সামনে পাবে। যখন সাহায্যের প্রয়োজন হবে। তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। (হে বালক! মনে রাখবে, গোটা দুনিয়ার) সব মানুষ যদি তোমার উপকার করতে একত্রিত হয়, তবে আল্লাহ তকদিরে যা লিখে রেখেছেন, ততটুকু ছাড়া কেউ তার কোনো উপকার করতে পারবে না। আর সব মানুষ যদি একত্রিত হয়ে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে তবে আল্লাহ তোমার তকদিরে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা ব্যতিত অতিরিক্ত কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না। কেননা কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কাগজগুলো শুকিয়ে গেছে। (তিরমিজি)